খাগড়াগড়-বিস্ফোরণ মামলায় ৩১ মার্চের মধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন বা ইউএপিএ তো বটেই, সেই সঙ্গে দেশদ্রোহ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র মজুত করার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক উপাদান আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ আনা হবে বলে এনআইএ সূত্রের খবর। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০ জনেরও বেশি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তাঁরা চার্জশিট পেশ করবেন। এদের মধ্যে ১৭ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে দু’জন মহিলা এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমারের এক জন করে নাগরিক। আরও অন্তত তিন জন বাংলাদেশি-সহ ১৬ জনের খোঁজ চালাচ্ছে এনআইএ।
তবে ফেরারদের আট জনের নাম ঘোষণা করে তাদের হদিস পেতে ইনাম ঘোষণা করেছে এনআইএ। এদের নাম চার্জশিটে থাকবে বলে এনআইএ সূত্রের খবর। এরা হল, তিন বাংলাদেশি নাগরিক তথা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর তিন চাঁই হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সুহেল, কওসর ওরফে বোমারু মিজান ও তালহা শেখ। তা ছাড়া, বর্ধমানের ইউসুফ শেখ, বুরহান শেখ ও আবুল কালাম, নদিয়ার জহিরুল শেখ এবং বীরভূমের হবিবুর রহমান শেখের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনআইএ। এদের কারও জন্য ১০, কারও ৫ লক্ষ, কারও জন্য ৩ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করা হয়েছে।
কিন্তু বাকি আট জন কারা, সেটা এনআইএ এখনও সরকারি ভাবে জানায়নি। এনআইএ-র একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকি আট জনের মধ্যে কয়েক জন ইতিমধ্যেই বিশেষ বিশেষ মাধ্যমে তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র তাদের কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে, এমন ইঙ্গিতও মিলেছে। কাজেই, তাদের সবাইকে গ্রেফতার না-ও করা হতে পারে, আবার দুয়েক জনকে রাজসাক্ষীও করা হতে পারে। যেমন, মুর্শিদাবাদের লালগোলা এলাকার মকিমনগরের মোফাজ্জুল হক ওরফে লাদেনকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করার পক্ষপাতী ছিলেন না এনআইএ-র অফিসারদের একাংশ। তাঁরা ভেবেছিলেন, মকিমনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তথা মালিক মোফাজ্জুল লিঙ্কম্যানদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে যখন সহযোগিতা করছে, তখন তাকে এখনই গ্রেফতার করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের অফিসারদের একাংশের তর সইল না বলে জানাচ্ছেন এনআইএ-র কয়েক জন অফিসার। সেই জন্যই এনআইএ ১৬ জনকে ফেরার বলে ঘোষণা করলেও অর্ধেকের নামই জানাচ্ছে না।
এনআইএ সূত্রের খবর, যাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হবে, তাঁদের সকলকেই জেএমবি-র চাঁই বা সক্রিয় সদস্য বলে উল্লেখ করা থাকবে নথিতে। যদিও এনআইএ জেনেছে, আল-কায়দার শাখা সংগঠন হিসেবেই ওই জঙ্গি-চক্রটি পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ঝাড়খণ্ডে জাল বিছিয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল। এনআইএ-র এক অফিসারের কথায়, “খাগড়াগড়-বিস্ফোরণ আসলে এক আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের হদিস দিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে যার শিকড় বহু দূরে রয়েছে বলেই আমাদের ধারণা। তবে আপাতত জেএমবি-র কথাই বলা হবে চার্জশিটে। কারণ, ওই সংগঠনই ছিল চক্রের মুখ।”
নিয়ম অনুযায়ী, ইউএপিএ-তে রুজু হওয়া মামলার ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের ১৮০ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করতে হয়। সেই ১৮০ দিন পূর্ণ হচ্ছে ৩১ মার্চ। গত বছরের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল। সে দিনই মামলা রুজু করেছিল বর্ধমান জেলা পুলিশ। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে এনআইএ ১০ অক্টোবর দিল্লিতে তাদের নিজস্ব থানায় মামলাটি নতুন ভাবে নথিবদ্ধ করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy