Advertisement
E-Paper

আশাভঙ্গের ক্ষোভে ‘না’ বলতে ডাক যৌনকর্মীদের

এ বার ‘না’ বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘নিষিদ্ধ পল্লি।’ স্বাধীনতার পরে সাড়ে ছ’দশকেরও বেশি কেটে গিয়েছে। লোকসভা-বিধানসভা মিলিয়ে কয়েক ডজন নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছে বিভিন্ন দল। এবং প্রতি বার ভোটের আগে হরেক প্রার্থী ওঁদের দুয়ারে এসে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন, সহমত হয়েছেন শ্রমিকের স্বীকৃতির আদায়ের দাবিতে। প্রতিশ্রুতি পেয়ে ওঁরা ভোট দিয়েছেন।

সুকান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫২

এ বার ‘না’ বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘নিষিদ্ধ পল্লি।’

স্বাধীনতার পরে সাড়ে ছ’দশকেরও বেশি কেটে গিয়েছে। লোকসভা-বিধানসভা মিলিয়ে কয়েক ডজন নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছে বিভিন্ন দল। এবং প্রতি বার ভোটের আগে হরেক প্রার্থী ওঁদের দুয়ারে এসে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন, সহমত হয়েছেন শ্রমিকের স্বীকৃতির আদায়ের দাবিতে। প্রতিশ্রুতি পেয়ে ওঁরা ভোট দিয়েছেন।

কিন্তু ভোটে জিতে কেউ কথা রাখেনি। একের পর এক সরকার এসেছে-গিয়েছে। কোনও জনপ্রতিনিধিই ওঁদের সমস্যা ও স্বীকৃতির প্রশ্নে সরব হননি।

তাই এ বার ওঁরা, মানে যৌনকর্মীরা অন্য পথ ধরার কথা ভাবছেন। ভারতের ১৬টি রাজ্যের যৌনকর্মীদের ১১১টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের (অল ইন্ডিয়া সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক) তরফে সমস্ত যৌনকর্মী ও তাঁদের পরিবারের উদ্দেশে আহ্বান জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন বুথে গিয়ে এ বার না-ভোটের (নোটা) বোতাম টিপে জানিয়ে দেন, নির্বাচনী-যুদ্ধের কোনও রথীকেই তাঁদের পছন্দ নয়। সংগঠনের দাবি, তাদের ডাকে ভালই সাড়া মিলেছে। নেটওয়ার্কের হিসেবে, গোটা দেশে যৌনকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের সংখ্যা প্রায় ৫১ লক্ষ। পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা অন্তত ৩ লক্ষ।

বস্তুত দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ক্ষোভকে এ ভাবেই ভোটের মেশিনে প্রতিফলিত করার ভাবনা দানা বেঁধেছে যৌনকর্মী মহলে। ওঁদের আক্ষেপ, সরকার তাঁদের পেশাকে স্বীকৃতি তো দেয়ইনি, বরং ‘নিষিদ্ধ পেশা’র তকমা লাগিয়ে আজও চলছে হয়রানি। উপরন্তু রয়েছে পুলিশি হেনস্থা। “অনেক নেতা সোনাগাছিতে এসেছেন ভোটের প্রচারে, কখনও বা ভাইফোঁটা নিতে। শিল্পী-বিদ্বজ্জনেরা এসেছেন নানা অনুষ্ঠানে। সকলেই বলে গিয়েছেন, ব্যক্তিগত ভাবে যৌনকর্মীদের তাঁরা শ্রমিক মনে করেন। কিন্তু আইন মদত করছে না বলেই কিছু করে উঠতে পারছেন না!” মন্তব্য এক যৌনকর্মীর।

তাঁদের আরও ক্ষোভ, কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারে যৌনকর্মীদের মতো প্রান্তিক মানুষের জন্য কোনও বার একটা শব্দও খরচ করা হয়নি। অথচ প্রতি বার ভোটের আগে নেতা-মন্ত্রীরা এসে বলে যান, এই পেশাকে তাঁরা শ্রম-আইনের আওতায় আনবেন। আবার তাঁরাই পরে বলেন, আইনের মারপ্যাঁচে যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়া যাচ্ছে না।

আদতে ব্রিটিশ আমলের ওই আইনটি পাল্টাতে কোনও সরকারই উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অল ইন্ডিয়া সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের অন্যতম কর্তা স্মরজিৎ জানা। তাঁর কথায়, “২০১০-এ অর্জুন সেনগুপ্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে যৌনকর্মীদের অসংগঠিত শ্রমিকের মর্যাদাদানের সুপারিশ ছিল। সরকার তা মানেনি।” তাঁর আক্ষেপ, কোনও স্বীকৃতি না-থাকায় নানা ধরনের সামাজিক সুরক্ষা থেকেও যৌনকর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আর যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘দুর্বার’-এর সম্পাদক ভারতী দে জানিয়েছেন, যদি কখনও কোনও রাজনৈতিক দল আইন পাল্টে তাঁদের শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়ার কথা নির্বাচনী ইস্তাহারে রাখে, তখন ওঁরা ফের ভোট দেওয়ার কথা ভেবে দেখবেন।

red light area sukanta sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy