খাগড়াগড়ে তৈরি বোমা পড়শি ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে মজুত করত জেহাদিরা। পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই জামাত জঙ্গিরা এমন ফন্দি করেছিল।
এনআইএ গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বাংলাদেশ সীমান্তের কার্যত নাকের ডগায় থাকা পাকুড়ে সন্ত্রাসের ডেরা তৈরি করা হয়। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের সুতি, ধুুলিয়ান, নিমতিতার মতো সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকাগুলির দুরত্ব ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে। ওই সব জায়গায় বছরভর কড়া পুলিশি নজরদারি থাকে। কিন্তু পাকুড়ের পরিস্থিতি তেমন নয়। তাই সেখানে বোমা মজুত রাখা অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করেছিল জেহাদিরা। গত কাল পাকুড় থেকে বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ধৃত দু’জনকে জেরা করে এ সব টের পেয়েছে এনআইএ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, সাঁওতাল পরগনার ওই জেলার প্রত্যন্ত এলাকার কয়েক জনকে টাকার লোভে দলে টেনে নেয় জামাত জঙ্গিরা। মাসিক বেতনের বিনিময়ে তাদের আস্তানায় বোমা মজুত করা হতো। ‘ক্যুরিয়র’ হিসেবে ওই গ্রামবাসীরাই সীমান্তের ওপারে সেগুলি পৌঁছে দিত। খাগড়াগড়-কান্ডে জড়িত সন্দেহে পাকুড় থেকে সালাউদ্দিন শেখ ও জাহাঙ্গীর শেখকে গত কাল ধরে এনআইএ।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের পাকুড়, রাজমহল, সাহেবগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের ফরাক্কা, ধুলিয়ান-সহ গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় আরও ২৩ জনের খোঁজ চলছে। ধৃত সালাউদ্দিন হাতুড়ে ডাক্তার। জাহাঙ্গীর বরহাড়োয়া ব্লকের রানিপুর মাদ্রাসার ইমাম। তারা দু’জনই সংগ্রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্তে বর্ধমানের একাধিক মাদ্রাসায় জেহাদি পাঠ পড়ানোর কথা সামনে এসেছে। রানিপুরের মাদ্রাসার পঠনপাঠনের রীতিনীতির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় সালাউদ্দিনরা জানিয়েছে, বোমা ও বিস্ফোরক নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য দু’জনেই মাসিক ৬০ হাজার টাকা বেতন পেত। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সালাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর বীরভূমের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছিল। তার পর তারা সংগ্রামপুরে ফিরে আসে। জাহাঙ্গীর মাদ্রাসার ইমাম হয়। ওই সময়ই তার সঙ্গে জেহাদিদের আলাপ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বর্ধমানে তৈরির পর বোমাগুলি পৌঁছত পাকুড়ে সালাউদ্দিনদের কাছে। পাকুড় থেকে নদীপথে নৌকা বা মোটর-বোটে তা পৌঁছে যেত বাংলাদেশে জেহাদিদের ঘাঁটিতে। সেই কাজ করত জাহাঙ্গীর।
পাকুড়, সাহেবগঞ্জ, রাজমহল জেলায় গঙ্গার সঙ্গে মিলেছে পদ্মা। ওই সব জেলার গা-ঘেঁষা সুতি, ধুলিয়ানের মতো পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জায়গা। গঙ্গা-পদ্মা মিলেমিশে তারই ধার দিয়ে চলে গিয়েছে বাংলাদেশে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, সুযোগ বুঝে রক্ষীদের চোখ এড়িয়ে ওই পথেই ভারতে ঢোকে অনুপ্রবেশকারীরা। সেই জলপথ ব্যবহার করে জেহাদিরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy