Advertisement
E-Paper

কংগ্রেস-সখ্য ওড়ালেন ইয়েচুরি

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার সম্ভাবনা খোলা আছে বলে গৌতম দেবের মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক বাধল সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে। আলিমুদ্দিনে সোমবার থেকে শুরু হওয়া দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে অধিকাংশ জেলার নেতারাই তোপ দেগেছেন গৌতমবাবুর উদ্দেশে। সংখ্যায় অল্প হলেও কিছু নেতা অবশ্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকের পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০৩:২১
রাজ্য কমিটির বৈঠকে গৌতম। সোমবার স্বাতী চক্রবর্তীর ছবি।

রাজ্য কমিটির বৈঠকে গৌতম। সোমবার স্বাতী চক্রবর্তীর ছবি।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার সম্ভাবনা খোলা আছে বলে গৌতম দেবের মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক বাধল সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে। আলিমুদ্দিনে সোমবার থেকে শুরু হওয়া দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে অধিকাংশ জেলার নেতারাই তোপ দেগেছেন গৌতমবাবুর উদ্দেশে। সংখ্যায় অল্প হলেও কিছু নেতা অবশ্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকের পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন। তবে এই বিতর্কের মাঝেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক স্বয়ং সীতারাম ইয়েচুরি বিগত পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন।

দু’মাস আগের পার্টি কংগ্রেসে ইয়েচুরি দলের কাণ্ডারী হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে ধারণা তৈরি হয়েছে, এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার দরজা খুলে যাবে। সিপিএমের সংসদীয় দলনেতা হিসাবে ইয়েচুরি যে ভাবে রাজ্যসভায় কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলেছেন, সংসদের বাইরেও শ্রমিক ইউনিয়ন বা অন্যান্য ফ্রন্টে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ আন্দোলন চলছে, সে সবের জেরেও এমন জল্পনা জোরদার হয়েছে। খোদ ইয়েচুরি অবশ্য দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সিপিএমে পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত লাইনের আমূল পরিবর্তন করে কারও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনও সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়। গৌতমবাবুর মন্তব্যে বির্তক তৈরি হওয়ার পরেও একই ভাবে তিনি এ দিন জল্পনায় জল ঢালার চেষ্টা করেছেন। রাজ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে এসে আলিমুদ্দিনে এ দিন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘দল পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই চলে। পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা করা হবে না। আগামী পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত দল এই নীতিতেই চলবে। চাইলেই পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলা সম্ভব নয়!’’

বিতর্কের মুখে পড়ে গৌতমবাবু অবশ্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করেননি। সংবাদমাধ্যমে তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা হওয়াতেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে! তাঁর মন্তব্যের কথা প্রচারিত হওয়ার পরেই গৌতমবাবুর কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতমবাবুও লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। ইয়েচুরি এ দিন বলেছেন, ‘‘গৌতম লিখিত ভাবে দলকে জানিয়েছেন, তাঁর কথা সংবাদমাধ্যম বিকৃত করেছে।’’ রাজ্য কমিটিতে প্রারম্ভিক ভাষণে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য গৌতমবাবুর মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তিনিও বৈঠকে বলেন, গৌতমবাবুর কিছু মন্তব্যে হইচই হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে নিবার্চনী জোট করার কথা বলেননি।

তবে রাজ্য সম্পাদক গুরুত্ব দিতে না চাইলেও রাজ্য কমিটির সদস্যেরা ছেড়ে কথা বলেননি গৌতমবাবুকে! বিশেষত, বর্ধমান জেলার নেতারা! সেই বর্ধমানের পুরভোটে প্রার্থী তুলে নেওয়ার সময় থেকেই দলের মধ্যে বর্ধমানের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার ঠান্ডা লড়াই। গৌতমবাবুর উপস্থিতিতেই বর্ধমানের অচিন্ত্য মল্লিক বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন, রাজ্য সিপিএমের সদর দফতর কি আলিমুদ্দিনে নেই? বারাসত থেকে কি দল চলছে? গৌতমবাবুর ওই মন্তব্য যে হেতু বারাসতে সাংবাদিক সম্মেলনে করা, ইঙ্গিত ছিল সে দিকেই। বর্ধমানেরই অঞ্জু কর বলেন, গৌতমবাবুর মন্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বামেরা একা তৃণমূলকে হারাতে পারবে না বলায় কর্মীদের মনোবলে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন পুরুলিয়া, হাওড়া, হুগলি-সহ একাধিক জেলার নেতারা।

গৌতমবাবুর পক্ষেও অবশ্য মুখ খুলেছেন কেউ কেউ। যেমন দার্জিলিঙের জীবেশ সরকার সওয়াল করেন, দরজা একেবারে বন্ধ করে দিয়ে তো কোনও নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক হতে পারে না! শিলিগুড়ির পুরভোটের দিন অশোক ভট্টাচার্যেরা যে হেতু কংগ্রেস-বাম-বিজেপি সব দলের কর্মীদের একজোট করে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, তাই জীবেশবাবুদের সওয়াল করার পরিপ্রেক্ষিতও ছিল। মুর্শিদাবাদের মইনুল হাসান যুক্তি দেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনী ফলাফলের গুরুত্ব অনেক। সেখানে যা করলে দলের সুবিধা হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হয়। দলের রণকৌশল ঠিক করার সময় নমনীয়তা রাখতে হয়। শমীক লাহি়ড়ী, মৃণাল চক্রবর্তীরাও দাঁড়িয়েছেন গৌতমবাবুর পাশে। আবার মইনুলদের পাল্টা হিসাবে বধর্মানের আভাস রায়চৌধুরী বলেছেন, শুধু নমনীয়তা দিয়ে দল চালানো যায় না! দৃ়ঢ়তাও রাখতে হয়।

সিপিএমের মধ্যে যখন তুলকালাম বিতর্ক চলছে, সেই সময়েই কলকাতায় এসে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সিপিএম একলা চলতে অক্ষম। ওদের সংগঠন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। তাই ওরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চাইছে। এ রাজ্যে তৃণমূলকে মোকাবিলা করতে পারে একমাত্র বিজেপি।’’

sitaram yechuri cong left tie up cong left friendship yechuri vs gautam deb
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy