ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ যাতে মহারাষ্ট্র বা দিল্লির সমতুল হয়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি দাখিল হল কলকাতা হাইকোর্টে। সোমবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে আবেদনটি পেশ করেন আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রধান বিচারপতি এ নিয়ে সুব্রতবাবুকে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আবেদনে সুব্রতবাবু বলেছেন, মহারাষ্ট্র-দিল্লি-ওড়িশা-হিমাচলপ্রদেশে ধর্ষণকারীদের বিচার যথাসম্ভব দ্রুত শেষ করে সাজা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পারছে না। এ রাজ্যের ধর্ষিতারা এবং তাঁদের পরিবার যাতে দ্রুত বিচার পান, সেই উদ্দেশ্যেই তিনি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন বলে সুব্রতবাবু হাইকোর্টকে জানিয়েছেন। “আমাদের রাজ্যের দুর্ভাগ্য, এক জন ধর্ষিতা মহিলা অথবা ধর্ষণের পরে খুন হয়ে যাওয়া তরুণী বা তাঁদের পরিবারের কেউ দ্রুত বিচার পান না। অথচ মহারাষ্ট্র আট মাসে বিচার সেরে ফেলছে! দিল্লি সাত মাসে। হিমাচল বছর ঘুরতে না-ঘুরতে মামলা শেষ করছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে দু’বছর কেটে যাওয়ার পরে নাম-কা-ওয়াস্তে বিচার শুরু হচ্ছে! তা-ও প্রধান অভিযুক্ত ধরা পড়ছে না!” মন্তব্য করেছেন তিনি।
পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি, কাটোয়া, মধ্যমগ্রাম, মানিকচক রাজ্যে নারী ধর্ষণের হরেক ঘটনার উল্লেখ করে আবেদনকারী অভিযোগ করেছেন, কোনও ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সক্রিয়তা নজরে আসেনি। এবং এ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিচারবিভাগের পরিকাঠামোগত দুর্দশার কথাও আবেদনে উল্লেখ করেছেন সুব্রতবাবু। তাঁর বক্তব্য: পশ্চিমবঙ্গে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের সংখ্যা ১৫৩ থেকে কমে হয়েছে ৪৫। অথচ অধিকাংশ রাজ্যে সংখ্যাটা ঊর্ধ্বগামী।
সুব্রতবাবু তাঁর আর্জিতে আরও জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজ্য সরকার ২৫টি মহিলা আদালত গড়লেও সেগুলির অধিকাংশ এখন ‘পুরুষ আদালতে’ পরিণত হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা: ওই সব মহিলা আদালতের মহিলা বিচারকদের বদলি কিংবা পদোন্নতি হয়েছে। তাঁদের শূন্যস্থানে পুরুষ বিচারক এসে গিয়েছেন।
হাইকোর্ট কী করতে পারে?
ডিভিশন বেঞ্চ তা জানতে চাইলে সুব্রতবাবু বলেন, আদালত সংবিধানের ২২৭ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণ বা এ জাতীয় অপরাধের বিচারে দ্রুততা আনার ব্যবস্থা করতে পারে। বেঞ্চের নির্দেশ মতো সুব্রতবাবু আজ, মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলাটি দায়ের করবেন।