সারদা থেকে শুরু করে একের পর এক ঘটনায় তৃণমূলের বিড়ম্বনা বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দলের মধ্যে অস্থিরতা। তারই ফের একটি নমুনা দেখা গেল বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে।
দলের সব ক’টি শ্রমিক সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনার জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তারই মধ্যে এ দিন শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে আইএনটিটিইউসি-র নেত্রী দোলা সেন চা শ্রমিক সংগঠনের এক সভার আয়োজন করেন। ওই সভায় দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী যাবেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচারও করা হয়েছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গ সফরে এলেও সুব্রতবাবু এ দিন শিলিগুড়ির ওই সভায় যাননি। আর দোলার সভায় সুব্রতবাবুর না-যাওয়া নিয়েই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৃণমূল মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠনগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার প্রয়াস চলছে। অথচ সে সময় আইএনটিটিইউসি-র ডাকে চা শ্রমিকদের একটি সংগঠনকে নিয়ে দোলার সভা সেই প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে। ঘনিষ্ঠ মহলে সুব্রতবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেকে অমর্যাদা করে ওই সভা ডাকা হয়েছিল বলেই তিনি সেখানে যাননি। যদিও প্রকাশ্যে সুব্রতবাবু এ নিয়ে বিস্তারিত ভাবে মন্তব্য করতে চাননি। প্রকাশ্যে তাঁর বক্তব্য, “দলের তরফে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে কর্মসূচি ছিল। তা করেই আমি ফিরে এসেছি।” আর দোলার দাবি, “এ সব নিয়ে মিথ্যে খোঁচাখুচি করা হচ্ছে। এ সব প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে চাই না। দলের জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় সুব্রতবাবুকে ফিরে যেতে হয়েছে।”
চা বলয়ে তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণাধীন ৩টি সংগঠন রয়েছে। সরাসরি আইএনটিটিইউসি-র ব্যানারে দোলার নেতৃত্বে চা বাগানগুলির একাংশে সংগঠন চলছে। অপর দিকে, তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নামে আরও দুটি সংগঠন রয়েছে। ওই সমস্ত সংগঠনগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার যখন প্রয়াস চলছে, তখন একক ভাবে আইএনটিটিইউসি-র ডাকে এই সভায় স্বাভাবিক ভাবেই অন্য সংগঠনগুলি সামিল হয়নি। অন্য ক্ষেত্রের শ্রমিকদের একটা অংশ উপস্থিত থাকলেও ওই সভায় চা শ্রমিকদের হাজিরা ছিল নামমাত্র। দোলা এবং সংগঠনের অন্য নেতারা অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দলের একাংশের মত, চা বলয়ে আইএনটিটিইউসি-র কিছু সংগঠন থাকলেও বাম সংগঠনই ছিল এক সময় শক্তিশালী। পরিবর্তনের পরে জোয়াকিম বাক্সলা, মোহন শর্মার মতো চা বলয়ের নেতারা তৃণমূলে সামিল হয়েছেন। তেমনই আদিবাসী বিকাশ পরিষদ ছেড়ে তৃণমূলে সামিল হয়েছেন শুক্র মুণ্ডার মতো চা বলয়ের নেতারাও। তাঁদের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে এক ছাতার তলায় বিভিন্ন সংগঠনকে এনে শ্রমিকদের দাবিদাওয়ার যথাযথ সুরাহা করতে চান তৃণমূল নেত্রী। অথচ বিচ্ছিন্ন ভাবে আইএনটিটিইউসি সভা ডাকায় ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সে ব্যাপারে দোলাকে তিনি জিজ্ঞাসা করবেন বলে আইএনটিটিইউসি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “শিলিগুড়ির সভার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। দোলাকে জিজ্ঞাসা করব।”
তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতা ও মন্ত্রী সুব্রতবাবুর ঘনিষ্ঠ অলক চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ওই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলেও সংগঠনকে কোনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে এ দিনের সভায় যাওয়ার ব্যাপারে কোনও নির্দেশ পাইনি।” একই সুরে উত্তর দিয়েছেন তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতৃত্বও। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এর আগে উত্তরকন্যায় মজুরি চুক্তি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে দোলার বিরোধিতা করেছেন শোভনদেববাবু। তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাদল দাশগুপ্তও বলেন, “ওই সভার ব্যাপারকে আমাদের কিছু বলা হয়নি।”
স্বাভাবিক ভাবেই দোলার এ দিনের সভা অস্থিরতা বাড়িয়ে দিল তৃণমূলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy