Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পদ ছাড়লেন সচ্চিদানন্দ, স্পিকারকে চিঠি অর্জুনের

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুকে বিজেপি-র উত্থানের দায় নিয়ে সরে যেতে হল দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিধানসভা ও বুথওয়াড়ি ভোটের পরিসংখ্যান দেখে ফলপ্রকাশের পরের দিনই দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন সচ্চিদানন্দবাবু। তৃণমূলের তরফে তা অবশ্য প্রকাশ্যে আনা হয়নি। বিষয়টি বেশ কিছু দিন ফেলে রাখার পরে দিনকয়েক আগে তাঁর ইস্তফা মঞ্জুর করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

অর্জুন সিংহ ও সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়

অর্জুন সিংহ ও সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুকে বিজেপি-র উত্থানের দায় নিয়ে সরে যেতে হল দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিধানসভা ও বুথওয়াড়ি ভোটের পরিসংখ্যান দেখে ফলপ্রকাশের পরের দিনই দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন সচ্চিদানন্দবাবু। তৃণমূলের তরফে তা অবশ্য প্রকাশ্যে আনা হয়নি। বিষয়টি বেশ কিছু দিন ফেলে রাখার পরে দিনকয়েক আগে তাঁর ইস্তফা মঞ্জুর করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তাঁর জায়গায় এখনও নতুন কাউকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান পদে অবশ্য সচ্চিদানন্দবাবুই আছেন।

দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে এ বার তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সীর জয়ের ব্যবধান কমেছে প্রায় এক লক্ষ ভোটে। সিপিএমকে ছাপিয়ে ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন বিজেপি-র তথাগত রায়। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতার নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ১৮৫ ভোটে রাজ্যের শাসক দলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি। এমন ফলাফলের পরেই নৈতিক দায় নিয়ে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের তরফে ভোটের দায়িত্বে-থাকা সচ্চিদানন্দবাবু। প্রকাশ্যে অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি। তবে ভবানীপুরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, “ফলপ্রকাশের সন্ধ্যাতেই ওয়ার্ড ও বিধানসভা-ভিত্তিক ফলাফলের হিসাব নিয়ে বসেছিলেন মনুয়াদা (সচ্চিদানন্দ)। পরদিন সকালেই ইস্তফা দিয়েছেন।”

তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি এবং দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ সুব্রতবাবু সোমবার বলেছেন, “মনুয়াদা আমার কাছেই পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন। ভবানীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের পিছিয়ে পড়ার দায়ভার নিয়েই তিনি পদত্যাগপত্র দেন। ইস্তফা গৃহীত হয়েছে।” সচ্চিদানন্দবাবুর জায়গায় কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রের খবর। কলকাতা পুরসভার এক মেয়র পারিষদের নাম শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য নতুন জেলা সভাপতি হিসাবে। সচ্চিদানন্দবাবু ইস্তফা দেওয়ার পরে তৃণমূল নেতৃত্ব কিন্তু গোড়ায় কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। ভোটের পরে দলের সর্ব স্তরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূল নেত্রীর সভাতেও বিষয়টি ওঠেনি। অবশেষে গত শনিবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় সচ্চিদানন্দবাবুর সঙ্গে কথা বলেন। এবং বুঝিয়ে দেন, তাঁর ইস্তফার বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হবে। তখনই পদত্যাগী সভাপতিকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, তাঁর বিকল্প খোঁজা হচ্ছে।

শাসক দলেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, লোকসভা ভোটে রাজ্যে ৩৪টি আসন পেলেও যেখানে যেখানে ফল খারাপ হয়েছে, সেখানে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আসানসোলের জন্য মন্ত্রী মলয় ঘটককে সরতে হয়েছে, ভাটপাড়ার জন্য বিধায়ক অর্জুন সিংহের ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া চলছে। এমতাবস্থায় কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা না-করে নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন সচ্চিদানন্দবাবু। তবে তৃণমূলেরই একাংশের বক্তব্য, ভবানীপুরে খারাপ ফলের জন্য শুধু সচ্চিদানন্দবাবুকে দায়ী করা ঠিক নয়। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেখানে থাকেন, সেই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ভবানীপুর বিধানসভার সব ক’টি ওয়ার্ডেই শাসক দল ধাক্কা খেয়েছে। সচ্চিদানন্দবাবু যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সেই ৭০ নম্বরে ২৫০০ ভোটে হেরেছে শাসক দল। সেটাও তাঁর ইস্তফা দেওয়ার একটি কারণ বলে একটি সূত্রের বক্তব্য।

তবে তৃণমূলের অন্দরে কেউ কেউ বলছেন, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডটি কখনওই একচেটিয়া ভাবে জেতে না তৃণমূল। গত পুরভোটে সচ্চিদানন্দবাবু মাত্র ৯০০ ভোটে সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। এ বার লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-সিপিএম প্রায় ধরাশায়ী। পাল্লা ভারী হয়েছে বিজেপি-র। গুজরাতিভাষী ভোট প্রায় পুরোটাই বিজেপি-র ঝুলি ভরেছে বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা। সুব্রতবাবু যেখানে থাকেন, সেই ৭২ নম্বর ওয়ার্ডেও ৬০৮ ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। বালিগঞ্জ বা কলকাতা বন্দরেও তৃণমূলের ভোট কমেছে।

ভোটের ফল নিয়ে এই কাটাছেঁড়ার মধ্যেই তাঁর উপরে পুলিশি হেনস্থার বিচারের দাবিতে এ দিন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন। একই অভিযোগ জানিয়ে কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। হেনস্থার ঘটনায় জনপ্রতিনিধি হিসাবে তিনি যে অসম্মানিত বোধ করছেন, স্পিকারকে তা-ই জানিয়েছেন অর্জুন। তাঁর বক্তব্য, “ঘটনার পরে কয়েক দিন কেটে গেলেও এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চোখে পড়ছে না।” আর স্পিকারের বক্তব্য, “চিঠি পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব। যে কোনও দলেরই কোনও বিধায়ক অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা না নিয়ে বসে থাকার লোক আমি নই!” প্রসঙ্গত, বিধায়কদের অভিযোগের ভিত্তিতে এর আগেও স্পিকার উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার বা হাওড়ার জেলাশাসককে বিধানসভায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc sacchidananda bandyopadhyay arjun singha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE