Advertisement
E-Paper

কুণালকে সরাও, রাজ্যের চিঠি সিবিআইকে

দু’জনেই জেলে রয়েছেন সারদা কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত হিসেবে। কিন্তু মন্ত্রী মদন মিত্রের আরাম-আয়েসের জন্য যখন রীতি ভেঙে জেলের মধ্যে বিশেষ বন্দোবস্ত হচ্ছে, তখন সাংসদ কুণাল ঘোষের হেফাজতের দায়িত্ব নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের কারা দফতরের তরফে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে চিঠি দিয়ে সম্প্রতি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের জেল থেকে সরিয়ে কুণালের জন্য তারা অন্য ব্যবস্থা করুক।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২২

দু’জনেই জেলে রয়েছেন সারদা কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত হিসেবে। কিন্তু মন্ত্রী মদন মিত্রের আরাম-আয়েসের জন্য যখন রীতি ভেঙে জেলের মধ্যে বিশেষ বন্দোবস্ত হচ্ছে, তখন সাংসদ কুণাল ঘোষের হেফাজতের দায়িত্ব নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের কারা দফতরের তরফে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে চিঠি দিয়ে সম্প্রতি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের জেল থেকে সরিয়ে কুণালের জন্য তারা অন্য ব্যবস্থা করুক।

রাজ্য কারা দফতরের এডিজি অধীর শর্মার চিঠিটি সিবিআইয়ের অধিকর্তা অনিল সিন্হার কাছে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে খবর, চিঠিটি পেয়ে সিবিআই খুবই অবাক। কারণ সিবিআই হেফাজত শেষ হওয়ার পরে আদালতের নির্দেশেই জেল হেফাজতে রয়েছেন কুণাল। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের এই প্রস্তাবের কী জবাব দেওয়া হবে, তা এখনও ভেবে স্থির করতে পারেনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি।

সিবিআইয়ের একটি সূত্রের কথায়, কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে তারা হেফাজতে নেয়। না হলে অভিযুক্তরা বিচার বিভাগীয় হেফাজতেই থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে বিচারাধীনদের জন্য পৃথক কোনও হেফাজত নেই বলে সব অভিযুক্তকে জেলেই রাখা হয়। সারদা কেলেঙ্কারিই হোক বা অন্য যে কোনও মামলা গ্রেফতারের পর সিবিআই দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্তকে নিজের হেফাজতে রেখে দিতে পারে না। এটা আইনের পরিপন্থীও। সিবিআইয়ের এক অফিসারের কথায়, “কুণালকে পশ্চিমবঙ্গের জেলের বদলে অন্য কোনও রাজ্যের জেলে রাখা হোক এটাই কি চায় রাজ্য সরকার? কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আদালতে মামলা চললে সেটা কী ভাবে সম্ভব? যাই হোক, রাজ্য বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে, কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। এটা একেবারেই আদালতের এক্তিয়ার। ”

রাজ্য কারা দফতরের এক কর্তার পাল্টা বক্তব্য, “এটা সিবিআই এবং আদালতের মধ্যের বিষয়। রাজ্য কেবল জেলে রাখার ব্যবস্থাটুকুই করে। সিবিআইকে রাজ্য তার বক্তব্য জানিয়েছে। তারা এ বার বিষয়টি নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করুক।”

কিন্তু কুণালের দায়িত্ব ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে কেন রাজ্য?

কারা দফতর সূত্রের খবর, গত মাসে কুণাল ঘোষ জেলের মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করার পরেই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তিনি ফের কিছু করে বসলে তার দায় বর্তাবে রাজ্যের ঘাড়েই। নবান্নের এক সূত্রের মতে, কুণালকে নিয়ে মহা ব্যতিব্যস্ত রাজ্য সরকার। গত কয়েক মাস ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র, মুকুল রায়-সহ দলের বিভিন্ন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন কুণাল। হয় প্রকাশ্যে, না হয় সিবিআইয়ের কাছে। কখনও কুণাল দাবি করেছেন, তাঁর ও সুদীপ্ত সেনের মুখোমুখি বসিয়ে মমতাকে জেরা করা হোক। কখনও বা বলেছেন, পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে সারদা মিডিয়ার কাছে সব চেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছেন মমতা। সরকারের নির্দেশে প্রকাশ্যে কুণালের মুখ খোলা বন্ধ করতে ভ্যান চাপড়ানো ছাড়া ‘হা রে রে রে’ করে চিৎকার পাড়তে হচ্ছে পুলিশকে। তা নিয়ে বাইরের লোক তো বটেই, পরিবারের কাছেও হাসির খোরাক হচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। এতে বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এর পরে জেলের মধ্যে কুণালের কিছু হলে শাসক দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠতে পারে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, “সুতরাং কুণালের জেল হেফাজত মমতা সরকারের একটা ক্রনিক মাথাব্যথার কারণ হয়ে রয়েছে। সিবিআই তাঁকে অন্য কোথাও সরালে তা থেকে রেহাই মেলে!”

গত ১০ নভেম্বর কুণাল আদালতে ঘোষণা করেন, তিন দিনের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীদের ধরা না হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। এর পর ১৩ নভেম্বর তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন বলে জেল কর্তাদের জানান। আত্মহত্যার হুমকি দেওয়ার পরেও জেলের মধ্যে কুণাল ঘুমের ওষুধ কী ভাবে পেলেন, সে প্রশ্ন ওঠে। কুণাল নিজেও সেই প্রশ্ন তোলেন। তাঁকে মেরে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন। তার পর কুণালকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাস আগে তিনি হাসপাতাল থেকে ফের জেলে ফিরেছেন। কিন্তু সেখানেও তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা, কুণাল সুযোগ পেলেই আদালতে যাওয়া-আসার পথে সংবাদমাধ্যমের সামনে ফের মুখ খুলবেন। এই পরিস্থিতিতে জেলে কুণালের কোনও শারীরিক ক্ষতি হলে তার পিছনে তৃণমূল নেতৃত্ব তথা রাজ্য সরকারের দিকেই আঙুল উঠবে।

গত সপ্তাহেই কুণাল আদালতে জানিয়েছিলেন, তিনি মমতা-মুকুলের সম্পর্কে দু’টি নির্দিষ্ট তথ্য সিবিআইকে দিতে চান। আদালত অনুমতি দিলে সিবিআই অফিসাররা জেলে গিয়েই কুণালের বয়ান নথিবদ্ধ করেন। তার পরেই এসএসকেএম থেকে মনোবিদদের একটি দল কুণালকে জেলে দেখতে যান।

ওই ঘটনার আগেই অবশ্য কুণালের জন্য ‘অন্য ব্যবস্থা’ করার অনুরোধ সিবিআইকে চিঠি দিয়ে ফেলেছে রাজ্য সরকার।

madan mitra premangshu chowdhury kunal ghosh saradha scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy