Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইস্তাহারে গোর্খা-প্রসঙ্গ জুড়ল কৌশলী বিজেপি

ভোটজয়ের কৌশলী অঙ্কের কাছে অবশেষে মাথা নোয়াতে হল বিজেপি নেতৃত্বকে। নরেন্দ্র মোদীর চাপে সোমবার বিজেপির যে ইস্তাহার প্রকাশিত হয়, সেখানে নামগন্ধ ছিল না গোর্খা বা দার্জিলিংয়ের। তাতে ক্ষুব্ধ হন বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব। গোর্খাদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না করা হলে বিজেপিকে সমর্থন করার কোনও প্রয়োজন নেই বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানান গুরুঙ্গ। এই চাপের মুখে অবশেষে কিছুটা পিছু হটলেন মোদী। বেনজির ভাবে ইস্তাহারে সংশোধনের কথা ঘোষণা করে বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

ভোটজয়ের কৌশলী অঙ্কের কাছে অবশেষে মাথা নোয়াতে হল বিজেপি নেতৃত্বকে। নরেন্দ্র মোদীর চাপে সোমবার বিজেপির যে ইস্তাহার প্রকাশিত হয়, সেখানে নামগন্ধ ছিল না গোর্খা বা দার্জিলিংয়ের। তাতে ক্ষুব্ধ হন বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব। গোর্খাদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না করা হলে বিজেপিকে সমর্থন করার কোনও প্রয়োজন নেই বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানান গুরুঙ্গ। এই চাপের মুখে অবশেষে কিছুটা পিছু হটলেন মোদী। বেনজির ভাবে ইস্তাহারে সংশোধনের কথা ঘোষণা করে বিজেপি। আজ সংযোজনী প্রকাশ করে দলের তরফে জানানো হল, দার্জিলিং ও গোর্খাদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হল ইস্তাহারে।

গত লোকসভা নির্বাচনেও গোর্খাদের সমর্থনে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন যশোবন্ত সিংহ। সেই নির্বাচনেও বিজেপির ইস্তাহারে গোর্খা, আদিবাসী, দার্জিলিং ও ডুয়ার্স এলাকায় মানুষের দাবিকে সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখার কথা ছিল। এ বারে সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া ফের গোর্খাদের সমর্থন নিয়েই বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন পাহাড়ে। কিন্তু গত কাল ইস্তাহারে গোর্খাল্যান্ডের বিষয়টি না থাকায় মোর্চা ও বিজেপিকে বিঁধে প্রচার শুরু করে দেয় পাহাড়ে বিরোধী শিবির। ক্ষোভ জানায় মোর্চা নেতৃত্বও। চাপের মুখে অহলুওয়ালিয়া কথা বলেন সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গোচরে আনেন বিষয়টি। রাজনাথ তাঁদের জানান, কোনও ভাবে বিষয়টি নজর এড়িয়ে গিয়েছে। দ্রুত সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেই দলের সচিব অরুণ কুমার জৈনকে দিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে দেওয়া হয় তড়িঘড়ি।

সংযোজনীতে গোর্খাল্যান্ডের ব্যাপারে স্পষ্ট উল্লেখ না-করলেও দার্জিলিঙের গোর্খাদের দীর্ঘদিনের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কামতাপুরি, রাজবংশী-সহ উত্তরবঙ্গের নানা সম্প্রদায়ের ভাষাগত এবং অন্যান্য দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এমনকী অসমের বড়ো-সহ অন্যান্য আদিবাসী, সিকিম, লে, লাদাখ, আন্দামান-নিকোবর, লক্ষদ্বীপের মতো পিছিয়ে পড়া এলাকার দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের চেষ্টা করা হবে বলেও একই সঙ্গে জানানো হয়েছে।

বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, আসলে মোদী সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও রাজ্যভিত্তিক বিষয় ইস্তাহারে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না। বরং অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন ফেরি করতে চেয়ে দেশের সমস্ত পাহাড় এলাকার সমস্যা নিদানের দাওয়াই দিয়েছিলেন ইস্তাহারে। কিন্তু ভোটের অঙ্কে পিছু হঠতে হল তাঁকেও। রাজনাথরা তাঁকে বোঝান, ভোটের দিকে চেয়ে রাজ্যভিত্তিক ইস্যুও ইস্তাহারে রাখতে হবে। না হলে মোর্চার মতো শরিকদের সমর্থন পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাবে।

এর পর বিজেপি বিবৃতি দিয়ে যে ভাবে সুকৌশলে দার্জিলিঙের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করল, তাতে সেটি ইস্তাহারের মতো প্রচার পেল না। আবার গোর্খাদের কাছে এই বিবৃতি পৌঁছে দিয়ে দলের উদ্দেশ্যও চরিতার্থ হল। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, এর আগে যতগুলি রাজ্য ভাগ করেছে বিজেপি, সেগুলি হিন্দি ভাষা থেকে হিন্দি ভাষার রাজ্যই হয়েছে। কিন্তু দার্জিলিংয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। ফলে বিজেপি এখনই পৃথক গোর্খাল্যান্ডে সায় দিতে পারে না। তবে অহলুওয়ালিয়া সাংসদ হলে তিনি গোর্খা ও অন্যান্য আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করতে পারেন।

সংযোজনী প্রকাশের পরেই পাহাড়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে নেমে পড়েন মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “বিজেপির ইস্তাহারে গোর্খাল্যান্ডের দাবি পূরণের আশ্বাস নেই বলে অনেক সমালোচনা হজম করতে হয়েছে। কিন্তু, সংযোজনী প্রকাশের পরে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দেওয়া গিয়েছে।” কিন্তু, যেখানে তেলঙ্গানা-সীমান্ধ্রের কথা রয়েছে, সেখানে সরাসরি গোর্খাল্যান্ডের দাবি পূরণের কথা বলা হল না কেন, সেই প্রশ্ন গোর্খা লিগ বা সিপিআরএমের মতো দলগুলি এখনও তুলছে। এ প্রসঙ্গে বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “দার্জিলিঙের গোর্খাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে বলা হয়েছে। আর দীর্ঘদিনের দাবি হল গোর্খাল্যান্ড। এটা সবাই জানে। বিজেপির ইস্তাহারে সেটাই বলা হয়েছে।”

দার্জিলিঙের বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া অবশ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবির প্রসঙ্গে গোড়া থেকেই সতর্ক। প্রতিটি প্রচার সভাতেই অহলুওয়ালিয়া একই সুরে বলছেন, “আমরা ছোট রাজ্যের পক্ষে। তা বলে গোর্খাল্যান্ড হবে এটা কখনও বলা হয়নি। তবে গোর্খাদের দীর্ঘদিনের যে দাবি তা সহানুভূতির সঙ্গে আমরা বিবেচনা করার পক্ষে।”

১৩ এপ্রিল দার্জিলিঙে সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “ওই দিন আমরাও পাহাড়ে সভা করব। আগাম অনুমতি নিয়েছি। সে দিনই তৃণমূল সভার অনুমতি পেয়েছে। যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হয়, সে জন্য কী কী করণীয়, তা নিয়ে ভাবছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manifesto bjp morcha gorkhaland votebadyi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE