কেটে গিয়েছে চার দিন। কিন্তু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুরহস্য সমাধানে কোনও সূত্র পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা।
রবিবার সকালে সুমন্তিকার দেহ উদ্ধারের পরে ঘটনাস্থলে ঝাঁঝালো গ্যাসের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছিল। পরীক্ষানিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞেরা জানান, ওই এলাকায় মাটির তলার পাইপলাইন লিক হয়ে গ্যাস বেরিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বুধবার দিনভর খোঁড়াখুঁড়ি করেও সেই পাইপে কোনও ফাটল বা ফুটো মেলেনি বলে গ্যাস সংস্থার দাবি।
কলেজ স্ট্রিট এলাকার আরপুলি লেনের একটি ভাড়াবাড়ির একতলার ঘরে সুমন্তিকার দেহ পাওয়া যায় রবিবার। অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁর এক ঘরের সঙ্গিনী সুবর্ণা লামা নামে অন্য এক তরুণীকেও। তিনি এখনও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, দমবন্ধ হয়েই মারা গিয়েছেন সুমন্তিকা। রবিবার থেকেই ওই ঘরে গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। সেই গন্ধের উৎস খুঁজতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সোমবার ওই ঘরে যান। ঘরের চৌকাঠ ও জানলার সামনের বাতাসে গ্যাসের উপস্থিতি টের পান তাঁরা। গ্যাসটা কোথা থেকে কী ভাবে বেরোচ্ছে, তা জানতে ডেকে পাঠানো হয় ফরেন্সিক বিভাগের রসায়ন বিশেষজ্ঞ এবং গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের অফিসারদের।
গন্ধ শুঁকে সন্দেহ করা হয়েছিল, সেটি রান্নার গ্যাস। ফরেন্সিক রসায়ন বিশেষজ্ঞেরা মঙ্গলবার দাহ্য গ্যাস পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে ঘরের ভিতরের বাতাস পরীক্ষা করে জানান, জানলা ও দরজার কাছে ঝাঁঝালো গন্ধের তীব্রতা বেশি। গ্যাস সংস্থার কর্তারা জানান, ওই ঘরের জানলার পাশের রাস্তার ৮০ সেন্টিমিটার এবং দরজার চৌকাঠের মাত্র দেড় ফুট নীচে তাঁদের পাইপলাইন রয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেছিলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই পাইপলাইন লিক হয়েই গ্যাস বেরিয়ে থাকতে পারে।”
সেই সূত্র ধরে এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ওই গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের উপস্থিতিতেই সুমন্তিকার ঘরের জানলার পাশের রাস্তা এবং আরপুলি লেনের মুখে একটি জায়গায় রাস্তা খুঁড়ে গ্যাসের পাইপলাইন খতিয়ে দেখা হয়। গ্যাস সংস্থার প্রতিনিধিরাই পাইপ পরীক্ষা করেন। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে সেই পাইপে কোনও ফাটল বা ফুটো ধরা পড়েনি বলেই ওই গ্যাস সংস্থার এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
তা হলে কী ভাবে মৃত্যু হল প্রেসিডেন্সির ওই ছাত্রীর?
উত্তর এখনও মেলেনি বলে জানাচ্ছে পুলিশ। তবে ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে ওই গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার অফিস থেকে একটি ব্লাডারে দাহ্য গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সুমন্তিকার ঘর থেকে সংগৃহীত গ্যাসের নমুনা এবং পাইপ থেকে পাওয়া গ্যাসের নমুনা খতিয়ে দেখা হবে। গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের পাইপ থেকেই গ্যাস লিক করছে কি না, জোড়া নমুনা পরীক্ষার পরে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন তদন্তকারীরা।
রহস্য কাটবে কী ভাবে?
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, আপাতত দু’দিন ওই পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তাতে সুমন্তিকার ঘরে ঝাঁঝালো গ্যাসের ঘনত্ব কমে কি না, তা যাচাই করা হবে। “ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট না-পেলে এই রহস্যের ধোঁয়াশা কাটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে,” বলেছেন পল্লববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy