Advertisement
০৭ মে ২০২৪

গুরুঙ্গদের ফেরার ঘোষণা, তোপ মোর্চারও

আগাম জামিনের আবেদন আগেই খারিজ করেছে আদালত। আদালত সূত্রের খবর, এ বার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ, তাঁর স্ত্রী আশা গুরুঙ্গ, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ও প্রথম সারির নেতা নিকল তামাঙ্গকে ‘ফেরার অভিযুক্ত’ বলে ঘোষণা করা হল। রবিবার দার্জিলিঙে তাঁদের বাড়িতে সেই মর্মে নোটিসও সাঁটিয়ে এসেছে পুলিশ। দার্জিলিঙের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ সরকার বলেছেন, “অভিযুক্তরা আত্মসমর্পণ না-করলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিস দিতে পারে আদালত।”

দার্জিলিঙের সিংমারিতে দলের দফতরে বিমল গুরুঙ্গ। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

দার্জিলিঙের সিংমারিতে দলের দফতরে বিমল গুরুঙ্গ। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

আগাম জামিনের আবেদন আগেই খারিজ করেছে আদালত। আদালত সূত্রের খবর, এ বার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ, তাঁর স্ত্রী আশা গুরুঙ্গ, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ও প্রথম সারির নেতা নিকল তামাঙ্গকে ‘ফেরার অভিযুক্ত’ বলে ঘোষণা করা হল। রবিবার দার্জিলিঙে তাঁদের বাড়িতে সেই মর্মে নোটিসও সাঁটিয়ে এসেছে পুলিশ। দার্জিলিঙের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ সরকার বলেছেন, “অভিযুক্তরা আত্মসমর্পণ না-করলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিস দিতে পারে আদালত।”

পুলিশ তাঁর বাড়িতে আদালতের নোটিস সাঁটিয়ে যাওয়ার পরে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিমল গুরুঙ্গ। সেখানে তিনি দাবি করেন, লোকসভা ভোটে পাহাড়ে তৃণমূলের প্রার্থীকে সমর্থন না করে বিজেপি-র হাত ধরার পরেই নানা ভাবে চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে মোর্চা সভাপতির হুঁশিয়ারি, “আমাদের গ্রেফতার করলে পাহাড়ে যদি অশান্তি হয়, তার দায় কিন্তু রাজ্য সরকারের উপরে বর্তাবে।” শুধু তা-ই নয়, নিজের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আচমকাই মাওবাদী নেতা কিষেনজির কথা তোলেন গুরুঙ্গ। অভিযোগ করেন, “আমি রাজ্য সরকারের পুলিশকে বিশ্বাস করি না। আমাকে কিষেনজির মতো মেরে ফেলা হতে পারে।” কিন্তু কিষেনজির মতো মাওবাদী গেরিলা জঙ্গির সঙ্গে নিজেকে একাসনে বসাচ্ছেন কেন? সেই প্রশ্নে উত্তর গুরুঙ্গ দেননি।

দার্জিলিঙের ক্লাবসাইড রোডে ২০১০ সালের ২১ মে খুন হন অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের নেতা মদন তামাঙ্গ। ওই ঘটনায় খুনের মামলার পাশাপাশি তামাঙ্গের দেহরক্ষী মহেশ ঠাকুরিকে খুনের চেষ্টার অভিযোগেও একটি মামলা হয়। তামাঙ্গ হত্যা মামলাটি সিআইডি-র হাতে রয়েছে। ঠাকুরির অভিযোগের ভিত্তিতে করা মামলায় ৩৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ১৮ জন জেলে। ৮ জন জামিনে মুক্ত। বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরি-সহ ১০ জনকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এই মামলায় সম্প্রতি গুরুঙ্গ ও তাঁর স্ত্রীর আগাম জামিনের আর্জি খারিজ হয়েছে। রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রী, দীনেশ সুব্বা ওরফে কালিয়া, প্রাক্তন কর্নেল রমেশ আলে-সহ ৮ জনের আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা আগামিকাল, বুধবার।

রাজ্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ভাল ভাবেই জানেন, এখন গুরুঙ্গ গ্রেফতার হলে পাহাড় আবার অশান্ত হতে পারে। সহানুভূতির হাওয়াও মোর্চার পালে লাগতে পারে। তাই এখনই মোর্চা প্রধানকে পাকড়াও করা হচ্ছে না। বরং আদালতের নির্দেশে কাজ করছে পুলিশ। উল্টো দিকে, গুরুঙ্গরাও আত্মসমর্পণ করতে পারছেন না। মোর্চার আশঙ্কা, যদি আদালত তাঁদের হেফাজতে নিয়ে নেয়, তা হলে ভোটের মুখে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভূত সমস্যা তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে গুরুঙ্গ আর্থিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব কার হাতে ছাড়বেন বা আদৌ কারও হাতে ছাড়বেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মোর্চার অন্দরে। দলের অবস্থাও তখন হাল ভাঙা নৌকার মতো হতে পারে। সুবাস ঘিসিঙ্গের সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতা প্রায় পাকা। ভোটের আগে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যদি গুরুঙ্গ-সহ মোর্চা নেতৃত্ব জেল বা পুলিশের হেফাজতে থাকেন আর সেই সময় জিএনএলএফ প্রচারের সুযোগ পায়, তা হলে মুশকিল বাড়বে বলেই আশঙ্কা মোর্চার। তাদের এক নেতা তাই জানান, ভোটের মুখে প্রথম সারির নেতারা গ্রেফতার হলে পাহাড়ে সহানুভূতির হাওয়া জোরদার হবে, এটা ঠিক। কিন্তু সেটাই সব নয়। দলের নেতৃত্বের সমস্যা থাকছেই।

এই পরিস্থিতিতে গুরুঙ্গ এ দিন পাল্টা অভিযোগ করেছেন, “আমায় ফেরার বললেই হল! আসলে আমরা বিজেপিকে সমর্থনের পর থেকেই নানা কৌশলে চাপ বাড়ানো হচ্ছে। আমরা তো পাহাড়েই আছি। প্রচার করছি।” পাশাপাশি ঘিসিঙ্গ-তৃণমূল জোট প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “অতীতে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ চালানোর সময় প্রচুর টাকা নয়ছয় করেছেন ঘিসিঙ্গ। সে জন্য তদন্ত এড়াতে রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে চাইছেন।” তখনই প্রশ্ন ওঠে, জিটিএ গঠনের পরে কেন ঘিসিঙ্গের আমলের দুর্নীতি নিয়ে গুরুঙ্গ তদন্ত করাননি? জবাবে ‘যথা সময়ে সব হবে’ বলে দাবি করেছেন তিনি।

গুরুঙ্গকে ফেরার আখ্যা দিয়ে আদালতের নোটিস প্রসঙ্গে এ দিন মুখ খুলেছে পাহাড়ের সব দলই। মদন তামাঙ্গের দল অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের মুখপাত্র প্রতাপ খাতি বলেন, “আমরা তো কবে থেকে বলছি, মদন তামাঙ্গ হত্যায় অভিযুক্তদের সকলকে দ্রুত ধরে মামলার নিষ্পত্তি করা হোক। আদালত নোটিস দিয়েছে। এখন তা হলে সকলকে গ্রেফতার করা হোক। ফেরার অভিযুক্তরা তো পাহাড়েই ঘোরাফেরা করছেন।” জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, বিমল গুরুঙ্গ যে আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে নন, সেটা আশা করা যায় পাহাড়বাসীরা শীঘ্রই বুঝতে পারবেন। তৃণমূলের তরফে দার্জিলিং পাহাড় শাখার আহ্বায়ক তথা মুখপাত্র বিন্নি শর্মাও বলেন, “আইনের চোখে সকলেই সমান।”

এই অবস্থায়, আগামী ১৯ মার্চ মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী এস এস অহলুওয়ালিয়ার দার্জিলিঙে আসার কথা। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “ওই দিন বাগডোগরায় আমাদের সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী পৌঁছলে তাঁকে বরণ করে পাহাড়ে আনা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bimal gurung darjeeling morcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE