Advertisement
E-Paper

প্রতিবন্ধীদের যুঝতে পুলিশের পেশিশক্তি

কোথাও পলায়ন! কোথাও পালোয়ান! ২৯ নভেম্বর শনিবার শক্তের কাছে হার মেনে নমনীয় পুলিশকে দৌড়ে একটি ক্লাবে আশ্রয় নিতে দেখেছে মানুষ। বুধবার, ৩ ডিসেম্বর সেই পুলিশকেই দেখা গেল পালোয়ান হিসেবে। বিপক্ষে হুইল-চেয়ারে বসে থাকা কিছু প্রতিবন্ধী। অধিকার রক্ষার জন্য পতাকা হাতে কয়েক জন দৃষ্টিহীন।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
এক প্রতিবন্ধীকে পুলিশের ধাক্কা। বুধবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

এক প্রতিবন্ধীকে পুলিশের ধাক্কা। বুধবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

কোথাও পলায়ন! কোথাও পালোয়ান!

২৯ নভেম্বর শনিবার শক্তের কাছে হার মেনে নমনীয় পুলিশকে দৌড়ে একটি ক্লাবে আশ্রয় নিতে দেখেছে মানুষ। বুধবার, ৩ ডিসেম্বর সেই পুলিশকেই দেখা গেল পালোয়ান হিসেবে। বিপক্ষে হুইল-চেয়ারে বসে থাকা কিছু প্রতিবন্ধী। অধিকার রক্ষার জন্য পতাকা হাতে কয়েক জন দৃষ্টিহীন। প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষা এবং নীলরতন সরকার হাসপাতালের ছাত্রদের হস্টেলে খুন হওয়া মানসিক প্রতিবন্ধী কোরপান শা-র দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন পথে নেমেছিলেন রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর কয়েকশো সদস্য। সেখানেই দেখা গেল পুলিশের পেশির শক্তি। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পুলিশের এই ‘উন্নতি’তে হতবাক শহরের মানুষ।

প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে পুলিশের প্রবল ধস্তাধস্তিতে ভেঙে যায় প্রায় ৭টি হুইল-চেয়ার। কমবেশি আহত কয়েক জন প্রতিবন্ধীও। ঘটনাস্থলেই ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ। শনিবারের ঘটনায় ‘শক্তিমানদের’ ইটের ঘায়ে যাঁর মাথা ফেটে গিয়েছিল। এ দিন বীর বিক্রমে প্রতিবন্ধীদের পরাস্ত করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কলকাতা পুলিশ। মনে করছে পুলিশের একাংশ।

এ দিন দুপুরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সম্মেলন শুরু হয়। মঞ্চে ছিলেন কোরপানের স্ত্রী আরজিনা বিবি। সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর হাতে কিছুু টাকা তুলে দেন। প্রতি মাসে কোরপানের পরিবারকে কয়েক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে, জানান তিনি।

আরজিনা বিবি বলেন, “সরকার আমার পাগলা স্বামীকে ফিরিয়ে দিক। না হলে দোষীদের শাস্তি দিক।” সরকারের কাছে তাঁর দাবি, তাঁকে যে কোনও চাকরি দিতে হবে। তাঁর ছেলের চাকরির বয়স হলে তাকে চাকরি দেওয়ার দাবিও জানান তিনি। কান্তিবাবুর দাবি, কোরপানের খুনের বিচার চেয়ে ফের হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। তাঁর বক্তব্য: “সারদা কাণ্ডে যেমন অনেকে জেলে গিয়েছেন, আরও যাবেন। কোরপানের খুনিদেরও শাস্তি দিতে হবে।”

দেড়টা নাগাদ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে রেড রোডের দিকে থাকা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে থাকেন প্রতিবন্ধী ওই বিক্ষোভকারীরা। তখনই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু। একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন হুইল-চেয়ারে থাকা কিছু যুবক। তাঁরা এগিয়ে যেতে গেলেই পুলিশ রাস্তা আটকায়। পেশির জোর ও বেতের ঢাল নিয়ে প্রতিরোধ শুরু হয়। তখন হুইল-চেয়ারে বসেই সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। এক দিকে পুলিশ, অপর দিকে প্রতিবন্ধী। দু’পক্ষের মধ্যে কার্যত হাতাহাতি শুরু হয়। বেশ কয়েক জন প্রতিবন্ধী মহিলাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী এবং কয়েক জন পড়ে যান হুইল-চেয়ারে বসা মানুষদের ওপরে। তার উপরেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ঠেলতে থাকে। ফের গাড়ির এপারে এসে পড়েন তাঁরা। দুমড়ে মুচড়ে যায় তাঁদের হুইল-চেয়ার। তাতেও পুলিশের ধাক্কা থামেনি।

কান্তিবাবু পরিস্থিতি সামলান। আইন ভাঙার কর্মসূচি বাতিল করা হয়। ভিড় সরে যেতে দেখা যায় রাস্তায় ছড়িয়ে দৃষ্টিহীনদের লাঠি, হুইল-চেয়ারের ভাঙা অংশ। রাস্তায় পড়ে এক দৃষ্টিহীনের চশমা। ভিড়ের মধ্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

মগরাহাটের বাসিন্দা আজিবুল পিয়াদা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “পুলিশ আমার গাড়ি ভেঙে দিয়েছে। কী করে বাড়ি যাব?” পূর্ব মেদিনীপূুরের বাসিন্দা গৌরহরি আদক বলেন, “সুযোগ-সুবিধা পাই না। তার উপরে পুলিশ আমাদের গাড়িই ভেঙে দিল।”

এক পুলিশকর্মী যদিও বলেন, “আমরা ওঁদের গাড়ি ভাঙিনি। ঠেলাঠেলিতে ভেঙেছে।” কিন্তু এ বার কী হবে ওই প্রতিবন্ধীদের? কান্তিবাবু বলেন, “সরকারকে এ বিষয়ে আবেদন করা অরণ্যে রোদন হবে। তাই সংগঠন থেকেই ওঁদের হুইল-চেয়ার কিনে দেওয়া হবে।”

পুলিশের এই আচরণের সমালোচনা করেছেন শহরবাসী। ঘটনার সময়ে রাস্তায় পাশেই সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষণের জন্য যানজট হয়। এক মহিলা বাস থেকে মুখ বার করে বলেতে থাকেন, “আলিপুরে, ধর্মতলায় পুলিশের যে মুখ পুড়েছে, তাতে প্রলেপ লাগাতেই কি প্রতিবন্ধীদের উপরে চড়াও হল পুলিশ?” যদিও পুলিশের দাবি, “কোনও আক্রমণ করা হয়নি। পুলিশ শুধু আক্রমণ সামলেছে।”

তা হলে আলিপুরে, শনিবারে ধর্মতলায় আক্রমণ সামলানো যায়নি কেন? অস্বস্তি এড়াতে সরেই গেলেন ওই পুলিশকর্মী। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, “আইন ভাঙার জন্য ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে সেখানেই ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তাঁদের জামিন দিয়ে দেওয়া হয়।” লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা জানান, গাড়িগুলি পুলিশ ভাঙেনি।

এ দিন বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে রবীন্দ্র সদনে এক পুরস্কার বিতরণী সভায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, “শুনেছি, কিন্তু বিস্তারিত জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

physically challenged clash police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy