Advertisement
E-Paper

তৃতীয় জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির ছক ছিল ডোমকলে

এক, মুর্শিদাবাদের লালগোলার মকিমনগর মাদ্রাসা। দুই, বর্ধমানের মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসা। কিন্তু তিন নম্বর? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি মাদ্রাসায় জেহাদি শিক্ষার পাঠ দেওয়া হত বলে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। মন্ত্রী হরিভাই পরাঠিভাই চৌধুরি এই তথ্য মঙ্গলবার লোকসভায় জানিয়েছেন। তবে মাদ্রাসাগুলির নাম উল্লেখ করেননি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
ঘোড়ামারার সেই মাদ্রাসা।—ফাইল চিত্র।

ঘোড়ামারার সেই মাদ্রাসা।—ফাইল চিত্র।

এক, মুর্শিদাবাদের লালগোলার মকিমনগর মাদ্রাসা। দুই, বর্ধমানের মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসা। কিন্তু তিন নম্বর?

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি মাদ্রাসায় জেহাদি শিক্ষার পাঠ দেওয়া হত বলে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। মন্ত্রী হরিভাই পরাঠিভাই চৌধুরি এই তথ্য মঙ্গলবার লোকসভায় জানিয়েছেন। তবে মাদ্রাসাগুলির নাম উল্লেখ করেননি।

খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্তে নেমে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) কিছু দিনের মধ্যেই দাবি করে, মকিমনগর মাদ্রাসা ও শিমুলিয়া মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ, এমনকী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের তালিমও দেওয়া হত। পুরুষদের সঙ্গে নারীদেরও ছিল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী জেহাদি প্রশিক্ষণের ঘাঁটি সেই তিন নম্বর মাদ্রাসা কোনটি?

দু’মাস ধরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্ত করার পর এনআইএ-র দাবি, মুর্শিদাবাদেরই ডোমকলের ঘোড়ামারা মাদ্রাসা ছিল সেই তৃতীয় ঘাঁটি। এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, “আমরা যে সব নথি পেয়েছি এবং ধৃতদের জেরা করে যে সব তথ্য মিলেছে, তাতে পরিষ্কার, ঘোড়ামারা মাদ্রাসায় জেহাদি শিক্ষার পাঠ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হওয়ার কয়েক মাস আগেই।” তবে ওই অফিসারের কথায়, “ঘোড়ামারা মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার শেখানো হয়নি। তবে শীঘ্রই শুরু হওয়ার কথা ছিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ না হলে এতদিনে হয়তো শুরু হয়েও যেত।”

তদন্তকারীরা জানান, পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে বসা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গিরা প্রথমে একটি জেলার একটি মাদ্রাসাকে বেছে নিত। তার পর সেখানে প্রথমে জেহাদি শিক্ষার পাঠ, মগজধোলাই ও শেষমেশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরি শেখানো হত। ওই ডেরাকে কেন্দ্র করেই জেলার অন্যান্য অংশে জাল বিছোনো হত। যেমনটা প্রথমে মকিমনগর ও পরে শিমুলিয়া মাদ্রাসায় হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁরা জেনেছেন, কোনও মাদ্রাসাকে বেছে নেওয়ার সময়ে তার ভৌগোলিক অবস্থানের বিষয়টি মাথায় রাখা হত। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “জঙ্গিরা এমন মাদ্রাসা বেছে নিত, যাতে সংশ্লিষ্ট জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী অন্য জেলার কার্যকলাপ সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।” ওই অফিসার জানান, অবস্থানগত সুবিধের ফলে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসা থেকে বর্ধমান ছাড়াও উত্তরে মুর্শিদাবাদ, পূর্বে নদিয়া ও পশ্চিমে বীরভূম জেলায় ছড়িয়ে থাকা জঙ্গি মডিউল বা গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং আইইডি তৈরির পর সে সব পাচারের সুবিধে ছিল।

একই ভাবে ঘোড়ামারা মাদ্রাসার অবস্থানগত সুবিধে নজর কেড়েছিল জেএমবি জঙ্গিদের। মুর্শিদাবাদ জেলার একেবারে শেষ প্রান্তে জলঙ্গি নদীর পাড়ে ঘোড়ামারা গ্রাম। সেখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় পড়শি জেলা নদিয়ায়। গ্রাম থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত বড়জোর সাত কিলোমিটার দূরে।

গোয়েন্দারা জানান, বছর দুয়েক আগে গ্রামের মধ্যেই একটি আম-কাঁঠালের বাগান ঘেরা জমিতে তৈরি হয় বেসরকারি এই ঘোড়ামারা মাদ্রাসাটি। অলিগলি চেনা না থাকলে আচমকা ওই গ্রামে গিয়ে মাদ্রাসার পর্যন্ত পৌঁছনোই কঠিন। সেখানে বেশ কয়েকজন আবাসিক পড়ুয়াও থাকত। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকেই ওই মাদ্রাসাটি বন্ধ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঠিক পরেই মাদ্রাসার জিনিসপত্র থেকে শুরু করে আবাসিকদের পোশাক সবই রাতের অন্ধকারে সরিয়ে নেওয়া হয়। মাদ্রাসার সামনের একটি খেলার মাঠ রাতারাতি চষে দেওয়া হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনুমান, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ লোপাট করে দিতেই এমনটা করা হয়েছে।

অবশ্য গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, ওই মাদ্রাসায় যে এমন কাণ্ডকারখানা চলছে তা তাঁরা জানতেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “আমরা জানতাম, ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া হয়। আমাদের গ্রামের ছেলেরাও সেখানে পড়তে যেত। কিন্তু তার বাইরে কিছু হত কি না তা আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।”

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশ ও অসম থেকে তো বটেই, মকিমনগর ও শিমুলিয়া থেকেও লোকজন ওই মাদ্রাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত। ঘোড়ামারা মাদ্রাসায় মোট চারটি ঘর। তার মধ্যে দু’টি ঘর পাকা। অন্য দু’টি পাকা করার কাজও চলছিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে যে বাংলাদেশি নাগরিক ও সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গি-চাঁই নিহত হয়, সেই শাকিল আহমেদ ঘোড়ামারা মাদ্রাসার পিছনে এক ফালি জমিও কিনেছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি।

জমি কেনা-সহ ঘোড়ামারায় যাবতীয় যোগাযোগের ব্যাপারে শাকিলের জন্য সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালির বাসিন্দা জহিরুল শেখ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণেরর পর থেকে যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে এনআইএ। জহিরুলের বাড়ি থেকেও গোয়েন্দারা ঘোড়ামারা মাদ্রাসার নাম লেখা কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করেছেন। আবার ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর জামাই খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকেই পলাতক। গোয়েন্দারা তাকেও খুঁজছেন।

khagragarh cage domkal madrasah terrorist makimgarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy