Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বিতর্ক বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে

শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে যুব নেতা

শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ চলছেই। সম্প্রতি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্‌জিকিউটিভ কাউন্সিলে (ইসি) ঠাঁই পেয়েছেন যুব তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক লোকেশ কর।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৩
Share: Save:

শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ চলছেই। সম্প্রতি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্‌জিকিউটিভ কাউন্সিলে (ইসি) ঠাঁই পেয়েছেন যুব তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক লোকেশ কর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি-তে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশন’-এর চেয়ারম্যান কিংবা তাঁর প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকেন। এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজে। শিক্ষামন্ত্রীর মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি-তে জায়গা পেয়েছেন লোকেশ।

পার্থবাবু দাবি করেন, ‘‘এই সংক্রান্ত ফাইল এখনও সই করিনি।’’ যদিও বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসি-র বৈঠকে যোগ দিয়েছেন লোকেশ। যুব তৃণমূলের এই নেতা বলেন, ‘‘ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। ইসি-র বৈঠকে যোগও দিয়েছি।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এগ্‌জিকিউটিভ কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল মে মাসে। লোকেশ যে পদটি পেয়েছেন, তা ওই সময় থেকে শূন্য ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক জয়ন্তকিশোর নন্দী জানান, সম্প্রতি মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে লোকেশের নাম কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশন থেকে পাঠানো হয়। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীও মানছেন, “ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশনের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে উনি (লোকেশ) ইসি-র সদস্য হয়েছেন।”

সাড়ে তিন দশকের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শিক্ষাঙ্গনকে তিনি রাজনীতি-মুক্ত করবেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুও বারবার সেই সুরেই কথা বলেছেন। তারপরেও অবশ্য স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা কমিটিতে শাসক দলের লোকজন ঠাঁই পাচ্ছে। স্কুলগুলোর পরিচালন সমিতির নতুন কমিটিতে সভাপতি এবং শিক্ষানুরাগীদের যে নাম রাজ্য সরকার পাঠায়, তাতেও তৃণমূলের লোকজনের সংখ্যা বেশি বলে অভিযোগ। তবে ইসি-তে লোকেশের ঠাঁই পাওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষা দফতরের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক লোকেশ উচ্চশিক্ষিত। সে কথা মাথায় রেখেই তাঁকে ইসি-র সদস্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্ব পায়নি।

তবে এ নিয়ে সরব হয়েছে বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ভুটা)। বাম প্রভাবিত এই সংগঠনের সম্পাদক দীপককুমার মিদ্যা বলেন, “রাজনীতির লোকেদের ইসি-র মতো কমিটিতে রাখা হলে শিক্ষায় রাজনীতির অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থেকে যায়। অবশ্য এখন এ সব হামেশাই হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও রাজনীতির লোকেরা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন।” দীপকবাবু আরও জানান, এখন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়েই চলছে। অথচ ইসি-তে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার কথা। স্নাতকোত্তর (পিজি) থেকে ৭ জন, স্নাতক স্তর (ইউজি) থেকে ৫ জন নির্বাচিত সদস্য থাকার কথা। তবে তৃণমূল আমলে নির্বাচনই হয়নি। এ নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা। সংগঠনের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সভাপতি রাজকুমার কোঠারির মন্তব্য, ‘‘ইসি নিয়ে আমি কিছু বলব না।’’

গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা লোকেশ জেলার ছাত্র-যুব তৃণমূলে প্রথম সারির মুখ। ২০০৫-এ তৃণমূল যখন বিরোধী আসনে তখন দলের ছাত্র সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি ছিলেন লোকেশ। কঠিন সময়ে দল করার পুরস্কার হিসেবেই তাঁকে ইসি-র সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। এতে বিতর্কের কিছু দেখছেন না যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vidyasagar University Education Minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE