Advertisement
E-Paper

‘ডক্টর চট্টোপাধ্যায়’ ছিলেন তাঁর অন্তরের ভরসা

শরীর উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে। হার্টের নানা সমস্যা। অবিলম্বে কার্ডিওলজিস্ট দেখানো জরুরি। কিন্তু রোগিণী নিজে কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। এক সন্ধ্যায় ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র তাঁর হাত দুটো ধরে বলেছিলেন, “ম্যাডাম, আমি তো আপনার কোনও ক্ষতি করিনি। তা হলে আমাকে বিপদে ফেলছেন কেন? কার্ডিওলজিস্ট না দেখালে আপনার শরীর আরও খারাপ হবে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৮
সুচিত্রা সেনের জন্মদিনে স্মৃতিচারণে বিশিষ্টরা। রবিবার।

সুচিত্রা সেনের জন্মদিনে স্মৃতিচারণে বিশিষ্টরা। রবিবার।

শরীর উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে। হার্টের নানা সমস্যা। অবিলম্বে কার্ডিওলজিস্ট দেখানো জরুরি। কিন্তু রোগিণী নিজে কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। এক সন্ধ্যায় ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র তাঁর হাত দুটো ধরে বলেছিলেন, “ম্যাডাম, আমি তো আপনার কোনও ক্ষতি করিনি। তা হলে আমাকে বিপদে ফেলছেন কেন? কার্ডিওলজিস্ট না দেখালে আপনার শরীর আরও খারাপ হবে।” রোগিণী হাসলেন। বললেন, “কেন, আমি তো ডক্টর চ্যাটার্জিকেই দেখাচ্ছি। আপনিই তো আমাকে রেফার করেছেন!”

শুনে আকাশ থেকে পড়লেন সুব্রত মৈত্র। বললেন, “আমি তো কোনও চ্যাটার্জির নাম আপনার কাছে বলিনি।” এ বার রোগিণীর মুখে রহস্যের হাসি। “ডক্টর গদাধর চট্টোপাধ্যায়কে আপনি রেফার করেননি? স্বয়ং উনি আমার দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনারা এর চেয়ে বেশি আমার জন্য আর কী করবেন?”

রবিবার, ৬ এপ্রিল সুচিত্রা সেনের জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করে এক অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন চিকিৎসক এবং পারিবারিক বন্ধুরা। সুচিত্রা সেনের আধ্যাত্মিক দিক নিয়ে নানা আলোচনা এর আগে হয়েছে। কিন্তু রামকৃষ্ণ গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর ‘ম্যাডাম’-এর অসীম নির্ভরতার কথা বলতে গিয়ে ওই ঘটনাটি সবিস্তারে জানালেন সুব্রতবাবু। মধ্যরাতে বেলুড় মঠে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা কী ভাবে সুচিত্রা সেন নিজেই তাঁদের কাছে গল্প করেছেন, উঠল সেই প্রসঙ্গও।

অনুষ্ঠানে ছিলেন চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়, সমরজিৎ নস্কর, বেলভিউ নার্সিংহোমের সিইও প্রদীপ টন্ডন, সুচিত্রা সেনের পারিবারিক বন্ধু শ্যামাপ্রসাদ রায়চৌধুরী, চৈতালী মৈত্র প্রমুখ। প্রথম সাক্ষাতের কথা জানালেন সকলেই। প্রাথমিক গাম্ভীর্যের খোলস ছেড়ে কী ভাবে আদ্যোপান্ত আন্তরিক একটা মানুষ তাঁদের কাছে ধরা দিয়েছিলেন, উঠল সে কথাও। অসুস্থতা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান ছিল না-পসন্দ। ডাক্তাররা বাড়িতে গেলে পাঁচ মিনিট অসুখ সংক্রান্ত আলোচনা। তার পরেই সাহিত্য, গান, রাজনীতি নিয়ে দেদার আড্ডা।

সুচিত্রা সেনের জন্মদিনে নাতনি রাইমার শ্রদ্ধার্ঘ্য। রবিবার নন্দনে।

অনেকেই বলেন, চেহারা খারাপ হয়ে গিয়েছিল মহানায়িকার। তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। শেষ ছ’বছর যে চিকিৎসকেরা তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা একবাক্যে দাবি করলেন, এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। চেহারায় গ্ল্যামারের কোনও ঘাটতি ছিল না। ন্যূনতম মেকআপও করতেন না। এমন কী চুলে কস্মিনকালেও রং করেননি।

সুব্রতবাবু জানালেন, ছেড়ে আসা ছবির জগৎ নিয়ে কোনও আকর্ষণ অবশিষ্ট ছিল না মহানায়িকার। বরং সে নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁর অদ্ভুত নিস্পৃহতার কাছে ধাক্কা খেয়ে ফিরতে হত। তবু সামান্য যা কিছু কথা হয়েছে তারই মধ্যে তিনি, ছায়াদেবীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা বলতেন। বলতেন, তাঁর অভিনীত নানা চরিত্র তুমুল জনপ্রিয়তা পেলেও তিনি নিজে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন বিষ্ণু্প্রিয়ার চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে। আর পছন্দের গান ছিল, ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু’।

চিকিৎসক, পারিবারিক বন্ধুরা সকলেই জানিয়েছেন, নিজেকে গুটিয়ে রাখতেই হয়তো পছন্দ করতেন মহানায়িকা, কিন্তু গুটিয়ে রাখতে গিয়ে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন না। কারও সম্পর্কে কটু কথাও বলতেন না। কোনও কিছু অপছন্দ হলে শুধু চুপ করে যেতেন। আর চোখের দৃষ্টিতেই বুঝিয়ে দিতেন তাঁর অপছন্দের কথা। প্রতিবার হাসপাতালবাসের সময়ে তাঁকে ঘিরে মিডিয়ার তৎপরতা, মানুষের কৌতূহল সম্পর্কে তাঁর মনোভাবও চিকিৎসকেরা টের পেতেন চোখের ওই দৃষ্টিতেই!

সুচিত্রার কথা বলার ভঙ্গিতেও ছিল স্বাতন্ত্র্য। চিকিৎসক সমরজিৎ নস্কর জানালেন, শেষবার হাসপাতালবাসের সময়ে যখন জেনারেল কেবিন থেকে তাঁকে আইটিইউ-তে পাঠানো হচ্ছে, তখন তিনি বলেছিলেন, “এটাই কি নাটকের শেষ অঙ্ক?”

—নিজস্ব চিত্র।

suchitra sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy