Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গ্রামে পা রাখার জমি পেতে জাঠা-পথে কৃষক সিপিএম

এক সময় গ্রামই ছিল বামফ্রন্টের জনসমর্থনের শক্ত ভিত। পরিবর্তনের ঝড়ে গ্রামের সেই দুর্গ তছনছ হয়ে গিয়েছে! ভোটের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গ্রামে দলের কৃষক সভার সদস্যও কমেছে পাল্লা দিয়ে। ছোট সংগঠন নিয়েই এ বার কৃষক সভাকে সামনে রেখে যথাসম্ভব গ্রামে পৌঁছনোর চেষ্টায় নামছে সিপিএম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাড়ে তিন বছরের জমানায় গ্রামবাংলায় সিপিএমের কৃষক সংগঠনের এই ধরনের কর্মসূচি এই প্রথম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩২
Share: Save:

এক সময় গ্রামই ছিল বামফ্রন্টের জনসমর্থনের শক্ত ভিত। পরিবর্তনের ঝড়ে গ্রামের সেই দুর্গ তছনছ হয়ে গিয়েছে! ভোটের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গ্রামে দলের কৃষক সভার সদস্যও কমেছে পাল্লা দিয়ে। ছোট সংগঠন নিয়েই এ বার কৃষক সভাকে সামনে রেখে যথাসম্ভব গ্রামে পৌঁছনোর চেষ্টায় নামছে সিপিএম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাড়ে তিন বছরের জমানায় গ্রামবাংলায় সিপিএমের কৃষক সংগঠনের এই ধরনের কর্মসূচি এই প্রথম।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ দাবি নিয়ে আগামী ১৫ থেকে ১৯ অক্টোবর রাজ্যের সব জেলায় জাঠা করবে কৃষক সভা। জাঠার দাবির মধ্যে এক দিকে যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনের অপরিহার্য বিষয় আছে, তেমনই আছে সারদা-কাণ্ড। তবে দাবি নেহাতই উপলক্ষ। কৃষক সভাকে সামনে রেখে ফের গ্রামে পা রাখার জায়গা খুঁজছে সিপিএম। রাজ্যের মোট ৩৮ হাজার গ্রামের মধ্যে প্রায় ২২ হাজার গ্রামে জাঠা নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সমস্ত গ্রামে এখনও বামেদের কর্মসূচি নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই মেনেই এই সিদ্ধান্ত।

কয়েক বছরের নানা ভোটের মতো সাম্প্রতিক কালে লোকসভা ভোট এবং সদ্য দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও বামেদের রক্তক্ষরণ অব্যাহত থেকেছে। রাজ্য তথা শাসক দলের নানা কাজকর্মে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার সুর জোরালো হলেও তার কোনও ফায়দা বামেরা এখনও নিতে পারেনি। সেই সঙ্গেই দেখা গিয়েছে, শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে বিজেপি তৃণমূলকে খানিকটা বেগ দিচ্ছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে ভোট ধরে রাখছে তৃণমূল। বাম জমানায় ঠিক যে জায়গা থেকেই সুবিধা পেত বামফ্রন্ট। যে হেতু আর বছর দেড়েকের মধ্যে রাজ্যে বিধানসভা ভোট, তাই ভাঙা সংগঠন নিয়েও গ্রামে-গঞ্জে মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টাই সিপিএমের কৃষক সভার এ বারের জাঠার উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি, তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে শনিবার সল্টলেকে একটি কনভেনশন করতে চলেছে সিপিএমের সংশ্লিষ্ট সাব-কমিটি।

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের সময় থেকেই সিপিএমের কৃষক সভার সদস্য সংখ্যা পড়তির দিকে। যে সংগঠনের সদস্য ছিল দেড় কোটির বেশি, সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৮ লক্ষে। অর্থাৎ সদস্য কমে গিয়েছে প্রায় আধ কোটি! কৃষক সভার নেতৃত্বের যুক্তি, তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং গা-জোয়ারির কারণেই অনেকে সদস্যপদ নবীকরণ করাতে পারেননি। যদিও সদস্যদের একাংশের নিষ্ক্রিয়তার সমস্যায় উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁরা সংগঠনের অন্দরে নিয়মিতই আলোচনা চালাচ্ছেন। আপাতত তাঁরা ঠিক করেছেন, ছোট আকারে হলেও জাঠা নিয়ে যেতে হবে যথাসম্ভব বেশি জায়গায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্তত ৫০ জনকে নিয়ে হলেও গ্রামগুলিতে জাঠা করতে হবে। তাঁদের জীবনের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতা চালানো হবে। প্রয়োজনে গঞ্জ এলাকায় রাত কাটিয়ে পর দিন আবার অন্য গ্রামে যাবেন জাঠার অংশগ্রহণকারীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা সিদ্ধান্তে অতিষ্ঠ মানুষ দেখতে চান, আমরা তাঁদের পাশে আছি। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে কৃষক সভা সেই বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

left front jatha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE