বিভিন্ন মামলার তদন্তে গয়ংগচ্ছ ভাব এবং দায়সারা রিপোর্ট পেশের জন্য পুলিশকে লাগাতার তিরস্কার করে চলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তারই মধ্যে এ বার দায়সারা ভাবে উত্তরপত্র পরীক্ষার জন্য কড়া ভাষায় শিক্ষকদের সমালোচনা করল তারা। বঙ্গবাসী কলেজের এক ছাত্রীর উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়নের নম্বর দেখে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি অশোক দাস অধিকারীর মন্তব্য, অনেক পরীক্ষকই দায়সারা ভাবে উত্তরপত্র পরীক্ষা করেন। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন থাকা চলবে না। উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিক্ষকদের সতর্ক হতে হবে।
বঙ্গবাসী কলেজের মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মৌমিতা ঘোষ পার্ট ওয়ান (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম পত্রে ৩৫ পান। কিন্তু তিনি ওই নম্বরে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সুবিচার চেয়ে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট তাঁর উত্তরপত্র দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়। দ্বিতীয় পরীক্ষক মৌমিতার উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়নের পরে বুধবার সেই নম্বর বিচারপতির কাছে পেশ করা হয়। দেখা যায়, দ্বিতীয় পরীক্ষকের হাতে ওই ছাত্রী ৩০ নম্বর পেয়েছেন। সেই অনুযায়ী ছাত্রীটিকে সংশোধিত মার্কশিটও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু দ্বিতীয় বার খাতা দেখার পদ্ধতি নিয়ে বিচারপতি মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাঁর মন্তব্য, দ্বিতীয় পরীক্ষক খাতা যাচাই না-করেই ওই ছাত্রীর নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় বার খাতা না-দেখেই হেলাফেলা করে কিছু একটা নম্বর দিয়ে দায় সেরে ফেলা হয়েছে। বিচারপতি বলেন, এই ভাবে উত্তরপত্র দেখলে জন্য আখেরে ছাত্রছাত্রীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। হাইকোর্ট সেটা বরদাস্ত করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষকদের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। তাঁরা যে-রকম দায়সারা ভাবে খাতা দেখেন, পড়ুয়াদের স্বার্থে অবিলম্বে সেটা বন্ধ হওয়া দরকার।
ইদানীং অনেক পরীক্ষাতেই শিক্ষকদের দেওয়া নম্বরে সন্তুষ্ট হতে না-পেরে ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। বহু ক্ষেত্রে বিচারপতিরা উত্তরপত্র আনিয়ে নিজেরাই নম্বর দেওয়ার পদ্ধতি দেখে নিচ্ছেন। তবে তাঁরা নির্দেশ দেওয়ার পরেও দ্বিতীয় দফায় খাতা দেখার ক্ষেত্রে এ-হেন উদাসীনতা এবং তার জন্য আদালতের ক্ষোভ প্রকাশের নজির বিশেষ নেই। হাইকোর্টের নির্দেশ, মৌমিতার খাতার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পরীক্ষকের নম্বর গ্রাহ্য হবে না। প্রথম বারের ৩৫ নম্বর-সহ ওই ছাত্রীকে নতুন মার্কশিট দেওয়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, পরীক্ষকদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তাঁরা যে-বেতন পান, তা আসে ছাত্রছাত্রী এবং জনসাধারণের কাছ থেকে। তাই পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার নেই তাঁদের। পরীক্ষকদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy