Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জট খুলতে জোর তল্লাশি দু’জনের সন্ধানে

দুই মহিলাকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে আরও এক ব্যক্তিকে। কিন্তু বর্ধমানে জেহাদি যোগে হওয়া বিস্ফোরণ-কাণ্ডের শিকড়ে পৌঁছতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখন খুঁজছেন দু’জনকে। এক জন কওসর, যে ব্যক্তি বিস্ফোরণের আগের দু’দিন পর পর খাগড়াগড়ের জঙ্গি-ডেরা থেকে বিস্ফোরক মোটর বাইকে করে নিয়ে গিয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। খাগড়াগড়ের ওই বাড়ির দোতলায় ভাড়াটে হিসেবে প্রথমে কওসরই থাকতে শুরু করে।

সিআইডি-র আঁকা কওসরের স্কেচ। (ডান দিকে) আবুল কালামের ভোটার কার্ডের ছবি।  নিজস্ব চিত্র

সিআইডি-র আঁকা কওসরের স্কেচ। (ডান দিকে) আবুল কালামের ভোটার কার্ডের ছবি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

দুই মহিলাকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে আরও এক ব্যক্তিকে। কিন্তু বর্ধমানে জেহাদি যোগে হওয়া বিস্ফোরণ-কাণ্ডের শিকড়ে পৌঁছতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখন খুঁজছেন দু’জনকে।

এক জন কওসর, যে ব্যক্তি বিস্ফোরণের আগের দু’দিন পর পর খাগড়াগড়ের জঙ্গি-ডেরা থেকে বিস্ফোরক মোটর বাইকে করে নিয়ে গিয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। খাগড়াগড়ের ওই বাড়ির দোতলায় ভাড়াটে হিসেবে প্রথমে কওসরই থাকতে শুরু করে। কওসরের পাশাপাশি পুলিশ খুঁজছে আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তিকে, যে পেশায় মাদ্রাসা-শিক্ষক। রবিবার রাতে পূর্বস্থলী থেকে ধৃত হাসেম মোল্লা এবং তার আগে এই কাণ্ডে ধৃত দুই মহিলা রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবির কাছ থেকে তার নাম জানা গিয়েছে।

পুলিশি সূত্রের খবর, আবুল কালামের বাড়ি মঙ্গলকোটের কুলসুনো গ্রামে। পুলিশ জানায়, স্থানীয় মাথরুন-নবীনচন্দ্র বিদ্যায়তনে পড়াশোনা করেছে সে। উচ্চ মাধ্যমিক (এলাকাবাসীর একাংশের দাবি মাধ্যমিক) পাশ করার পরে মঙ্গলকোটেরই একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে কালাম। ২০০৫-০৬ সাল থেকে সেখানে পড়াত সে। সেখানেই আলিমা বিবির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বহরমপুর থেকে ওই মাদ্রাসায় পড়তে এসেছিল আলিমা। যে দলটি নাশকতার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে, সেই কওসর, শাকিল, হাকিমদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওই মাদ্রাসায়।

যদিও আবুল কালামের বাড়ির লোকজনের দাবি, ভাইয়ের সঙ্গে গণ্ডগোলের জেরে বেশ কয়েক বছর আগে বাড়ি ছেড়েছে আবুল। তার পরে তার সঙ্গে পরিবারের কোনও যোগাযোগ নেই। পুলিশ অবশ্য জানায়, কালাম বাড়িতেই থাকত। রবিবার রাতেই কালামের বাড়িতে তল্লাশি চালায় মঙ্গলকোট থানার পুলিশ। যদিও কালামকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। কালামের ভোটার পরিচয়পত্র এবং কিছু নথিপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এলাকাবাসীরও একাংশের দাবি, কালাম এলাকাতেই থাকত। বিস্ফোরণের ঘটনার পরে গত শুক্রবারও তাকে এলাকায় দেখা গিয়েছে। তার পরেই সে পালিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান।

তবে পুলিশ অন্য যার সন্ধানে চার দিকে তল্লাশি চালাচ্ছে, সেই কওসর আদতে বাংলাদেশের নাগরিক বলে তদন্তকারীদের অনুমান। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সে-ই প্রথম খাগড়াগড়ের ওই বাড়ির দোতলা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। তার দিন কয়েক পরে সেখানে গিয়ে ওঠে শাকিল। পরে কওসর আর ওই বাড়িতে থাকেনি। কিন্তু সে কোথায় থাকত, কোথা থেকেই বা সে নম্বর প্লেটহীন মোটর সাইকেলে করে ওই জঙ্গি ডেরায় গিয়ে মালপত্র নিয়ে আবার চলে যেত, সেটা জানাই এখন গোয়েন্দাদের লক্ষ্য।

৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর পর পর দু’দিন সে খাগড়াগড়ের ওই বাড়িতে গিয়েছিল। পুলিশ জেনেছে, প্রথম দিন দুপুরে একটি লাল রঙের নম্বরহীন মোটরবাইকে চড়ে আসে সে। খানিক পরে একটি বাজারের থলিতে জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যায়। বিস্ফোরণের আগের দুপরেও একটি গাড়িতে করে এসেছিল। বেশ কিছু ক্ষণ থাকার পরে সে চলে যায়। এলাকার লোকজন জানান, পুরুষ সদস্যেরা বাড়িতে না থাকলে বাড়ির দোতলা থেকে মহিলারা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কওসরের জন্য দড়িতে বেঁধে মালপত্র নামিয়ে দিতেন। কওসর ও কালামের পাশাপাশি রফিকুল নামে আর এক ব্যক্তিকে পুলিশ খুঁজছে।

তবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে নিহত স্বপন মণ্ডল ওরফে সুভানের বাড়ি কোথায়, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। স্বপনই বোমা বানানোর মূল পাণ্ডা বলে এসপি-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় বর্ধমান পুলিশের তরফে ফোনে পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরবাড় গ্রামের বাসিন্দা গোপাল মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পেশায় কৃষক গোপালবাবু বলেন, “পুলিশ জানতে চায় আমার ছেলের নাম সুভান কি না। আমি বলি, আমার তিন ছেলের মধ্যে কারও নামই সুভান নয়।” তবে গোপালবাবু জানান, তাঁর মেজ ছেলে গৌতম দীর্ঘ ১০ বছর কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকে। তাঁর কথায়, “মাস ছয়েক আগে একবার সে গ্রামে ফিরেছিল। তার পর আর যোগাযোগ নেই।” নিহত সুভানের ছবি এ দিন গোপালবাবুর পরিচিত এক ব্যক্তির ই-মেল আইডি-তে পাঠানো হয়। তবে গোপালবাবুর দাবি, সে ছবি তাঁর ছেলের নয়। বর্ধমান পুলিশের বক্তব্য, একটি সূত্রে খবর পেয়ে উত্তরবাড়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তবে তেমন কোনও তথ্য মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE