Advertisement
E-Paper

পঞ্চমী থেকে কলকাতা পাহাড়ি বিচ্ছুদের দখলে

মা এ বার আসছেন নৌকায়। আর নিকিতা-রা হলদিবাড়ি এক্সপ্রেসে। আজ রবিবারই। দার্জিলিং থেকে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে সটান কলকাতায়। দলে মোট দশ জন। বয়সে পনেরো পেরোয়নি কেউ। অর্ধেক ছোটা রঙমিত টি এস্টেটের বাসিন্দা। বাকিরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাহাড়েরই কোলে। কলকাতার ঠাকুর দেখতে আসছে ওরা। আর পাহাড়ে ফিরে যাওয়ার আগে ওরাই বলে যাবে কলকাতার এ বার কোন পুজো সেরা।

স্নেহাংশু অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
কলকাতা রওনা হওয়ার আগে দার্জিলিং রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে খুদেরা।—নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা রওনা হওয়ার আগে দার্জিলিং রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে খুদেরা।—নিজস্ব চিত্র।

মা এ বার আসছেন নৌকায়। আর নিকিতা-রা হলদিবাড়ি এক্সপ্রেসে। আজ রবিবারই। দার্জিলিং থেকে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে সটান কলকাতায়। দলে মোট দশ জন। বয়সে পনেরো পেরোয়নি কেউ। অর্ধেক ছোটা রঙমিত টি এস্টেটের বাসিন্দা। বাকিরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাহাড়েরই কোলে। কলকাতার ঠাকুর দেখতে আসছে ওরা। আর পাহাড়ে ফিরে যাওয়ার আগে ওরাই বলে যাবে কলকাতার এ বার কোন পুজো সেরা।

‘পাহাড়ের চোখে সমতলের পুজো’ অভিনব এই থিমের আয়োজক সমতলেরই একটি সংস্থা। আর দল বাছাই এবং শহরে যাওয়ার আগে বিচ্ছুদের তৈরি করে দেওয়া, সবেরই পিছনে দার্জিলিঙের রামকৃষ্ণ মিশন নিবেদিতা এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার।

সম্পাদক স্বামী নিত্যসত্যানন্দ মহারাজ অবশ্য ওদের বিচ্ছু বলতে নারাজ। বললেন, “বিচ্ছু তো আমরাই। ওরা বরং একেবারেই সিধেসাধা। এক বার শুধু দুষ্টুমি করে বলেছিলাম ‘কলকাতায় যাবি, কিন্তু ওখানে যা রোদের তেজ না, গায়ে পুরো ফোস্কা পড়ে যায়।’ শুনে ওরা কী বলল জানেন? ‘তা হলে বরং পুজোয় নতুন জামায় কাজ নেই। আমাদের সবার ব্যাগে একটা করে সানস্ক্রিন লোশন দিলেই হবে!’ মাখেনি তো জীবনে, টিভি দেখেই শিখছে আর কি!”

পুরাণ বলে, বোধনের আগে দেবী বেলগাছের নীচে বিশ্রাম নেন। নিকিতা-দের অবশ্য বিশ্রাম বলে কিছু নেই। হলদিবাড়ি আজ কলকাতা ঢুকতে ঢুকতে সন্ধে ৭টা ৪০। তার পরে সোমবার পঞ্চমীর সকাল থেকেই শুরু চরকি ভ্রমণ। তিন দিনের সফরে কলকাতা দাপিয়ে বেড়াবে নিকিতা তামাঙ্গ (১৫), অনন্যা ছেত্রী (১১), বিলাসনা তামাঙ্গ (১১), শর্মিলা দেওয়ান (১২), ঋষিকা থাপা (১৩), সরজু রাই (৯), সাহিল বাল্মিকী (১০), শৈলেশ রাই (১১), নীতেশ তামাঙ্গ এবং রিঞ্চেন লামা-রা (১২)। বাসে-গাড়িতে ঘুরে বেড়াবে বাগবাজার থেকে চেতলার প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। তবে শুধুই ঠাকুর দেখা নয়, এ বার শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, মহম্মদ আলি পার্ক, নাকতলা উদয়ন সংঘ, একডালিয়া এভারগ্রিন ইত্যাদি কলকাতার বেশ কয়েকটি নামজাদা পুজোর বিচারও করবে এরা।

আয়োজক সংস্থাটির তরফে অম্লান বিশ্বাস জানালেন, “ইতিমধ্যেই আমাদের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল। ব্যক্তিগত ভাবে বার্তা পাঠিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং শাসক দলের সাংসদ সৌগত রায়।” সপ্তমী অর্থাৎ বুধবার শৈলেশরা যাবে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ, বেলঘরিয়া রামকৃষ্ণ মিশনে।

বাচ্চাদের ট্রেনে তোলার আগে আজ মহারাজ বললেন, “এক বার মিশনের গাড়িতে করে শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম সবাইকে। প্রথম শহর দেখে সে কি আনন্দ ওদের!” সেই আনন্দের মাত্রাটা খানিক বাড়িয়ে দিতেই কলকাতা সফরের এই আযোজন বলে মন্তব্য তাঁর।

গদাধর অভ্যুদয় প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্যই মানুষের মতো মানুষ তৈরি করা। স্বামীজির জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সমতলে গত বেশ কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্প চালাচ্ছে রামকৃষ্ণ মিশন। দার্জিলিং শাখায় চালু হয়েছে সম্প্রতি। পাহাড়ের ১০২টি বাচ্চা বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতায়। দশ জনকে এদের মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্বে প্রকল্পে যারা নিয়মিত, তাদের মধ্যে থেকেই বাছাই করা হয়েছে সেরা দশ পারফর্মারকে।

ছোটা রঙমিতে বাড়ি শর্মিলা দেওয়ানের। অল্প বয়সেই বাপ-মা হারিয়ে আপাতত কাকার অভাবের সংসারে। ঋষিকা থাপা থাকে লেবং কার্ট রোড লাগোয়া একটি পাহাড়ি গ্রামে। মাথার উপর রোপওয়ে চলে, তাই স্থানীয় ভাষায় রোপওয়ে গ্রাম। বাবা জনমজুর খাটেন। রোজগারের বেশির ভাগটাই চলে যায় মদে। তাই তেরো বছরের কাঁধেই আপাতত সংসারের জোয়াল। মহারাজ জানালেন, “সমতলে গিয়ে পরার মতো পোশাক নেই, সেটাও মুখ ফুটে বলেনি। ওর হয়ে বলেছে বন্ধুরাই। তাই ঋষিকার জন্য এ বার দু’সেট জামা।” আর পুজো কর্তাদের জন্য সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পাহাড়ের খুদে দশ জোড়া চোখের সামনে নিজেদের সেরাটা তুলে ধরা।

snehanshu adhikary pujo darjeeling ramakrishna mission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy