Advertisement
E-Paper

হাওড়ায় পাঠক ফিরছে গ্রন্থাগারে

হাওড়ার বাগনানের পানিত্রাস শরৎস্মৃতি গ্রন্থাগারে দুপুরবেলায় দেখা গেল বছর আঠারোর তরুণী দীপালি পাত্রকে। আশাপূর্ণাদেবীর উপন্যাস খুঁজছিলেন তিনি। মেচেদায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন দীপালি। পানিত্রাসে এসেছিলেন গৃহকর্তার ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে। ফের তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৪৬
রি়ডিং রুমেও বাড়ছে ভিড়। উলুবেড়িয়ার একটি গ্রন্থাগারে ছবি তুলেছেন সুব্রত জানা।

রি়ডিং রুমেও বাড়ছে ভিড়। উলুবেড়িয়ার একটি গ্রন্থাগারে ছবি তুলেছেন সুব্রত জানা।

হাওড়ার বাগনানের পানিত্রাস শরৎস্মৃতি গ্রন্থাগারে দুপুরবেলায় দেখা গেল বছর আঠারোর তরুণী দীপালি পাত্রকে। আশাপূর্ণাদেবীর উপন্যাস খুঁজছিলেন তিনি। মেচেদায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন দীপালি। পানিত্রাসে এসেছিলেন গৃহকর্তার ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে। ফের তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মাঝের সময়টা কাটান লাইব্রেরিতে। বললেন, ‘‘এখানে বসে বই পড়ি, বাড়িতেও নিয়ে যাই। আবার নিয়ম করে বই ফেরত দিতে আসি।’’ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা দীপালি গল্প, উপন্যাস পড়তে ভালবাসেন। ওই লাইব্রেরিতেই দেখা গেল বিরামপুর গ্রামের যুবক সোহম শীলকে। ঘুরে ঘুরে গাড়িতে করে আইসক্রিম বিক্রি করেন। তিনিও নিয়মিত পাঠক।

টিভি সিরিয়াল, সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে বই-ঠাসা লাইব্রেরিতে ভাটার টান, এমনই আশঙ্কা হয়। কিন্তু হাওড়ার বেশ কিছু লাইব্রেরিতে কথা বলে দেখা গেল, স্রোত এখন বইছে উল্টো দিকে। জেলা গ্রন্থাগারিক তূষারকান্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রন্থাগারগুলিকে প্রতি মাসে পাঠক সংখ্যার রিপোর্ট পাঠাতে হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।’’

পানিত্রাস শরৎ স্মৃতি গ্রন্থাগারের হিসেবই ধরা চলে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এখানে পাঠক এসেছিলেন ৩৯৭ জন। এ বছর সেপ্টেম্বরে এসেছেন ৭০১ জন। গত বছর অক্টোবর মাসে পুজোর মরসুমে পাঠক সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। এ বছর অক্টোবরে কিন্তু যে ক’টা দিন গ্রন্থাগার খোলা ছিল, তার মধ্যে ৫০০জন পাঠক এসেছেন।

পানিত্রাস গ্রন্থাগারের কর্মীরা জানালেন, এলাকার অনেক গৃহবধূ, তরুণ-তরুণী আসেন। বেশির ভাগই পড়তে চান গল্প-উপন্যাস। পাঠকদের তালিকায় রয়েছেন বনফুল, মহাশ্বেতা দেবী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়ের মতো লেখকেরা। শরৎচন্দ্র তো আছেনই। তরুণদের পছন্দ গোয়েন্দা গল্প। এখন ব্যোমকেশ বক্সির বাজার ভাল, তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে নীহাররঞ্জন গুপ্তের কিরীটি রায়। চাহিদা আছে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের।

নানা গ্রামীণ গ্রন্থাগারের পাশাপাশি জেলা গ্রন্থাগারেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, যে সব উপন্যাস অবলম্বনে টিভি সিরিয়াল তৈরি হয়, সেগুলি আগেভাগে এই গ্রন্থাগারে এসে পড়ে নেন অনেকে। ‘কেয়াপাতার নৌকা’ বা ‘সুবর্ণলতা’-র চাহিদা খুব।

বাগনানের বাগাবেড়িয়া প্রগতিশীল পাঠাগারে নিয়মিত সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে আসেন স্বদেশ ঘড়ুই। বললেন, ‘‘টিভিতে সব সময়ে কার্টুন ছবি দেখা উচিত নয়। তাই ছেলেকে গ্রন্থাগারে আনি। ও গোয়েন্দা গল্পের ভক্ত।’’

পাঠকদের কাছে বইয়ের চাহিদা বাড়তে দেখে উৎসাহী হয়েছেন গ্রন্থগারিকরা। হাওড়া জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বলছেন, পাঠকদের আগ্রহ বাড়তে দেখে গত জুন মাসে তাঁরা তৈরি করেছেন ‘রিডার্স ক্লাব।’ বর্তমানে সদস্য জনা তিরিশেক। সকলেই সাহিত্যানুরাগী, পাঠ্যবইয়ের প্রত্যাশী নন। নিয়ম করে রিডার্স ক্লাবের বৈঠক হয়। যে সব গল্প, উপন্যাস তাঁরা পড়েছেন, সেগুলি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।

শ্যামপুরের একটি গ্রন্থাগারে কর্মীরা লাইব্রেরিতে স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার মতো নানা অনুষ্ঠান করছেন। বাগনানের বাগাবেড়িয়া প্রগতিশীল পাঠাগারে ভাষা দিবসের মতো বিশেষ দিনগুলিতে সব বয়সী পাঠকদের নিয়ে পাঠ, আবৃত্তির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

শ্যামপুরের গ্রন্থাগারের এক কর্মীর কথায়, ‘‘গ্রন্থাগার মানে হল বই আর পাঠকের সংযোগস্থল। সেই কাজটি করছি আমরা।’’ তাগিদ রয়েছে গ্রন্থাগারিকদের তরফেও। জেলার ১৩৬টি গ্রন্থাগারের ১০টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ১৫টি খোলা হচ্ছে সপ্তাহে তিন দিন। পাঠক না থাকলে গ্রন্থাগারও থাকবে না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গ্রন্থাগারের কর্মীদের কাছেও। ‘‘বলতে পারেন, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছি আমরা। তারই ফল হল পাঠক বৃদ্ধি,’’ বলেন শ্যামপুর গ্রন্থাগারের ওই কর্মী।

ফলে একজন বা দু’জন (গ্রন্থাগার চালাতে গ্রন্থাগারিক-সহ তিন থেকে পাঁচজন কর্মীর প্রয়োজন) কর্মী থাকলেও তাঁরা পাঠক টানার জন্য নানা কর্মসূচি নিচ্ছেন। উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাগনানের একটি গ্রন্থাগারে রয়েছেন একজনই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তিনি জানান, সময় মেনে গ্রন্থাগার খোলা, সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখেন তিনি, যাতে পাঠকেরা এসে সন্তুষ্ট হন। এ ভাবেই পাঠককে বইয়ের কাছে টেনে আনছেন গ্রন্থাগারের কর্মীরা।

state news library young generation interest on library
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy