Advertisement
০১ মে ২০২৪
সারদা-তদন্ত

টাকার চিরকুট কোথায়, প্রশ্ন সিবিআইয়ের

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে কারা সব থেকে লাভবান হয়েছে এবং সেই বিপুল টাকা কোথায় গেল, প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আর তাদেরই নির্দেশে তদন্তে নামা সিবিআই প্রশ্ন তুলেছে, যে-সব ‘ভাউচার’ বা চিরকুট লিখে টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেই সব চিরকুট গেল কোথায়?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে কারা সব থেকে লাভবান হয়েছে এবং সেই বিপুল টাকা কোথায় গেল, প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আর তাদেরই নির্দেশে তদন্তে নামা সিবিআই প্রশ্ন তুলেছে, যে-সব ‘ভাউচার’ বা চিরকুট লিখে টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেই সব চিরকুট গেল কোথায়?

অত্যন্ত প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিকে ভাউচারে লিখে টাকা দিয়েছিলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। সেই সব ভাউচার রাখা ছিল সারদার সল্টলেকের দফতরে। সারদা-প্রধান এবং তাঁর সংস্থার পদস্থ কিছু কর্মীকে জেরা করে সেই সব চিরকুটের কথা জানতে পারলেও সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা সেগুলো খুঁজে পাচ্ছেন না। চিরকুটগুলো কোথায় গেল, তার সুলুকসন্ধান পেতে তারা রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলে সিবিআই শুক্রবার জানিয়েছে।

সিবিআই সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার সারদার দুই হিসেবরক্ষককে জেরা করে জানা গিয়েছে, সুদীপ্ত আমানতকারীদের জমা রাখা টাকা বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, তার হিসেব সংস্থার কম্পিউটারে তুলে রাখা হয়নি। ওই টাকা দেওয়ার কথা কয়েকটি ভাউচারে লিখে রাখা হয়েছিল বলে সুদীপ্ত এবং তাঁর কর্মীরা সিবিআই-কে জানান।

ভাউচারগুলি সল্টলেকে মিডল্যান্ড পার্কে সারদার মূল অফিসে রাখা ছিল, হিসেবরক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে সিবিআই। সুদীপ্তের গ্রেফতারির পরে ওই অফিস থেকে অনেক নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল সল্টলেক পুলিশ। সিবিআই সূত্রের দাবি, কয়েকটি নথিতে ওই ভাউচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সল্টলেক পুলিশের কাছ থেকে তারা যে-সব নথি পেয়েছে, তার মধ্যে ওই সব ভাউচার নেই। তদন্তের প্রয়োজনে ভাউচারগুলি পাওয়া জরুরি বলে জানান তদন্তকারীরা। কারণ, ওই সব ভাউচার পেলে এই কেলেঙ্কারিতে লাভবানদের খোঁজ মিলবে। আর সব চেয়ে লাভবান ব্যক্তিদের হদিসই চেয়েছে শীর্ষ আদালত।

ওই সব চিরকুটের ব্যাপারে কী বলছে রাজ্য পুলিশ?

বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ শুক্রবার রাতে বলেন, “সারদা মামলায় যে-সব নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, সবই আমরা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছি।”

তা হলে কোথায় গেল চিরকুট?

এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বিধাননগর পুলিশ।

সিবিআই তদন্ত শুরু করার আগেই সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত, তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য পুলিশ সারদা কেলেঙ্কারির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট করে ফেলেছে। সিবিআইয়ের খবর, কুণাল জেরায় তাদের তদন্তকারীদেরও এ কথা জানিয়েছেন। কুণালের বক্তব্যের সারবত্তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই জন্যই সারদার এক ম্যানেজার এবং কিছু কর্মীকে জেরা করছে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।

সিবিআই নিয়ে ইতিমধ্যে কুণালের সুরে কিছুটা বদল ধরা পড়েছে। সিবিআই তদন্তে সারদার তছরুপ রহস্য উদ্ঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন ওই তৃণমূল সাংসদ। কিন্তু এ দিন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। সল্টলেকে সিবিআইয়ের দফতর থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় কুণাল বলেন, “কোনও দিন হয়তো শুনব, সুদীপ্ত সেন বলে কেউ নেই! কুণাল ঘোষই সুদীপ্ত সেন। এই অপেক্ষায় আছি। আমি বিচ্ছিরি অবস্থার মধ্যে পড়েছি। আমি নির্দোষ।”

সিবিআই অবশ্য সারদার কর্মীদের কাছ থেকে টাকার খতিয়ান উদ্ধার এবং সেই সূত্রে রহস্যভেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন সারদায় কাজ করার ফলে ম্যানেজার এবং পুরনো কর্মীরা সংস্থার ব্যবসার ঠিকুজি-কোষ্ঠী জানেন। টাকা কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় গিয়েছে, কারা এই ব্যবসা থেকে লাভবান হয়েছেন সবই জানেন তাঁরা। তদন্তকারীদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই কর্মীরা এ ব্যাপারে গোয়েন্দাদের নির্দিষ্ট তথ্যও দিয়েছেন। সারদা কেলেঙ্কারিতে রাজ্য পুলিশও বারবার কথা বলেছে সারদার কর্মীদের সঙ্গে। তা হলে রাজ্য পুলিশ এত দিন সেই সব তথ্য পায়নি কেন, প্রশ্ন তুলেছেন সিবিআই অফিসারেরা।

এই মামলার অন্য এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দাবি, তাদের অফিসারেরাও সারদা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সেই সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সুদীপ্তের ছেলে শুভজিৎ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিয়ালিকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। সিবিআই সূত্রের খবর, সংবাদমাধ্যমের ব্যবসা শুরু করার পরেই সারদার অর্থ লগ্নি ব্যবসায় ভরাডুবি শুরু হয় বলে ওই কর্মীরা জানান। সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় কত টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল, সেই ব্যাপারে সংস্থার এক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কিছু তথ্য পেয়েছে সিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা জেনেছেন, লগ্নি ব্যবসায় সারদা বহু স্থাবর সম্পত্তি কিনেছিল। জমি কেনা হয়েছিল বিভিন্ন জেলায়। সেই সব জমির বিষয়ে সব রকম লেনদেনের কাজে জড়িত ছিলেন অন্য এক ম্যানেজার। জমি-বাড়ি কেনাবেচার যাবতীয় তথ্য তাঁর জানা ছিল। সেই সূত্রেই সারদা কোথায় কোথায় সম্পত্তি কিনেছিল, তার অনেক তথ্য মিলেছে বলে সিবিআই-কর্তাদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE