নির্দেশ তো এসেছে, কিন্তু তা কার্যকর হবে কি! রাজ্যে প্রকাশ্যে তামাক-সেবন বন্ধ নিয়ে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে পথেঘাটে। পুলিশের অন্দরেও।
তামাক-বিরোধী আইন নিয়ে পুলিশকে সক্রিয় হতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যের ডিজিকে চিঠি লিখে বলেছেন, এ ব্যাপারে পুলিশ যেন কড়া হয়। প্রতি মাসের অপরাধদমন বৈঠকেও যেন এই আইন নিয়ে আলোচনা করেন পুলিশ অফিসারেরা। কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, এই নির্দেশ এখনও পুলিশ মহলে পাঠানো হয়নি। ফলে কী ভাবে আইন প্রণয়ন করা হবে, তা নিয়ে ধন্দে অফিসারেরা। এত জনবহুল শহরে অন্যান্য দায়িত্ব সামলে পুলিশ এই কাজে কতটা সফল হবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে অনেকের।
দেশের অনেক রাজ্যেই পুলিশ কিন্তু এ ব্যাপারে সক্রিয়। কেরল পুলিশের ওয়েবসাইট বলছে, সে রাজ্যে মহিলা ও শিশুদের উপরে অপরাধ এবং পথ দুর্ঘটনা প্রতিরোধের মতোই প্রকাশ্যে ধূমপান ও গুটখা সেবনের ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। তামাক-প্রতিরোধ আইনের কোন কোন ধারায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তারও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে ওয়েবসাইটে।
সিকিমেও রাস্তাঘাটে কিংবা বাজারে ধূমপান করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। বছর কয়েক আগে সিকিমে বেড়াতে যাওয়া এক পর্যটকের অভিজ্ঞতা, পেলিংয়ে রাস্তার ধারে একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনেও দেশলাই মেলেনি। দোকানি তাঁকে বলেছিলেন, “এখানে সিগারেট খেলে আপনাকে পুলিশে ধরবে। দেশলাই দেওয়ার জন্য আমাকেও বকুনি সইতে হবে।” হিমাচলপ্রদেশের কসৌলিতে গিয়ে বকুনি সইতে হয়েছিল আর এক বাঙালি ধূমপায়ীকে। রাস্তার ধারে সিগারেট ধরাতেই গাড়ির চালক বলেছিলেন, “গাড়িতে উঠে খান।”
কিন্তু এ রাজ্যে?
পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, এখনও প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি। নির্দেশ আসার পরেও কতটা বন্ধ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ শীর্ষ অফিসারদের মধ্যেই। তাঁরা বলছেন, কলকাতা-সহ রাজ্যে পুলিশের যা পরিকাঠামো, তাতে সাধারণ অপরাধ সামলাতেই কালঘাম ছুটে যায়। এর উপরে ধূমপায়ীদের আটকাতে হলে আরও সমস্যা বাড়বে। এক পুলিশকর্তার কথায়, “পুলিশ ধূমপায়ীদের ধরতে গেলে অন্য কাজে ফাঁকি পড়ে যাবে।” এর পাশাপাশি রাস্তা ‘পাবলিক প্লেস’-এর আওতায় আসে কি না, সেই নিয়ে চলতে থাকা বিতর্কের মাঝেই পুলিশের একাংশ মনে করছে রাস্তায় ধূমপান নিষিদ্ধ হলে নজরদারিরর পরিধি আরও অনেক বেড়ে যাবে। এখনকার পরিকাঠামোয় যা সমস্যার। তবে প্রেক্ষাগৃহ বা সরকারি অফিস চত্বরে পুলিশি নজরদারিতে ধূমপান বা গুটখা সেবন বন্ধ করা সম্ভব বলেও মনে করছেন পুলিশকর্তারা।
কিন্তু কেরল কিংবা অন্য রাজ্য তা হলে পারে কী করে?
পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, সিকিম কিংবা হিমাচলে লোকসংখ্যা এ রাজ্যের তুলনায় অনেকই কম। কেরলের মতো রাজ্যে পুলিশের সংখ্যা ও পরিকাঠামো অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে বেঙ্গালুরুর উদাহরণ টেনে অনেকে বলছেন, সেখানে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আলাদা একটি তামাক-বিরোধী শাখা রয়েছে। জনসচেতনতা প্রসার বা আইন লাগু করার দায়িত্ব অনেকটাই তারা নেয়। এ রাজ্যেও তেমন কোনও শাখা হলে আইন লাগু করায় কড়াকড়ি করা সম্ভব বলে মনে করেন এক পুলিশকর্তা।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, তামাক সেবন নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশের পাশাপাশি গেজেটেড অফিসারেরাও জরিমানা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন দফতর থেকে অফিসার নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা যেতেই পারে। যদিও পুলিশেরই একটি অংশের বক্তব্য, তামাক-নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশেরও ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে এক দশকে তাদের তৎপরতা নজরে পড়েনি।
পুলিশি জুজু দেখালেই কি পথেঘাটে সিগারেট-গুটখা খাওয়া বন্ধ হবে?
নাগরিকদের একাংশের মতে, শহরে আইন রূপায়ণে পুলিশি সক্রিয়তার একটা ভূমিকা রয়েছে। যদিও আর একটি অংশের মতে, শুধু পুলিশের ভয় দেখিয়ে পথেঘাটে সিগারেট-গুটখা খাওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।
না হলে আইনের ফাঁক বা পুলিশের নজর গলে পথেঘাটে ধূমপান চলতেই থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy