Advertisement
০৭ মে ২০২৪

পুলিশকে চিঠি দিয়ে রোশেনারার পাশেই উপাচার্য

শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের একাংশের চাপের মুখেও রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষিকা তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মেয়ে রোশেনারা মিশ্রের পাশেই দাঁড়ালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। গত ১৮ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনার সূত্রে রোশেনারার বিরুদ্ধে বিপজ্জনক অস্ত্র নিয়ে হামলা, চুরি, বেআইনি ভাবে জমায়েত-সহ একাধিক অভিযোগ করা হয় থানায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৪
Share: Save:

শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের একাংশের চাপের মুখেও রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষিকা তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মেয়ে রোশেনারা মিশ্রের পাশেই দাঁড়ালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। গত ১৮ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনার সূত্রে রোশেনারার বিরুদ্ধে বিপজ্জনক অস্ত্র নিয়ে হামলা, চুরি, বেআইনি ভাবে জমায়েত-সহ একাধিক অভিযোগ করা হয় থানায়। অভিযোগ, এর পিছনে হাত ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু নেতার। রোশেনারার বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করে পুলিশ। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই দিন রোশেনারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না!

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে শারীরবিদ্যার কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে মারধর করে একদল যুবক। আক্রমণকারীদের বেশির ভাগই বহিরাগত এবং তারা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার অনুগামী বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার কিছু ক্ষণ পরে আক্রমণকারীরাই রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের শারীরবিদ্যার শিক্ষিকা রোশেনারা মিশ্র-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ দায়ের করে। পরে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন।

এর পরেই সক্রিয় হয় পুলিশ। তারা রোশেনারার বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে। গত বুধবার উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘কুটা’ জানায়, যে দিনের কথা বলা হয়েছে, সে দিন রোশেনারা রাজাবাজার ক্যাম্পাসেই ছিলেন না। তারা এ নিয়ে একটি চিঠিও দেয় উপাচার্যকে। কুটা-র সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পরেই উপাচার্য জানিয়েছিলেন, কুটা-র দেওয়া চিঠির সঙ্গে তাঁর ও সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দু’টি চিঠি পুলিশের কাছে পাঠানো হবে। সেই চিঠিগুলিই শুক্রবার পুলিশকে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কী বলা হয়েছে উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যের চিঠিতে? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উপাচার্য তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি সে দিন রাজাবাজার ক্যাম্পাসে গিয়ে রোশেনারাদেবীকে দেখতে পাননি। আর সহ-উপাচার্য জানিয়েছেন, রোশেনারাদেবী সে দিন ছিলেন সল্টলেকে, ন্যানোসায়েন্স ক্যাম্পাসে একটি আলোচনাসভায়।

সুরঞ্জনবাবু আপাতত শহরের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ধ্রুবজ্যোতিবাবু। তিনি বলেন, “সে দিন রোশেনারাদেবী ন্যানোসায়েন্স ক্যাম্পাসে একটি আলোচনাসভায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তা জানি। তাই সেটুকু জানিয়েছি পুলিশকে।”

পুলিশ রোশেনারাদেবীর ব্যাপারে দ্রুত সক্রিয় হলেও সে দিনের হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি বলে অভিযোগ বিজ্ঞান কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেরই। এ প্রসঙ্গে রোশেনারা বলেন, “যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে হামলা চালাল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।”

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সূত্রের খবর, ঘটনার দিন টিএমসিপি নেতা সৌরভ অধিকারী এবং অন্য পাঁচ টিএমসিপি কর্মীর বিরুদ্ধে বাইরে থেকে বিজ্ঞান কলেজে ঢুকে, শারীরবিদ্যা বিভাগে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, ওই দিনের দু’টি ঘটনারই তদন্ত চলছে। তদন্ত যে ভাবে এগোবে, সেই ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমালের পরপরই ১৮ সেপ্টেম্বর রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে গন্ডগোলের সময় উপাচার্য যে ভাবে পুলিশকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দিয়ে নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলেছিলেন এবং পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে বহিরাগতদের কলেজ থেকে বের করে দিয়েছিলেন, তার প্রশংসা করেছিল শিক্ষকমহল। তারও পরে তিনি যে ভাবে রোশেনারার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা বলে সে ব্যাপারে পুলিশকে চিঠি লিখে জানানোর ব্যবস্থা করেছেন, তাতে খুশি শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা। অনেকেই এই প্রসঙ্গে নাম না করে বিঁধতে ছাড়েননি যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে। এক শিক্ষকের কথায়, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বহিরাগতদের উপাচার্য সে দিন যে ভাবে সামলেছেন, তা থেকে অন্য উপাচার্যেরা শিক্ষা নিতেই পারেন।”

রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ অতি সক্রিয় হয়ে রোশেনারার বিরুদ্ধে এক পড়ুয়ার সোনার হার চুরি এবং অন্যদের মারাত্মক আঘাত করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছিল। ওই সব অভিযোগ এত গুরুতর যে রোশেনারাকে আদালত থেকে জামিন নিতে হয়। প্রাথমিক কোনও তদন্ত ছাড়াই পুলিশ কী ভাবে ওই কাজ করেছিল, সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের চিঠি থেকেই স্পষ্ট যে, রোশেনারা সে দিন কলেজে ছিলেন না।

এ বার কী করবে পুলিশ?

কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার পরে এ বার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখে আদালতে রিপোর্ট দেবে। তখন রোশেনারা যদি তাঁকে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ফাঁসানোর অভিযোগ আনেন, তা হলে আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে শারীরবিদ্যার ওই শিক্ষককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য অভিযোগকারীদের সাজা হতে পারে।

শারীরবিদ্যার প্রাক্তন ছাত্র তথা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, “পুলিশের চার্জশিটের জন্য রোশেনারার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের চিঠির ভিত্তিতেই তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে।” এ দিন রোশেনারা বলেন, “আমি আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”

পুরো ঘটনায় রোশেনারার পাশেই দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গলার হার চুরির মতো অভিযোগ এনে গোটা শিক্ষক সমাজের মানহানি করা হয়েছে। আমরা শিক্ষকদের তরফে থেকেও আদালতে মানহানির মামলা করার কথা ভাবছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE