Advertisement
E-Paper

উন্নয়নের টাকা নিয়ে মমতা-রাহুল তরজা

এক জন বললেন, “দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে বাংলা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, অমর্ত্য সেনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। কমিউনিস্টদের আপনারা সরিয়েছেন, এটা খুবই আনন্দের। কিন্তু যে পরিবর্তন এনেছেন, তাতে কাজ হচ্ছে না।” কয়েক ঘণ্টা পরে জবাব অন্য জনের, “ইন্দিরা আবাস, রাজীব গাঁধী বিদ্যুৎ যোজনা সব প্রকল্পই ওঁদের নামে। কেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজি, বীরসা মুন্ডা, সূর্য সেনের নামে প্রকল্প হবে না? আর যেন কেউ নেই!” সেই সঙ্গে আবার কটাক্ষ: “কেউ কেউ ভোট এলেই বসন্তের কোকিলের মতো কুহু কুহু করে ডাকতে থাকেন। আর আমি সারা বছরই উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতলে আসি।”

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৮
নকশালবাড়িতে কর্মিসভার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতে উন্নয়নের খতিয়ান। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নকশালবাড়িতে কর্মিসভার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতে উন্নয়নের খতিয়ান। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

এক জন বললেন, “দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে বাংলা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, অমর্ত্য সেনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। কমিউনিস্টদের আপনারা সরিয়েছেন, এটা খুবই আনন্দের। কিন্তু যে পরিবর্তন এনেছেন, তাতে কাজ হচ্ছে না।”

কয়েক ঘণ্টা পরে জবাব অন্য জনের, “ইন্দিরা আবাস, রাজীব গাঁধী বিদ্যুৎ যোজনা সব প্রকল্পই ওঁদের নামে। কেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজি, বীরসা মুন্ডা, সূর্য সেনের নামে প্রকল্প হবে না? আর যেন কেউ নেই!” সেই সঙ্গে আবার কটাক্ষ: “কেউ কেউ ভোট এলেই বসন্তের কোকিলের মতো কুহু কুহু করে ডাকতে থাকেন। আর আমি সারা বছরই উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতলে আসি।”

প্রথম জন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। এ দিন সকালে ডুয়ার্সের জুরান্তিতে কর্মিসভায় আক্রমণ করেন রাজ্য সরকারকে। দ্বিতীয় জন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের ওই কর্মিসভার কয়েক ঘণ্টা পরে যিনি তৃণমূলের কর্মিসভা করেন নেপাল সীমান্ত-লাগোয়া নকশালবাড়ি এবং শিলিগুড়ি-লাগোয়া সাহুডাঙিতে।

দুই নেতানেত্রীর টক্করের মূল বিষয় ছিল রাজ্যের উন্নয়ন। সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দু’জনেই তুলেছেন অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান। আর তার সঙ্গে জুড়ে এসেছে মণীষীদের নাম। মমতা আরও এক বার রাহুলকে বসন্তের কোকিল বলেছেন। ২০১০-এ বিধানসভা ভোটের আগে যখন জোট নিয়ে বিভিন্ন সময়ে টানাপড়েন চলছে, তখন সনিয়া-পুত্রকে একই বিশেষণে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

টক্করটা যে অবশ্যম্ভাবী, সেটা সোমবারই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। নবান্ন-য় সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র গত তিন বছরে কত কোটি টাকা সুদ-আসল বাবদ কেটে নিয়েছে বা দেয়নি। এ দিন রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে রাহুল-মমতা তরজায় এই বিষয়গুলিই আবার উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার রাজনৈতিক তরজার শুরুটা হল উত্তরবঙ্গে। নীল জিন্স আর সাদা কুর্তায় স্বচ্ছন্দ রাহুল মেটেলির জুরান্তি চা বাগানে পৌঁছে যান বেলা ১১টা নাগাদ। কর্মিসভায় মাত্র ১২ মিনিটের বক্তৃতায় ঘুরেফিরে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি। তাঁর দাবি, “শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সড়কের জন্য বাংলাকে সব থেকে বেশি টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে এসে বুঝতে পারছি বাংলার রাস্তার কতটা বেহাল দশা।” সেই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, বামেদের পথ অনুসরণ করেই রাজ্যে তৃণমূল সরকার চলছে। তিনি দাবি করেন, কংগ্রেসই পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারে। কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের টাকা মানুষের কাছে পৌঁছয় না, এই অভিযোগ তুলে রাহুল দাবি করেন, “মনে রাখবেন, ওটা আপনাদের টাকা। ওই টাকা বাংলার বিধায়ক বা মন্ত্রীদের নয়। সেই টাকা কলকাতায় এসে আটকে যাবে, তা হতে পারে না।” সেই টাকা যাতে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার দরকার, যুক্তি দেন তিনি। ডুয়ার্সের সভায় কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তিও তুলে ধরেন রাহুল।

এর ঘণ্টা চারেক পরেই উত্তর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের দুই সভাতেই হাতে একটি পুস্তিকা নিয়ে রাজ্য সরকারের ব্যয় বরাদ্দের খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, আগের বাম সরকার যে ধার করেছিল, প্রতি বছর তার সুদ-আসল বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ কেটে নেয় কেন্দ্র। তা ছাড়া কর বাবদ আয় এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পের যে অংশ রাজ্যের প্রাপ্য, তা-ও সবটা দেয় না তারা। বস্তুত, সোমবার নবান্ন-য় দাঁড়িয়ে এই কথাগুলিই বলেছিলেন অমিতবাবু। এ দিন শুধু কর্মিসভার বক্তৃতাতেই নয়, পরে ফেসবুকেও একই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মমতা। সেখানে জানান, ঋণের সুদ-আসল বাবদ এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার কোটি টাকার বেশি কেটে নিয়েছে কেন্দ্র। এর সঙ্গে রাজ্যকে ফেরতযোগ্য বিক্রয় করের অংশ, কর থেকে প্রাপ্য রাজ্যের অংশ, নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্প খাতে না দেওয়া টাকা যোগ করলে সেই অর্থের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৮৭ হাজার কোটি টাকায়। এই হিসেব দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “এত টাকা কেটে নেওয়ার পরে কোন মুখে ওরা কথা বলছে?” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “কেউ রাজ্যে এসে বলছে, হাজার-হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। টাকা নিয়ে রাজনীতি করছে। দিল্লির এই নেতারা আসলে লাটসাহেবের ছেলেমেয়ে। গরিব বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্ট তারা জানে না, বোঝে না।” তাঁর কথায়, “আমি ওদের মতো ভুঁইফোঁড় নেতা নই। তা-ও ভোটের সময় ওদের মতো মিথ্যে কথা বলি না।”

নকশালবাড়ির সভায় মমতা তাঁর হাতের পুস্তিকাটি দেখিয়ে বলেন, “বেশি মুখ খোলাবেন না। আমাদের কাছে সব হিসেব আছে। একটা করে হিসেব দেব আর গর্তে পুরব।” কংগ্রেসের নানা দুর্নীতির খবর যে তিনি রাখেন, তা বুঝিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বেশি মুখ খোলাবেন না। মানুষের কাজ করতে না পারলে সরে যান।”

mamata bandyopadhyay nakshalbari loksabha election tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy