পুরুলিয়া শহরে যুব তৃণমূলের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র
দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে অশালীন ভাষা প্রয়োগের প্রতিবাদে পথে নামল পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল। আর তার জেরে অস্বস্তি আরও বাড়ল বিজেপি শিবিরে। ক্ষমা চাইলেন দলের জেলা সভাপতি। এবং ঘরেবাইরে আরও কোণঠাসা হলেন ওই ভাষা প্রয়োগে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা শ্যামাপদ মণ্ডল। শাসকদল তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছে।
গত ৩ ডিসেম্বর জলপাইগুড়িতে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমালোচকদের আক্রমণ করে বলেছিলেন, “যারা (কাজ) করছে, সারা ক্ষণ তাদের পিছনে কী করে বাম্বু দেওয়া যায়, তার চিন্তা করে বেড়াচ্ছে!” সেই ‘বাম্বু’ প্রসঙ্গ তুলেই রবিবার পুরুলিয়ার ঝালদায় দলের এক সভায় মমতাকে উদ্দেশ করে অশালীন মন্তব্য করেন শ্যামাপদবাবু। এ কথা জানাজানি হতেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। ওই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও প্রশাসনের কাছে জানিয়েছে যুব তৃণমূল। সোমবার সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা এই দাবিতে পুরুলিয়া শহরে মিছিল করেন।
পুরুলিয়া জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম রায় বলেন, “রবিবার ঝালদার সভা থেকে এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ছাপার অযোগ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা জেলাশাসকের কাছে এই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও এ দিন বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থার দিকে যাওয়ার কথাই ভাবছি।” জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “আমার কাছে এ দিন ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্মারকলিপি এসেছে। আমরা পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলছি। তার পর বিধি মোতাবেক যা ব্যবস্থা নেওয়া যায়, নেওয়া হবে।”
শ্যামাপদবাবুর মন্তব্য অবশ্য যারপরনাই অস্বস্তিতে ফেলেছে জেলা তথা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে। তাঁরা শ্যামাপদবাবুর বক্তব্যকে দল থেকে আলাদা করতে চাইছেন। বিশেষ করে জেলায় বিজেপি-র সাংগঠনিক শক্তি যখন ধীরে হলেও বাড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের বেফাঁস মন্তব্য দলকে বেকায়দায় ফেলবে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। দলের এক নেতার কথায়, “এটা ভুললে চলবে না, আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা। তাঁর উদ্দেশে কিছু কটূ মন্তব্য করার আগে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।”
দিন কয়েক আগেই কলেজের ছাত্র সংসদ নিবার্চনে জেলার দু’টি কলেজে এবিভিপি ভাল ফল করায় বিজেপি সম্পর্কে যে ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছিল, রাঢ়বঙ্গে দলের প্রচারের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা শ্যামাপদবাবুর অশালীন মন্তব্য তাতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন দলে সাধারণ কর্মীদের একটা বড় অংশও। জেলার যে দু’টি কলেজে এবিভিপি ভাল ফল করেছে, তার অন্যতম ঝালদার অচ্ছ্রুরাম স্মৃতি কলেজ। এই কলেজের ছাত্র সংসদে ২৩টি আসনের মধ্যে এবিভিপি ১০টি আসন পেয়ে এক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। উল্টোদিকে ছাত্র সংসদে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পায় ৭টি আসন। আর ছাত্র পরিষদের দখলে যায় ৫টি আসন। এবিভিপিকে রুখতে নিবার্চনের পরে জোট গড়ে টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদ। এবিভিপিকে রোখার নামে স্রেফ ক্ষমতা দখলই যে এই দুই ছাত্র সংগঠনের লক্ষ্য, এলাকায় এমন প্রচার শুরু করেছিল বিজেপি।
শুধু তাই নয়, রবিবার ঝালদা বাজারে জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে একটি যোগদান সভারও আয়োজন করা হয়। ওই সভায় এলাকার বিভিন্ন দলের বেশ কিছু নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। ঝালদা কলেজে জয়ী এবিভিপি প্রার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল ওই সভায়। আর সেই সভামঞ্চেই বক্তৃতার সময় রাঢ়বঙ্গে দলের প্রচারের দায়িত্বে থাকা অন্যতম নেতা শ্যামাপদ মণ্ডল ‘বাম্বু’ প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ছাপার অযোগ্য ভাষায় মন্তব্য করায় অস্বস্তি লুকোতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা শ্যামাপদবাবুর ওই বক্তব্য সমর্থন করি না। এটা কোনও ভাবেই দলের বক্তব্য হতে পারে না। যিনি বলেছেন, দায়িত্বও তাঁর নিজের। শুধু আমাদের জেলার একটি সভা মঞ্চ থেকে এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে বলে জেলা সভাপতি হিসেবে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” তাঁর সংযোজন, “রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতেই পারে। কিন্তু এক জন মহিলা সম্পর্কে এ ধরনের কথা সমর্থনযোগ্য নয়। আর এ ধরনের কথা বলা বিজেপির সংস্কৃতিও নয়।”
ভিডিও ফুটেজে সব দেখা ও শোনা গেলেও শ্যামাপদবাবু অবশ্য রবিবার দাবি করেছিলেন, তিনি তাঁর বক্তৃতায় ‘বাম্বু’ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেননি। এ দিন অবশ্য তাঁর সুর অনেকটাই নরম। তাঁর কথায়, “আমি সে ভাবে বলতে চাইনি। তবে, দুঃখ যদি কেউ পেয়ে থাকেন, তার জন্য আমি দুঃখিত। এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy