Advertisement
০৫ মে ২০২৪

চাপে কৃষ্ণেন্দু, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত

শেষ অবধি চাপের মুখে পিছু হটল পুলিশ। বিপাকে পড়ে মুখে কুলুপ দাপুটে নেতাদেরও। মালদহের ইংরেজবাজারে বিধবা মহিলার আনা ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের ঘটনায় নয়া মোড়। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরেই ছবিটা বদলে যায়।

কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী

কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

শেষ অবধি চাপের মুখে পিছু হটল পুলিশ। বিপাকে পড়ে মুখে কুলুপ দাপুটে নেতাদেরও। মালদহের ইংরেজবাজারে বিধবা মহিলার আনা ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের ঘটনায় নয়া মোড়।

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরেই ছবিটা বদলে যায়। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি জাভেদ শামিমের নির্দেশে ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারকে দিয়ে পুকুরিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করালেন জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ এই প্রসূনবাবুই আগের দিন অবধি মহিলার অভিযোগকে আমল দেননি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা মালদহের তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী দাবি করেছিলেন, অভিযোগকারিণীর সহমতেই সহবাস হয়েছিল, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মন্ত্রী অবশ্য এ দিন আর মুখ খুলতে চাননি। বরং মুখ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে তাঁর মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর।

ইংরেজবাজারে পুলিশের কাজে অসঙ্গতির অভিযোগ করে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল আগেই। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ওই মামলায় পুলিশের কাজে নানা ত্রুটি ও অসঙ্গতির অভিযোগ আনেন। ওই মহিলার বাবাকে মারধর করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “পুলিশ কি নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে?” রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অভ্রতোষ মজুমদারকে তিনি নির্দেশ দেন, মালদহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা এক ঘণ্টার মধ্যে জানাতে।

বেলা তিনটে নাগাদ জিপি আদালতে দাবি করেন, ওই ঘটনায় রিন্টু শেখ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণ হয়নি। জিপি আদালতে আরও জানান, ওই ঘটনায় অভিযুক্তের স্ত্রীও পাল্টা একটি অভিযোগ করেছেন। তারও তদন্ত চলছে। প্রধান বিচারপতি তখন নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন, ওই বিধবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে। তিনি আরও বলেন, ওই মহিলা যদি মনে করেন, তিনি নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ করবেন তা হলে ইংরেজবাজার থানার ওসি অথবা মালদহের পুলিশ সুপারের কাছে তা দায়ের করতে পারবেন। দু’সপ্তাহ পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করেছেন প্রধান বিচারপতি।

বিষয়টি প্রধান বিচারপতির এজলাসে গুরুত্ব পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। কেন ওই ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ নেওয়া হয়নি, আইজি-র নির্দেশে তা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মালদহের পুলিশ সুপার বলেন, “বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। আমরা সব অভিযোগই গুরুত্ব দিয়ে দেখে পদক্ষেপ করছি।” তবে উত্তরবঙ্গের এক পুলিশ কর্তা জানান, ওই ঘটনায় পুলিশের তরফে গাফিলতি মিললে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের পাশাপাশি এ দিন চাপে পড়েন নেতা-মন্ত্রীরাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহের দুই মন্ত্রী, কৃষ্ণেন্দু এবং সাবিত্রী মিত্রর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিধানসভায় এ দিন তাঁর কক্ষে দলের দুই শীর্ষ নেতা মুকুল রায় ও সুব্রত বক্সীর উপস্থিতিতে মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা। সেই বৈঠকে তিনি সাবিত্রীদেবী ও কৃষ্ণেন্দুবাবুর কড়া সমালোচনা করেন বলে জানা গিয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের একাংশের অনুমান, ওই দুই মন্ত্রীর বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। দলের এক নেতা সাবিত্রীকে পদত্যাগের পরামর্শও দিয়েছেন বলে শোনা গিয়েছে। কৃষ্ণেন্দুবাবুকে ফোন করলে তাঁর সহকর্মী জানান, তিনি ব্যস্ত আছেন। সাবিত্রী বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।”

প্রধান বিচারপতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি, পুলিশ সুপার এবং কৃষ্ণেন্দুবাবুর উপর চাপ বাড়াচ্ছে দলের নিচুস্তরও। মালদহের মহিলা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, খোদ মন্ত্রী ওই ভাবে অভিযোগকারিণীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলায় জেলায় দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে। কেন কৃষ্ণেন্দুবাবু তদন্ত শুরুর সময়েই ওই ধরনের মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে দলীয় স্তরে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মুখ খুলছেন সাধারণ মানুষও। গ্রামেরই এক ব্যবসায়ী বলেন, “গ্রামে নানা সময়ে নানা কাণ্ড হয়। সেগুলি কি মন্ত্রী খোঁজ রাখেন? কিন্তু এই ঘটনাটি ভাল করে খোঁজ রেখেছেন। কারণ রিন্টু মন্ত্রীর দলের কর্মী।” তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হুসেন অবশ্য এ নিয়ে বিশদ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা, কোনও ঘটনা দল সমর্থন করে না। এর বেশি কোনও মন্তব্য করব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

maldah rape case krishnendu narayan chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE