Advertisement
১১ মে ২০২৪

দলকে বাঁচান, সনিয়ার কাছে দরবার প্রদীপদের

দল চালানোর পদ্ধতি নিয়ে বিক্ষোভ ছিলই। বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে দলের ভোট দু’শতাংশে নেমে আসার পরে এ বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে দল বেঁধে সরাসরি সনিয়া গাঁধীর দ্বারস্থ হলেন সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, দীপা দাশমুন্সি ও আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

দল চালানোর পদ্ধতি নিয়ে বিক্ষোভ ছিলই। বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে দলের ভোট দু’শতাংশে নেমে আসার পরে এ বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে দল বেঁধে সরাসরি সনিয়া গাঁধীর দ্বারস্থ হলেন সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, দীপা দাশমুন্সি ও আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী।

কংগ্রেস সভানেত্রীর কাছে রাজ্যের পাঁচ নেতা-নেত্রীর বক্তব্য, দল চালাতে ডাহা ফেল করছেন অধীর! একে তো দলের সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারছেন না। তার উপরে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত অসন্তোষ থেকেও রাজনৈতিক ফসল তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে কংগ্রেস। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টে মামলার জেরে মান্নান সিবিআই তদন্ত আদায় করে আনতে সফল হলেও তার রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে চলে যাচ্ছে বিজেপি বা ক্ষেত্রবিশেষে বামেরা! এর আগে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ অধীরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। রাহুল কোর কমিটি গড়ে সম্মিলিত ভাবে দল চালানোর পরামর্শ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। কিন্তু উপনির্বাচনে দল একেবারে ধূলিসাৎ হওয়ার পরে এ বার সনিয়ার শরণাপন্ন হয়েছেন তাঁরা। দলীয় সূত্রের খবর, সভানেত্রীর কাছে সোমেনবাবু প্রস্তাব দিয়েছেন, দীপা বা ডালুবাবুর মধ্যে এক জনকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা যেতে পারে। তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, সনিয়া অবশ্য প্রদেশ সভাপতি পরিবর্তনের কোনও ইঙ্গিত দেননি। আবার পরিবর্তন যে হবে না, সে কথাও বলেননি।

দরবার সেরে আসার পরে প্রদীপবাবু অবশ্য বলেছেন, “অধীরকে সরানোর দাবি মোটেই তোলা হয়নি! সভানেত্রীকে শুধু এটাই বলা হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস সঙ্কটে রয়েছে। মেরুকরণের রাজনীতি চলছে। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে বিজেপি-র দিকে মেরুকরণ হচ্ছে। অন্য দিকে আর এক অংশের ভোট তৃণমূলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কংগ্রেসের উচিত, বাম ও অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে রাজ্যে জোট গড়ার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করা।” তাঁর মতে, এই ধরনের জোট গড়তে পারলে তৃণমূল থেকে ভেঙে কিছু নেতা কংগ্রেসেও আসতে পারেন। বিশেষ করে, সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে এই মঞ্চে টানতে আগ্রহী মান্নানেরা।

কিন্তু এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন থাকছে, সম্ভাব্য জোট নিয়ে রাজ্যের নেতা-নেত্রীরা সনিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছেন, সেখানে প্রদেশ সভাপতি অনুপস্থিত কেন? অধীর আজ দিল্লিতেই ছিলেন। তিনি অবশ্য পাঁচ নেতার জনপথে দরবারকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। অধীরের কথায়, “হাইকম্যান্ডের সঙ্গে আমার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। এঁরা কী বলছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করছি না! ওঁরা আমার আগে থেকে কংগ্রেস করছেন। দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের চেনেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেই পারেন।”

প্রদেশ সভাপতির আরও বক্তব্য, গত সপ্তাহে রাহুলের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী কলকাতায় গিয়ে দু’দিন জেলা স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলেছেন। হাইকম্যান্ডের প্রতিনিধি যখন ঘরে এসে কথা বলতে চাইছেন, তখন প্রদেশ স্তরে আলোচনা ছেড়ে দিল্লিতে হত্যে দেওয়ার অর্থ বুঝছেন না অধীর! আর জোটের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “আপাতত সংগঠনকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব আমার উপরে দেওয়া হয়েছে। জোটের ব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়নি। এমনকী, জোশীর উপস্থিতিতেও এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও অবশ্য ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছে, আন্দোলনের যৌথ মঞ্চ হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে তারা রাজি নয়। তার পরেও প্রদীপবাবুদের বামেদের সঙ্গে জোটের প্রস্তাব নিয়ে দলনেত্রীর কাছে দরবার করার দাবি কত দূর বাস্তবসম্মত, প্রশ্ন থাকছেই।

অধীরকে ‘লড়াকু নেতা’ হিসাবে ধরেই প্রদেশের দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছিল হাইকম্যান্ড। লোকসভা ভোটে অধীর নিজে বহরমপুর থেকে বিরাট ব্যবধানে জিতেছেন। দেশ জুড়ে কংগ্রেসের দুর্দিনের বাজারেও মুর্শিদাবাদ ও মালদহ থেকে দল চার জন সাংসদ পেয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসেরই একটি বড় অংশের পাল্টা বক্তব্য, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ বরাবরই কংগ্রেসের ঊর্বর জমি। কিন্তু অধীরের আমলে বাকি রাজ্যে কংগ্রেস ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। তবে এ সবের পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, অধীরকে সত্যিই সরানো হলে প্রদেশ সভাপতি পদে আনা হবে কাকে? রাজ্য কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “উপনির্বাচনে ভোট কমেছে বলে অধীরকে সরানোর দাবি জোরালো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু নতুন সভাপতি এসে কলকাতা পুরভোটে কংগ্রেসের খাতায় ৫% ভোট আনতে পারবেন, তার নিশ্চয়তা কী!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prodesh congress sonia gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE