প্রায় ছ’মাস ধরে একটা নারী পাচার চক্রের সন্ধান করছিল কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার বসিরহাট থানা চত্বর থেকে সেই চক্রে জড়িত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মহম্মদ ইসমাইল মণ্ডল নামে ওই গাড়ি ব্যবসায়ী উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন থানায় এবং সরকারি দফতরে ভাড়ায় গাড়ি সরবরাহ করত। স্থানীয় সূত্র এবং পুলিশের একাংশের ধারণা, পুলিশের গাড়ি কাজে লাগিয়ে ওই গাড়ি ব্যবসায়ী মেয়ে পাচারের কাজ চালাচ্ছিল। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মেয়েদের নিয়ে এসে সোনাগাছিতে সে বিক্রি করত বলে অভিযোগ।
পুলিশের একাংশের খবর, ইসমাইলের বাড়ি বসিরহাটের দক্ষিণ মথুরাপুরে। সে নিজেকে গাড়ি ব্যবসায়ী বলেই পরিচয় দিত। অন্তত ১২-১৪টি মাঝারি ও বড় গাড়ি ভাড়া দিত সে, যার বেশির ভাগই ব্যবহার করতেন প্রশাসন ও পুলিশের কর্তারা। ইসমাইল নিজেও গাড়ি চালাত। সরকারি কর্তাদের সঙ্গে তার দহরম-মহরমও ছিল। তার গ্রামে নানা সমাজসেবা মূলক অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্তাদের নানা সময়ে দেখা গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ধৃত ব্যক্তি সত্যিই পুলিশকে গাড়ি সরবরাহ করত কি না, না জেনে এ বিষয়ে কিছু বলব না।”
এ দিন দুপুরে কলকাতা থেকে নারী পাচার প্রতিরোধ শাখার এক তদন্তকারী অফিসার তাঁর দলবল নিয়ে বসিরহাট থানায় আসেন। ইসমাইলকে থানা চত্বরেই গ্রেফতার করা হয়। যে সব তথ্য নজরে আসে, তাতে চোখ কপালে উঠেছে জেলা পুলিশের। প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, পুলিশের গাড়ি সারাতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে গাড়ি ব্যবহার করত ইসমাইল। বাংলাদেশের পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। এ-পারে আসা মেয়েদের যেখানে লুকিয়ে রাখা হত, সেখানে গিয়ে নিজেকে ‘পুলিশের লোক’ বলে পরিচয় দিয়ে মেয়েদের তুলে নিত গাড়িতে। পুলিশের ধারণা, ইসমাইলের গাড়িতে থাকত তার সঙ্গীরা। গাড়িতেই ওই মেয়েদের ধর্ষণ করা হতো। তারপর তাদের বিক্রি করে দেওয়া হত সোনাগাছিতে, পাচার করা হত ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও। এই চক্রটি বড়, এর বেশ কিছু লোককে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আর কয়েক জনকে গ্রেফতার করলেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হতে পারে, মনে করছেন তদন্তকারী অফিসার। বড়তলা থানার পুরনো একটি মামলায় মহম্মদ ইসমাইলকে অনেক দিন ধরে খোঁজা হচ্ছিল। তার বিরুদ্ধে সোনাগাছি-সহ বিভিন্ন জায়গায় নারী পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ দিন তদন্তকারী অফিসার বলেন, “গত বছর সেপ্টেম্বর একটি বাংলাদেশি মেয়ের থেকে সূত্র পেয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি। চার-পাঁচবার তল্লাশি হয়েছে, বেশ কিছু বাংলাদেশি মেয়ে উদ্ধার করা হয়েছে, কিছু লোক গ্রেফতারও হয়েছে।” পাচারচক্রে ইসমাইলের ভূমিকা বোঝার চেষ্টা করবে পুলিশ। পল্লবকান্তি ঘোষ, যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) জানান, “দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টার উপর নজর রাখছিলাম।” লালবাজার সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের নিষিদ্ধ পল্লিতেও ওই চক্রটি নারী পাচার করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তাই ইসমাইল ধরার পড়ার বিষয়টি মুম্বই পুলিশকেও জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy