ভাঙড়ের বেঁওতায় তৃণমূল নেতা রমেশ ঘোষাল খুনের তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী আশাদেবী। মামলার আবেদনে তাঁর মূল দাবি, রমেশ-হত্যায় আরাবুল ইসলাম এবং অন্য ১৬ জন মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে।
আশাদেবীর আইনজীবী দ্বৈপায়ন বিশ্বাস জানান, তাঁর মক্কেলের অন্য দু’টি মূল দাবি: • আশাদেবীর বয়ানকেই এফআইআর) হিসেবে গ্রহণ করতে হবে তদন্তকারীদের।
• ২৫ অক্টোবরের হামলার পর থেকেই রমেশবাবুর পরিবারের লোকজন ঘরছাড়া। তাঁদের ঘরে ফিরিয়ে এনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
রমেশবাবুর ভাইপো শান্তনু ঘোষালের অভিযোগ, আরাবুল এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করতে তিনি পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের সামনেই আরাবুলের অনুগামীরা সেই অভিযোগপত্র ছিঁড়ে ফেলে দেয়। রমেশবাবুর স্ত্রীর অভিযোগ, পুলিশ উল্টে তাঁর স্বামীর খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে শান্তনুকেই গ্রেফতার করে। আশাদেবী ইতিমধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে খুনের ব্যাপারে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঘটনাচক্রে আশাদেবী মামলা করার আগের দিন, মঙ্গলবার রাতেই রমেশ-হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জন মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স (কেএলসি) থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম ভজ মণ্ডল, সাত্ত্বিক মণ্ডল ও গনি মোল্লা। ওই খুনের ঘটনায় পুলিশ এ-পর্যন্ত ১৮ জনকে ধরল।
ওই হত্যাকাণ্ডে আরাবুলকে গ্রেফতারের দাবি উঠছে কেন?
রমেশবাবুর পরিবারের অভিযোগ, ভাঙড়ে তৃণমূল থেকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড হওয়া নেতা আরাবুলের অনুগামীরাই ওই খুনে জড়িত। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, রমেশবাবু বেঁওতা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পাঁচু মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রমেশবাবুর বাড়ির অভিযোগ, ওই প্রধানকে সরিয়ে পঞ্চায়েত দখল করতে চাইছিলেন আরাবুল। রমেশবাবু তা চাননি। তাই তাঁকে খুন হতে হয়।
পুলিশি সূত্রের খবর, বেঁওতা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে সরানোর চেষ্টাকে কেন্দ্র করে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল চলছিল। তার জেরে গত ২৫ অক্টোবর এক দল দুষ্কৃতী রমেশবাবুর বাড়িতে চড়াও হয়। ওই তৃণমূল নেতাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং গুলি করে মারা হয়। একই দিনে খুন হন বাপন মণ্ডল নামে এক তৃণমূলকর্মী। ওই দিন রমেশবাবুর উপরে হামলার পরে দুষ্কৃতীরা প্রাক্তন প্রধান পাঁচু মণ্ডলের বাড়িতেও চড়াও হয়। বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পাঁচু এবং তাঁর স্ত্রী-ছেলেরা পালিয়ে যান। তাঁদের তাড়া করে দুষ্কৃতীরা। ওই দলেই বাপন ছিলেন বলে পাঁচুর দাবি। বাপন ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামের অনুগামী। দুষ্কৃতীদের গুলিতেই বাপনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান পাঁচু। তবে এই ঘটনায় পাঁচু এবং তাঁর দুই ছেলেকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রমেশ-হত্যায় মঙ্গলবার রাতে ভজ ও সাত্ত্বিককে ধরা হয় ভাঙড়ের ধাড়া গ্রাম থেকে। গনি গ্রেফতার হয় কেএলসি থানার ধর্মতলা পাঁচুড়িয়ায়। পুলিশ জানায়, গনির কাছে একটি গুলিভরা পাইপগান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিন জনকেই এ দিন বারুইপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের পাঁচ দিনের পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy