অনুব্রত মণ্ডল এবং অনুপম হাজরা
বিভিন্ন সময়ে তাঁর পাশে থেকেছেন দলনেত্রী। তিনি যে দলনেত্রীর ‘বিশেষ আস্থাভাজন’, তা-ও আজ কোনও লুকোনো তথ্য নয়। খুনের অভিযোগ ওঠার পরেও সেই নেতাকে ‘ভাল সংগঠক’ আখ্যা দিয়ে শেষ শক্তি পর্যন্ত থাকার কথাও প্রকাশ্যে বলেছেন দলনেত্রী।
লোকসভার নির্বাচনে ‘বিশেষ আস্থাভাজন’ সেই নেতার পছন্দের লোককে কিন্তু বোলপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করলেন না তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূম জেলা তৃণমূলের বিতর্কিত সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বোলপুরের উপ-পুরপ্রধান নরেশ বাউরিকে টিকিট দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, বুধবার দুপুরে তৃণমূল ভবন থেকে মমতা যে তালিকা ঘোষণা করলেন, সেখানে ছিল না নরেশবাবুর নাম। বোলপুরে প্রার্থী করা হয়েছে শান্তিনিকেতনেরই ছেলে, বিশ্বভারতীর সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক অনুপম হাজরাকে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে পরেই বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে অনুপমবাবুকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে দু’টি নাম চেয়েছিলেন। অনুব্রতবাবু শতাব্দী রায় (বীরভূম কেন্দ্রে) ও অনুপম হাজরার নাম প্রস্তাব করেছেন।”
সভাধিপতি ওই দাবি করলেও তৃণমূল সূত্রেই খবর, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বোলপুরে নিজের অনুগামী নরেশ বাউরিকে প্রার্থী করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছেন অনুব্রত। ক’দিন ধরেই অনুব্রত ও চন্দ্রনাথ সিংহ নরেশবাবুর নাম সুপারিশ করছিলেন দলের রাজ্য নেতাদের কাছে। সোমবার রাজ্যের এক মন্ত্রীর আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ওই দু’জন নরেশবাবুকে প্রার্থী করার অনুরোধ জানান শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেও তৃণমূল ভবনে গিয়েও নরেশবাবুর হয়ে সওয়াল করেন অনুব্রত-চন্দ্রনাথ। তাতেও অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। মমতা বোলপুর কেন্দ্রে অনুপমবাবুকেই টিকিট দেওয়া মনস্থির করে ফেলেছিলেন। একই ভাবে বীরভূমে ফের প্রার্থী করেছেন শতাব্দীকে, যিনি জেলার রাজনীতিতে বরাবরই অনুব্রত-বিরোধী হিসাবে পরিচিত।
শাসকদলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দক্ষ সংগঠক হিসাবে অনুব্রত মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের হলেও সব ক্ষেত্রেই তিনি যে তাঁকে সমর্থন করেন, এমন নয়। সে জন্যই বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দলের জেলা সভাপতির জন্য ‘শেষ শক্তি পর্যন্ত থাকার’ কথা বললেও বীরভূমে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনুব্রতর সুপারিশ মানা হয়নি।”
শহরে থাকলেও বোলপুরের প্রার্থীকে নিয়ে সভাধিপতির সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন না নরেশ বাউরি। ফোনে বোলপুরের উপ-পুরপ্রধান শুধু বলেন, “আশা করেছিলাম, দলের টিকিট পাব।” এর পর থেকেই তাঁর মোবাইল ছিল বন্ধ। বাড়িতেও এ দিন তাঁর দেখা মেলেনি।
বোলপুরের বর্তমান প্রার্থী এক বিশিষ্ট চিত্রকরের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। বছর বত্রিশের অনুপমের কথায়, “ভাবতেই পারিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে এ রকম একটা সুযোগ দেবেন। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখেছি, ঠিক শুনছি তো!” এ দিনই কলকাতা যাওয়ার পথে প্রান্তিক স্টেশনে শতাব্দী দাবি করেন, তিনি যে ফের প্রার্থী হচ্ছেন, তা তিনি আগে থেকেই জানতেন। একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “তবে, ফের বীরভূম কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়ায় কারও কারও খারাপ লাগবে। তাঁদের জন্য ‘আই অ্যাম সরি’!” নাম না করলেও কাদের জন্য তিনি দুঃখিত, তা অবশ্য স্পষ্ট।
শতাব্দীর প্রার্থিপদ নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্য, “বীরভূমে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রাখতেই শতাব্দীদেবীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন দলনেত্রী।” আর অনুপমবাবুকে প্রার্থী করা নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, “যুব-প্রজন্মকে আরও বেশি সুযোগ দিতে এবং বোলপুরের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে দিদি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” আপনি তো নরেশ বাউরিকে চেয়েছিলেন? এ বার জেলা সভাপতির সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “দিদির সিদ্ধান্ত, শেষ সিদ্ধান্ত!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy