সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে পিটিয়ে খুন করার মামলা থেকে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে বেকসুর খালাস করতেই অস্ত্র আইনে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশের নাটক হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুললেন নিহতদের মা জরিনা বিবির আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টে সোমবার জরিনা বিবির হয়ে ওই আইনজীবী সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা করবেন। সেই মামলায় এই প্রশ্নটিও তোলা হবে বলে শনিবার সুব্রতবাবু জানিয়েছেন।
সুব্রতবাবু বলেন, “তিন ভাইয়ের ময়না-তদন্ত রিপোর্টে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, তাঁদের কারও দেহেই গুলির চিহ্ন ছিল না। কাজেই খুনের ঘটনার সঙ্গে বন্দুকের কোনও সম্পর্ক নেই। জেলাশাসক অস্ত্র আইনে অতিরিক্ত চার্জশিটের অনুমতি দিলেও আদালত যে তা খারিজ করে দেবে, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন তা জানে।” তাই জেনে বুঝেই তাঁরা অস্ত্র আইনে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সুব্রতবাবুর অভিযোগ।
শনিবারই আবার লাভপুরের খুনের মামলায় মনিরুলকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছে বিজেপি। এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বীরভূমের নলহাটি থানায় একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-র নলহাটি ১ ব্লক সভাপতি অনিল সিংহের ক্ষোভ, “মনিরুল প্রকাশ্যে লাভপুরে তিন ভাইকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন। তার পরেও পুলিশ কী ভাবে চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ দেয়?” বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অবশ্য বলেন, “ওই মামলায় মনিরুল এখন জামিনে মুক্ত। চার্জশিটেও তাঁর নাম নেই। তা হলে তাঁকে কি গ্রেফতার করা যায়?”
এ দিকে, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের বড় একটি অংশ বলছেন, অস্ত্র আইনে মনিরুলের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করতে চাইলে, তারা এ ব্যাপারে আলাদা করে এফআইআর দায়ের করতে পারত। তার ভিত্তিতে ওই মামলায় অস্ত্র আইনে চার্জশিট দিতে পারত পুলিশ। কিন্তু তারা তা করেনি। তাই এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকছে বলে আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন।
বীরভূম জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পিটিয়ে মেরে খুনের ঘটনায় অস্ত্র আইন ধোঁপে টিকবে কি না, অথবা এই চার্জশিটে মনিরুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব কি না, সেই বিষয়টি খোদ জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। এ ব্যাপারে আইনগত কোনও জটিলতা রয়েছে কি না কিংবা এ নিয়ে পরবর্তীকালে কোনও সমস্যা হতে পারে কি না, সেই ব্যাপারে শতকরা একশো ভাগ নিশ্চিত হতে চান জেলাশাসক। পূর্বতন জেলাশাসক অস্ত্র আইনে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশের অনুমতি দিলেও কেন, সেই সময় পুলিশ তা আদালতে জমা দেয়নি, কী জন্য তারা অপেক্ষা করছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আগে থেকেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে লাভপুর কাণ্ড নিয়ে একটি মামলা রয়েছে। সোমবার নতুন করে কোনও মামলা হাইকোর্টে দায়ের হলে জেলা প্রশাসনের উপরে চাপ বাড়বে। জেলাশাসক তাই অতি সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে চাইছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy