কখনও নরেন্দ্র মোদীকে আখ্যা দিলেন, ‘টুইট প্রধানমন্ত্রী’, কখনও কল্পিত হিসেব দিয়ে দেখালেন, কী ভাবে গত লোকসভা নির্বাচনে আর এক শতাংশ ভোট কমলেই রাজ্যের ৭০টি আসনে বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যেত।
প্রকাশ্যে বারবারই প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বিজেপিকে উড়িয়ে দেওয়ার কৌশল নিলেও, দলের মধ্যে আলোচনায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বিজেপি ভীতি কার্যত স্পষ্ট। শনিবার দুর্গাপুরে যেমন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় নানা ভাবে কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করে গেলেন, বিজেপি-জুজু আসলে সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা। আসলে তাঁদের কোনও ‘বিরোধী-ই নেই’!
সামনেই রাজ্যের কিছু জায়গায় কর্মিসভা করার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং পুরুলিয়া জেলার প্রস্তুতি সভায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেব দিলেন, “দেশের মাত্র ৩১% মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।” তাঁর দাবি, সদ্য মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে ২৬%, হরিয়ানায় ২১% ভোট পেয়েছে বিজেপি। অর্থাৎ বাকিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুকুলের দাবি, “বিহারে তো সবাই একত্রিত হয়ে হারিয়ে দিয়েছে বিজেপিকে।” তথ্যটা কি ‘ভরসাদায়ক’?
দলের শীর্ষ নেতারা ‘কল্পিত’ তথ্য খাড়া করে ‘বরাভয়ের’ হাত তুললেও দলীয় কর্মীদের মনেই তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীও। দলের অন্দরের খবর, পরিসংখ্যান দিয়ে দলের জয় নিয়ে ‘সন্দিহান’ হওয়ার অবকাশ নেই বলে যতই আশ্বাস দেওয়া হোক, কর্মীরা হালের ঘটনাগুলি দেখছেনবীরভূমের চৌমণ্ডলপুর থেকে বারাসতের এবিভিপির ‘দাপট’ সবকটি ঘটনাতেই স্পষ্ট, শাসক দল ‘ভয়’ পেয়েছে। এমনই দাবি বিজেপি-র।
বীরভূমের মাখড়ায় গ্রাম-ছাড়া কর্মীদের ঘরে ফেরাতে গিয়ে মুখ পুড়েছে দলের। বারাসতে বিজেপি-র ছাত্র সংগঠনের আন্দোলন, পুলিশ ও দলীয় কর্মীদের দিয়ে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে গিয়েও পিছু হটতে হয়েছে শাসক দলকে। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, “আমাদের উত্থান দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে বলেই, শিলিগুড়িতে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঘটনাতেও নাক গলিয়েছে তারা। বলছে বিজেপিতে যোগ দেওয়া যাবে না।”
এ দিন, দুর্গাপুরের সভায় উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল, মনিরুল ইসলাম ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বর্ধমানের মন্ত্রী মলয় ঘটক ও স্বপন দেবনাথ, বাঁকুড়ার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরূপ চক্রবর্তী ও দীপালি সাহা, পুরুলিয়ার শান্তিরাম মাহাতো ছাড়াও সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডেরা। এ দিনই অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুক পাড়ুইয়ে সভা করে বিজেপিতে চলে যাওয়া কর্মীদের ফেরার আর্জি জানিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু মুকুলের হিসেব আলাদা “লোকসভা নির্বাচনে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। ১৩০টি আসনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আর এক শতাংশ ভোট কম পেলে আরও ৭০ টিতে জামানত বাজেয়াপ্ত হত।”
দু’দিন আগেই মেদিনীপুরে মুকুল দাবি করেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের ভোট শতাংশের হিসেবে বামেরাই তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ। কিন্তু এ দিন তাঁর আক্ষেপ, “আসলে কোনও বিরোধী নেই। কল্পিত বিরোধী পক্ষ তৈরি করেছে কিছু সংবাদমাধ্যম।”
বিজেপি ‘সমস্যা’ না হলেও আক্রমণের অন্যতম চাঁদমারি ছিলেন মোদী। মুকুলের কটাক্ষ, “এখন দেশে টুইটার প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। দেশ নিয়ে মজা হচ্ছে।” সে ক্ষেত্রে, দলের কর্মীদের কর্তব্য কী? মুকুলের সহজ দাওয়াই“মলয়কে (ঘটক) বলছি, খরচ হয়তো একটু বেশিই হবে, সামনে যে কর্মিসভা হবে, সেখানে যেন কর্মীদের হাতে কাগজ-কলম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নেত্রী যা বলবেন, কর্মীরা নোট নিতে পারবেন।”
যা শুনে বিজেপি বলছে‘দিদি’র কল্পিত তথ্য টুকে কি আর ভোটে জেতা যায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy