Advertisement
E-Paper

অযোধ্যা পাহাড়ের গায়ে চা-কফি চাষে অনুমতি জেলা পরিষদের

খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষকদের স্বপ্ন এ বার বাস্তবের মাটিতে রূপ পেতে চলেছে। চলতি বছরেই পরীক্ষামূলক ভাবে চা চাষ শুরু হতে চলেছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। প্রাথমিকভাবে ১১ একর জমিতে চা চাষের জন্য ছাড়পত্রও দিয়েছে প্রশাসন। সফলতা পেলে অযোধ্যা পাহাড় জুড়ে থাকা সমস্ত পতিত জমিতেই চায়ের পাশাপাশি কফিও চাষ করা হবে। প্রযুক্তি দেবে খড়্গপুর আইআইটি। অর্থ দেবে জেলা পরিষদ।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩২
চলতি মরসুমেই পাহাড়ের ঢালে শুরু হচ্ছে চা চাষ।—ফাইল চিত্র।

চলতি মরসুমেই পাহাড়ের ঢালে শুরু হচ্ছে চা চাষ।—ফাইল চিত্র।

খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষকদের স্বপ্ন এ বার বাস্তবের মাটিতে রূপ পেতে চলেছে। চলতি বছরেই পরীক্ষামূলক ভাবে চা চাষ শুরু হতে চলেছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। প্রাথমিকভাবে ১১ একর জমিতে চা চাষের জন্য ছাড়পত্রও দিয়েছে প্রশাসন। সফলতা পেলে অযোধ্যা পাহাড় জুড়ে থাকা সমস্ত পতিত জমিতেই চায়ের পাশাপাশি কফিও চাষ করা হবে। প্রযুক্তি দেবে খড়্গপুর আইআইটি। অর্থ দেবে জেলা পরিষদ। চাষ করবে সিএডিসি। সিএডিসির অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্পের আধিকারিক সুশান্ত খাটুয়া বলেন, “খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষনায় সমতলেও চা চাষে সাফল্য মিলেছে। তাঁদেরই প্রযুক্তি নিয়ে, তাঁদের সাহায্যেই আমরা এখানেও চা চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছি।” পুরুলিয়ার জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর বক্তব্য, “এ বছর চায়ের চাষ করা হবে। কফি পরের বছর করা হবে।”

সিএডিসির কৃষি আধিকারিক কাঞ্চনকুমার ভৌমিকের কথায়, “চলতি মরসুম থেকেই আমরা চাষ শুরু করে দেব।” যাঁরা এই প্রযুক্তি দেবেন, খড়্গপুর আইআইটি-র স্টেপ (সায়েন্স এণ্ড টেকনোলজি আন্টারপ্রেনিওরপার্ক) অনুমোদিত সেই ‘ইকো ইয়েস টেকনোলজিস’ এর কর্ণধার সৌমেন পালিত বলেন, “আমরা আইআইটিতে গবেষণা করে শুধু চা চাষে সাফল্য পেয়েছি তাই নয়, আমাদের সংস্থার মাধ্যমে গ্রিন টি তৈরি করে বিপণনও করছি। যা দেখে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনও উত্‌সাহিত হয়ে চা চাষ করতে চাইছেন। যদি উপযুক্ত পদ্ধতি মেনে চাষ করা যায়, তাহলে পুরুলিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যাবে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অযোধ্যা পাহাড়ে কয়েক হাজার একর পতিত জমি রয়েছে। যেখানে অতি সহজেই চা চাষ সম্ভব। তাছাড়াও পাহাড় হওয়ায় সেখানে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা মিলবে। পাহাড় তো দূরের কথা, একেবারে সমতলেই চা ও কফি চাষ করে সাফল্য পেয়েছে খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি বিভাগ। সাফল্য মেলার পর ওই বিভাগের শিক্ষক বিজয়চন্দ্র ঘোষ চা চাষকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁরই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পে গবেষণা চালিয়েছিলেন সৌমেন পালিতও। কিন্তু শুধু চাষ করে মানুষের কাছে চা চাষকে জনপ্রিয় করা কঠিন বুঝে সৌমেনবাবু ‘ইকো ইয়েস টেকনোলজিস’ তৈরি করেন। এই সংস্থার মাধ্যমে চা বিপণনও শুরু করেন। সমতলে তৈরি চা থেকে বানানো তাঁর ‘টেক গ্রিন টি’-র বাজারে কদর রয়েছে। কিন্তু খড়্গপুর আইআইটি চত্বরে যে সামান্য জমি রয়েছে সেখান থেকে বাজারের চাহিদা পূরণ করা কঠিন। এই সমস্ত বিষয় নিয়েই সম্প্রতি পুরুলিয়াতে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। যেখানে পুরুলিয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সিএডিসির চেয়ারম্যান সুভাশিস বটব্যালও। সৌমেনবাবুর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় সকলেই উত্‌সাহ প্রকাশ করেন। তারপরই জেলা পরিষদ চা চাষের অনুমোদন দেয়। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে অযোধ্যা পাহাড় ঘেঁষা কুমারীকানন এলাকায় ১০ একর ও পাহাড়ের উপরে ১ একর জমিতে চাষ হবে। বর্ষার মরসুমে চাষ শুরু করার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলে সিএডিসি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বর্ষার মরসুমে চাষ হলে দেড় দু’বছরের মধ্যেই পাতা তোলা শুরু করা যাবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি শুধু জেলা প্রশাসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও এই ঘটনায় ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই অযোধ্যা পাহাড়ে পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরও যাওয়ার কথা। কারণ, অযোধ্যা পাহাড়ে ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার চেষ্টা অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। চা চাষ শুরু হলে তা ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে আরও আকর্ষনীয় হবে বলে সকলের অনুমান।একদিকে যেমন চা থেকে সরকারের আয় বাড়বে তেমনি পর্যটন থেকেও বাড়বে আয়। আর এই প্রকল্প সফল হলে এলাকার মানুষ কাজও পাবেন। তারই সঙ্গে আগ্রহী কৃষকেরাও পতিত জমিতে চা চাষে উত্‌সাহী হবেন।

(সহ-প্রতিবেদন: প্রশান্ত পাল)

recommendation of tea and coffee plantation ayodhya hill suman ghosh kharagpur IIT
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy