প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপ, কাউন্সিল এবং উপাচার্য বাছাইয়ের কমিটি থেকে এখনই তাঁকে ইস্তফা দিতে বারণ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও মেন্টর গ্রুপের পরামর্শদাতা অমর্ত্য সেন। বুধবার আমেরিকা থেকে কলকাতায় ফিরে এ কথা জানালেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী, ইতিহাসের অধ্যাপক সুগত বসু।
একই সঙ্গে সুগতবাবু এ দিন জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তো চেয়ারম্যান হিসেবে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই-এর গভর্নিং কাউন্সিলে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। তার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে কী কী সুবিধা বা অসুবিধা হয়েছে, তা জানতে তিনি সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রেসিডেন্সির সঙ্গে যুক্ত থাকা বা না-থাকার ব্যাপারে তিনি সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান সুগতবাবু। এমনকী তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিরোধী দলের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সুগতবাবু আমেরিকা থেকে বাড়ি ফিরেছেন এ দিন সকালে। আর প্রচার শুরু করে দিয়েছেন বিকেল থেকেই। প্রচারে বেরোনোর আগে বাড়িতে বসে তিনি জানান, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্যবাবু এখনই তাঁকে প্রেসিডেন্সি ছাড়তে নিষেধ করেছেন। সুগতবাবু বলেন, “অমর্ত্য সেন পরামর্শ দিয়েছেন, এই মুহূর্তে যেন ইস্তফার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না-নিই। সব দিক বিবেচনা করে, সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন তিনি।”
সেই সঙ্গেই সুগতবাবু জানান, বাংলার প্রথম সারির কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পদ্ধতি পর্যালোচনা করে দেখা হবে। এই ব্যাপারে আইএসআইয়ের উদাহরণ টেনেছেন তিনি। সুগতবাবুর কথায়, “প্রেসিডেন্সির অনতিদূরে অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান-পদে ছিলেন জঙ্গিপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ (বর্তমানে রাষ্ট্রপতি) প্রণব মুখোপাধ্যায়। এতে তাঁদের কী লাভ বা কী ক্ষতি হয়েছে, কী কী সুবিধা বা অসুবিধা হয়েছে, সেই ব্যাপারে আইএসআইয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।”
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সংস্থায় রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও মন্ত্রীরা থাকেন। যেমন, দেশের প্রধানমন্ত্রী পদাধিকারবলেই বিশ্বভারতীর আচার্য হন। একই ভাবে পদাধিকারবলে সব আইআইটি-র পরিচালন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি শিক্ষামন্ত্রী। আবার আইএসআইয়ের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কে হবেন, কাউন্সিলই তা ঠিক করে বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্তা।
সুগতবাবু তৃণমূলের টিকিটে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তিনি প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপ, কাউন্সিল এবং স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য গড়া সার্চ বা সন্ধান কমিটি থেকে ইস্তফা দেবেন কি না। এক কথায় প্রেসিডেন্সি ছাড়বেন কি না। এই সব প্রশ্নের মূলে আছে শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করার ব্যাপারে রাজ্যের নতুন সরকারের আশ্বাস। ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রকে রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত করা হবে। লোকসভা ভোটে তাঁরই দলের প্রার্থী প্রেসিডেন্সির সঙ্গে যুক্ত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রবীণ শিক্ষক থেকে প্রেসিডেন্সির পড়ুয়া পর্যন্ত অনেকেরই।
তিনি কী করবেন, সেই ব্যাপারে সুগতবাবু এ দিন সরাসরি কিছু বলেননি। তবে রাজনীতিকে দূরে রেখেও এক জন রাজনীতিক কী ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে সাহায্য করতে পারেন, তা বোঝাতে মমতার উদাহরণই দেন তিনি। বলেন, “নাক না-গলিয়ে কী ভাবে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে সাহায্য করা যায়, মুখ্যমন্ত্রী সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। উনি আমাকে মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করেছেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওঁর সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy