Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপির মুখে নেই গোর্খাল্যান্ড, চাপে মোর্চা

সকাল থেকে নজর ছিল বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানের দিকে। ইস্তাহার প্রকাশের পরে দেখা গেল, সেখানে তেলঙ্গানা-সীমান্ধ্র প্রসঙ্গ আছে। আছে ছোট রাজ্যের পক্ষে সওয়ালও। নেই শুধু গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ! আর তাতেই দিনের শেষে পাহাড়ে রীতিমতো চাপে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। দার্জিলিঙের বিষয়টি আলাদা ভাবে না থাকায় মোর্চার অন্দরেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

সকাল থেকে নজর ছিল বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানের দিকে। ইস্তাহার প্রকাশের পরে দেখা গেল, সেখানে তেলঙ্গানা-সীমান্ধ্র প্রসঙ্গ আছে। আছে ছোট রাজ্যের পক্ষে সওয়ালও। নেই শুধু গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ! আর তাতেই দিনের শেষে পাহাড়ে রীতিমতো চাপে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। দার্জিলিঙের বিষয়টি আলাদা ভাবে না থাকায় মোর্চার অন্দরেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

গোর্খাল্যান্ড-প্রসঙ্গ না থাকা নিয়ে মোর্চাকে বিঁধে পাহাড়ে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, মোর্চা এবং বিজেপি আরও একবার ধোঁকা দিতে চাইছে। সোমবার শিলিগুড়িতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও বিজেপি এবং মোর্চাকে কটাক্ষ করেতে ছাড়েননি। তাঁর দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে পিছনের রাস্তা দিয়ে ভোট পরবর্তী জোট গড়ার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে বিজেপি। তাই গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গটি বাদ দিয়েছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে শুধু মোর্চা নেতৃত্ব নন, চাপে পড়েছেন পাহাড়ে বিজেপির প্রার্থী সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া নিজেও। বিরোধী-তির সামাল দিতে অহলুওয়ালিয়া বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। পরবর্তীতে ইস্তাহারের সংযোজনা বার হবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে গোর্খা, আদিবাসী, দার্জিলিং জেলা এবং ডুয়ার্সের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলি বিজেপি সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখবে এবং সেই মতো ব্যবস্থা নেবে।” মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিও বলেন, “পরবর্তী সময়ে সংযোজনা হিসাবে বিষয়টি ইস্তাহারে থাকবে বলে জানানো হয়েছে।”

কিন্তু কেন রাখা হল না গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ? বিজেপি নেতাদের যুক্তি, এর আগে যত গুলি পৃথক রাজ্য গঠন করেছে বিজেপি, তাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছিল। কিন্তু গোর্খাল্যান্ডের পরিস্থিতি অন্য রকম। দলের এক নেতার রসিকতা, “গোর্খাল্যান্ডের উল্লেখ না থাকায় তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুশি হবেন!”

বিজেপির অনেকেই আবার এর মধ্যে অন্তর্কলহের গন্ধ পাচ্ছেন। গত বার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থন নিয়ে যখন যশোবন্ত সিংহ পাহাড়ে প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন কিন্তু ইস্তাহারে গোর্খাল্যান্ডের উল্লেখ ছিল। এখন সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ নেতা সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া প্রার্থী বলেই কি মোদী তাতে বাদ সাধলেন? কেন না, ইস্তাহারে এই উল্লেখ থাকলে অহলুওয়ালিয়ার সুবিধাই হতো।

মোদী শিবিরের নেতাদের অবশ্য বক্তব্য, ইস্তাহারের পরতে পরতে বলা রয়েছে, পাহাড় এলাকার উন্নয়নের জন্য মোদী কী ভাবে এগোতে চান। তার জন্য বিশেষ সহযোগিতারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেখানকার প্রত্যাশা পূরণের কথা বলা হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট ভাবে দার্জিলিঙের উল্লেখ না থাকলেও কিন্তু আসলে পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে মোদীর কী ভাবনা, তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ইস্তাহারে।

যদিও তাতে চিঁড়ে ভিজছে না পাহাড়ের বিরোধীদের। দার্জিলিঙের সিপিআরএম নেতা গোবিন্দ ছেত্রী জানান, বিজেপি যে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না, তা স্পষ্ট। সে কারণেই তাঁরা সমর্থন দেননি। উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া গোবিন্দবাবুদের সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু সিপিআরএম তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে।

অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “মোর্চা এখনও পর্যন্ত মিথ্যার রাজনীতি করছে। এ বারও তারা তাই করছে। তেলঙ্গানা শব্দটি যদি বিজেপি ইস্তাহারে রাখতে পারে, তবে গোর্খাল্যান্ড কেন থাকছে না?” পাহাড়ে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক এন বি খাওয়াস বলেন, “২০০৯ সালে বিজেপি মানুষকে বোকা বানিয়েছিল। আবার বানাল। এমনকী তাদের ইস্তাহারে পাহাড় নিয়ে একটি বাক্যও ব্যয় করা হয়নি।”

বাদ গিয়েছে বাংলাকে আলাদা প্যাকেজ দেওয়ার বিষয়টিও। দলের নেতাদের মোদী জানিয়েছেন, ইস্তাহারে সব রাজ্যের উন্নয়নের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী বর্ণনা করাই ছিল লক্ষ্য। আলাদা করে কোনও রাজ্যের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করা ইস্তাহারের লক্ষ্য হতে পারে না। মোদী শিবিরের নেতাদের মতে, কংগ্রেসের মতো পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে তাঁরা বিশ্বাসী নন। তা সত্ত্বেও যে সব রাজ্য পিছিয়ে রয়েছে, সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারে। স্পষ্ট বলা হয়েছে, উন্নয়নের নিরিখে দেশের পশ্চিম প্রান্তের তুলনায় পূর্ব প্রান্ত অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ফলে ক্ষমতায় এলে দেশের পূর্ব প্রান্তের উন্নয়নের উপরেই সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হবে।

বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, “এর আগে পূর্বাঞ্চলের সমস্যাগুলিকে নিয়ে জোট বেঁধে কাজ করার চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়কের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা। ঘটনাচক্রে এই তিন জনই এনডিএ-র পুরনো শরিক। আমাদের ইস্তাহারে বলা আছে, রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের কথা। বিশেষ করে যে সব রাজ্যের সমস্যাগুলি একই ধরনের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gorkhaland morcha bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE