Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ফের কমিটি, বাসের ভাড়া বৃদ্ধি পিছোনোই কি লক্ষ্য

কমিটির পর কমিটি। তার পরে আবার কমিটি। নিটফল? শূন্য! পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের একার উপরে দায়িত্ব ছেড়ে না-দিয়ে বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রিগোষ্ঠীও গড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। এ দিকে এখনই ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাস-মালিকদের চাপ বাড়ছে। রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে বাস। এই পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় কমিটি গড়ে বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেস কেউই তাতে যোগ দেয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার সরকারি উদ্যোগে ওই বৈঠক মোটেই সর্বদলীয় চেহারা নেয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

কমিটির পর কমিটি। তার পরে আবার কমিটি। নিটফল? শূন্য!

পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের একার উপরে দায়িত্ব ছেড়ে না-দিয়ে বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রিগোষ্ঠীও গড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। এ দিকে এখনই ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাস-মালিকদের চাপ বাড়ছে। রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে বাস। এই পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় কমিটি গড়ে বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেস কেউই তাতে যোগ দেয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার সরকারি উদ্যোগে ওই বৈঠক মোটেই সর্বদলীয় চেহারা নেয়নি।

রাজ্যের তিন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, অরূপ বিশ্বাস এবং বিধায়ক তাপস রায়ের সঙ্গে এ দিনের বৈঠকে ছিলেন শুধু এসইউসি-র বিধায়ক তরুণ নস্কর। দু’টি যাত্রী সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই ওই মন্ত্রীরা তাঁদের বৈঠক শেষ করে দেন। এর আগে অন্য এক দিন বাস-মালিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তাঁরা। কিন্তু এত সবের পরেও এ দিনের বৈঠকে বাসভাড়া বাড়ানো নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হল না। ঠিক হল, পরিবহণসচিবের নেতৃত্বে ফের একটি কমিটি হবে। তারা সাত দিনে বাসভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে মতামত দেবে।

এ দিন বিধানসভায় পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিবহণ এবং গাড়ি শিল্প সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওই কমিটির প্রধান হবেন পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিতে কারা থাকবেন, তা তিনিই ঠিক করবেন।” পার্থবাবু জানান, ওই কমিটি সাত দিনের মধ্যে সর্বদলীয় কমিটিকে রিপোর্ট দেবে। বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবির ব্যাপারে নিয়ে কী করা যায়, তার পরে আলোচনা করবে সরকার।

তবে পরিবহণ দফতরের একাংশের বক্তব্য, বাসভাড়া বাড়ানো উদ্দেশ্য নয়। বরং এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার জন্যই বারবার কমিটি তৈরি করছে সরকার। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ভোট-রাজনীতির সমীকরণের জন্যই অর্থনীতির সহজ অঙ্ক উপেক্ষা করে সুলভ জনপ্রিয়তার পথ আঁকড়ে আছেন মুখ্যমন্ত্রী।

গত দেড় বছরে জ্বালানির দাম প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। বেড়েছে যন্ত্রাংশের দামও। এই অবস্থায় সরকার বাসভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে এখনও যদি টালবাহানা করে, তা হলে রাজ্যে পরিবহণ শিল্প কার্যত উঠে যাবে বলেই মনে করছেন বাস-মালিকেরা। আবার ভাড়ার ব্যাপারে সরকারের অনড় মনোভাবে দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে যাত্রীদের। রাস্তায় বাস কমে যাওয়ায় একই গন্তব্যে পৌঁছতে তাঁদের বেশি টাকা ও সময় খরচ করতে হচ্ছে।

এই অবস্থায় বেসরকারি পরিবহণ সংগঠন তো বটেই, সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির পক্ষ থেকেও বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবি জোরদার করা হচ্ছে। সরকার প্রথমে সর্বদলীয় কমিটি গড়ে বিষয়টি এড়াতে চেয়েছিল। অনেকের মতে, সর্বদলীয় কমিটি তৈরির মূল উদ্দেশ্যই ছিল, বাসভাড়া বৃদ্ধির দায় বিরোধীদের উপরেও চাপিয়ে দেওয়া। কিন্তু প্রধান দুই বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেস কমিটিতে সেই কমিটিতে যোগ না-দেওয়ায় ফাঁপরে পড়েছে সরকার। এ বার বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিতে ফের কমিটি গড়া হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরেরই একাংশের কর্তারা।

রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এখন রমজান মাস চলছে। সেই অজুহাতে বাসভাড়া বৃদ্ধি কিছু দিন ঠেলে দিতে পারলেই পুজোর মরসুম এসে পড়বে। তখন আবার সেই উৎসবের কারণ দেখিয়েই বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আর এক দফা পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।”

এর উল্টো মতও রয়েছে পরিবহণ দফতরে। কর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, এখন ভাড়া না-বাড়িয়ে উপায় নেই। তবে তার আগে সরকার সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়ানোর বন্দোবস্ত করে রাখছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bus fare madan mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE