দলের রণকৌশল নিয়ে চুলচেরা বিতর্ক পরে। আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর দাবিই এ বার প্রধান সুর হয়ে উঠে আসছে সিপিএমের সম্মেলন-পর্বে।
এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের তিন ও দক্ষিণবঙ্গের দু’টি জেলায় সম্মেলন শেষ হয়েছে সিপিএমের। প্রতিটি জেলাতেই স্থানীয় স্তরের প্রতিনিধিরা সরব হয়েছেন আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নে। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূলের জমানায় আক্রমণ প্রথমে শুরু হয়েছিল বাম কর্মী-সমর্থকদের উপরে। আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের উপরেও। এবং অভিজ্ঞতা বলছে, আক্রান্ত এলাকায় ময়দানে নেমে সিপিএম নেতৃত্ব যদি আক্রমণের প্রতিবাদে সামিল হন, তা হলে মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সর্বত্র দলীয় নেতৃত্ব কেন এই বিষয়ে এখনও যথাযথ ভাবে উদ্যোগী হচ্ছেন না, সেই প্রশ্নও উঠেছে কিছু জেলা সম্মেলনে।
নদিয়া এবং বীরভূম এই দুই জেলাতেই সাম্প্রতিক কালে একাধিক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। দুই জেলাতেই একাধিক বার আক্রান্ত এলাকায় ছুটে যেতে হয়েছে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে। কিন্তু ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে গিয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু দিন আগে পর্যন্ত নেতৃত্বের নানা স্তরেই অনীহা কাজ করছিল বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কিছু প্রতিনিধি। তাঁদের দাবি, আক্রমণ বা অত্যাচারের ঘটনা হলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দলের নেতৃত্ব বা জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের উপরেও চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। তাতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুবিধা হয়। বিজেপি-র মতো দলের কাছে রাজনৈতিক জমি হারানোর আশঙ্কাও কমে। তবে অতি সম্প্রতি দলের নেতারা যে ওই অনীহা খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন, সেই কথাও আলোচনায় এসেছে জেলা সম্মেলনে।
বস্তুত, বীরভূম জেলা নেতৃত্বের মনোভাবে ইদানীং কালে অসন্তুষ্ট ছিল আলিমুদ্দিনও। হামলার ঘটনা ঘটলে যখনই রাজ্য থেকে বাম প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা হয়েছে, জেলা নেতৃত্ব বলেছেন এখনই এলে সমস্যা হতে পারে! বেশ কয়েক বার বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু পরিষদীয় নেতৃত্বের তরফে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত রবিবারই অবশ্য বীরভূমের জেলা সম্পাদকের পদ থেকে সরতে হয়েছে দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়কে। নদিয়া জেলা সম্মেলনেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে কেন দেরি হচ্ছে? দার্জিলিং এবং মালদহের জেলা সম্মেলনে কথা হয়েছে, দূরত্বের কারণেই উত্তরবঙ্গের সর্বত্র কলকাতা থেকে দলীয় নেতৃত্বের পক্ষে তুরন্ত গিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের নেতাদেরই সেই মতো নির্দেশ দেওয়া হোক, দাবি উঠেছে সম্মেলনে।
জেলার নেতা-কর্মীদের মনোভাব থেকে আলিমুদ্দিনও এখন বুঝতে পারছে, তত্ত্ব বা কৌশল নিয়ে আলোচনার চেয়েও আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা দেওয়া এখন অনেক বেশি জরুরি। সাংসদ মহম্মদ সেলিম, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের তাই সেই ভাবে কাজে লাগানোও শুরু হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “ঘটনাস্থলে গিয়ে দাঁড়ালে মানুষ ভরসা পান, পুলিশ-প্রশাসনের উপরেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ তৈরি হয় অভিজ্ঞতা থেকেই এগুলো এখন বুঝতে পারা যাচ্ছে। এই কাজটাই করে যেতে হবে।” দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের আরও বক্তব্য, “শুধু প্রতিনিধিদল ঘুরে এলেই চলবে না। প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না দেখলে জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রয়োজনে অবস্থানে বসে যেতে হবে!” বিরোধী হিসাবে অতি-সক্রিয় থাকার অপরিহার্যতা এখন ঠেকে শিখছে জেলা থেকে রাজ্য সর্বস্তরের সিপিএম!
পদ থেকে সরলেন দিলীপ, সুকুররা
দুই জেলায় সিপিএমের দুই কমিটির সম্পাদক পদ থেকে সরে গেলেন দুই পুরনো মুখ। দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের জায়গায় বীরভূমের নতুন জেলা সম্পাদক হলেন প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। পশ্চিম মেদিনীপুরে গড়বেতা জোনাল কমিটির সম্পাদক পদ থেকে সরে গেলেন বিতর্কিত নেতা সুকুর আলি। নতুন সম্পাদক হয়েছেন দিবাকর ভুঁইয়া। সুকুর, তপন ঘোষ, দু’জনেই অবশ্য জোনাল কমিটিতে আছেন। বীরভূমে নতুন জেলা সম্পাদক পেয়ে অনেকটাই উজ্জীবিত কোণঠাসা হয়ে-থাকা দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে দুবরাজপুরে ২১তম জেলা সম্মেলনে নবগঠিত জেলা কমিটিতে ৮ জন নতুন মুখ ঠাঁই পেয়েছেন। দলের অন্দরে একাংশের বক্তব্য, জেলায় বিজেপি-র উত্থান ঠেকাতে আরও বেশি নতুন ও তরুণ মুখ দরকার ছিল। নতুন জেলা সম্পাদক রামচন্দ্রবাবু অবশ্য বলেছেন, “১৬টি জোনাল কমিটির ৭টিতেই নতুন মুখ বেছে নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে ঠিকই। তবে আমরা সম্মিলিত ভাবেই খামতি দূর করার চেষ্টা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy