Advertisement
E-Paper

বিল মেটাবে সেনবাবু, মদ-মোচ্ছবে মন্ত্রীমশাই দিলদরিয়া

সুসজ্জিত ঘরে মহার্ঘ টেবিলের উপরে কাটগ্লাসের দামি সুরাপাত্র। তাতে টলটল করছে মনভোলানো পানীয়। হাটে-বাজারে যা মেলে না। নাম হানেসি পারাদি রেয়ার কনিয়্যাক। খাস ফরাসি মুলুক থেকে আমদানি। নাম যেমন, দামও তেমন। পাঁচতারা হোটেলে এক বোতলই পড়ে যাচ্ছে নয় নয় করে চল্লিশ হাজার টাকা! তার উপরে কর। তাতে কী! টাকা তো দেবে সেনবাবুরা! অতএব, কুছ পরোয়া নেই। সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বসে মন্ত্রীমশাই তা-ই হুকুম করেছেন। ঢালাও অর্ডার। পাঁচ-ছ’বোতল খালি হওয়া কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার! মানে এক সন্ধের মদ-পার্বনেই আড়াই লাখ!

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৯

সুসজ্জিত ঘরে মহার্ঘ টেবিলের উপরে কাটগ্লাসের দামি সুরাপাত্র। তাতে টলটল করছে মনভোলানো পানীয়। হাটে-বাজারে যা মেলে না। নাম হানেসি পারাদি রেয়ার কনিয়্যাক। খাস ফরাসি মুলুক থেকে আমদানি।

নাম যেমন, দামও তেমন। পাঁচতারা হোটেলে এক বোতলই পড়ে যাচ্ছে নয় নয় করে চল্লিশ হাজার টাকা! তার উপরে কর। তাতে কী! টাকা তো দেবে সেনবাবুরা!

অতএব, কুছ পরোয়া নেই। সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বসে মন্ত্রীমশাই তা-ই হুকুম করেছেন। ঢালাও অর্ডার। পাঁচ-ছ’বোতল খালি হওয়া কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার! মানে এক সন্ধের মদ-পার্বনেই আড়াই লাখ!

সাঙ্গোপাঙ্গদের ফূর্তিও ধরে না। সস্তার রাম-হুইস্কি খাওয়া জিভে এমন স্বর্গীয় আস্বাদ! তা-ও আবার ফাইভ স্টারের কেতাদুরস্ত স্যুইটে বসে!

মদের নাম উচ্চারণ করতে দাঁত ভাঙলেও সেবনের পরে ঘোর যেন আর কাটে না! “এ শুধু দাদাই পারেন।” এক বাক্যে মানতে মানতে সিঁড়ি ভাঙেন তাঁরা।

বলিউডের সিনেমা নয়। ঘোর বাস্তব এই ঘটনা খাস কলকাতার। অন্তত সিবিআই এবং ইডি’র তা-ই দাবি। সল্টলেকের এক পাঁচতারা হোটেলের তথ্য ঘাঁটতে ঘাঁটতে সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তকারী দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে এমনই ছবি উঠে এসেছে। বাজার থেকে তোলা সারদার টাকার হিসেব মেলাতে যাঁরা যোগ-বিয়োগ করে কূল পাচ্ছেন না, মন্ত্রী ও তাঁর পারিষদদলের পান-বিলাসের বহর দেখে সেই তদন্তকারীরা বাস্তবিকই হাঁ!

বহরটা কী রকম?

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রের খবর: পাঁচতারা হোটেলটির তথ্য বলছে, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র সেখানকার নিয়মিত অতিথি ছিলেন। কুণাল ঘোষও মাঝে-মধ্যে গিয়ে থাকতেন। ফি মাসে গড়ে দশ-বারো দিন মদনের হোটেলবাসের খরচ মেটাতেন সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত

সেন কিংবা অন্য কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তারা। এ-ও জানা গিয়েছে, স্যুইটের চড়া ভাড়ার সঙ্গে অঢেল খাবার সব মিলিয়ে প্রতি বারই বিল দাঁড়াত আকাশছোঁয়া।

আর তার তিনগুণ বিল হতো ‘মন্ত্রী-গোষ্ঠী’র পানীয় বাবদ। ‘হানেসি পারাদি’র মতো আরও বহু নামী-দামি মদিরায় ভরপুর হয়ে উঠত তাঁদের বিনোদনের আসর। তালিকায় থাকত ওয়াইন, ড্রামবুই, সিঙ্গল মল্ট স্কচ। কোনওটা ফ্রান্স, কোনওটা ইতালি, কোনওটা বা স্কটল্যান্ডে তৈরি। কোনওটার দাম তিরিশ হাজার তো কোনওটা চল্লিশ হাজার। হোটেলের এক কর্তার কথায়, “সাধারণ সস্তার পানীয় মন্ত্রী পছন্দ করতেন না। দলবল নিয়ে দামি মদ খেতেন। সব সময়ে যে উনি রাতে হোটেলে থাকতেন, তা নয়। কখনও দুপুর বারোটা নাগাদ ঢুকে সন্ধে পর্যন্ত কাটিয়ে বেরিয়ে যেতেন।”

‘দাদা’র দাক্ষিণ্যে সে সব দিনে ‘ভাই’দের সন্ধেগুলোও হয়ে উঠত যারপরনাই রঙিন। ইডি-র অফিসারদের প্রাথমিক অনুমান, সল্টলেকের হোটেলটিতে তো বটেই, লগ্নিসংস্থার টাকায় শহরের অন্যান্য পাঁচতারাতেও নেতা-মন্ত্রীরা এ ভাবে নিয়মিত সপার্ষদ আমোদ করে গিয়েছেন। হোটেলগুলি থেকে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। যুবভারতী স্টেডিয়াম লাগোয়া এক সাধারণ হোটেলেরও যাবতীয় হিসেব-পত্র তদন্তকারীরা দেখতে চেয়েছেন। ইডি-সূত্রের দাবি, ওখানে বসে সারদা ও অন্য এক লগ্নিসংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেছেন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

এ দিকে নেতা-মন্ত্রীদের হোটেল-বিহারের নিয়মেও যে বিস্তর গলদ!

ইডি-র তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা প্রায় কেউই নির্ধারিত পদ্ধতির ধার ধারেননি। হোটেলও মুখ খোলেনি। নিয়ম হল, যিনি থাকতে আসছেন, তাঁর পরিচয়পত্রের একটি কপি হোটেলের জিম্মায় থাকবে। তাঁর বিল অন্য কেউ মেটালেও এর ব্যত্যয় হবে না। বিশ্ব জুড়ে সমস্ত পাঁচতারায় অতিথির ক্রেডিট কার্ড ‘সোয়াইপ’ করে রাখাও নিয়ম। হোটেল ছাড়ার সময়ে কিছু বকেয়া থাকলে ক্রেডিট কার্ড থেকে কেটে নেওয়া হয়। উপরন্তু অতিথিকে দিয়ে একটা ফর্ম পূরণ করানো আবশ্যিক, যেখানে তাঁর সই থাকতে হবে। কিন্তু ইডি’র দাবি: রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও দলের নেতারা পাঁচতারায় এসে থাকার সময়ে পরিচয়পত্রের কপি দেননি। ফর্ম পূরণের বালাই রাখেননি। তাঁদের কাছে ক্রেডিট কার্ডও চাওয়া হয়নি।

কেন হয়নি?

এক হোটেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: মন্ত্রীর কাছে পরিচয়পত্র বা ক্রেডিট কার্ড চাওয়াটা তাঁদের সাহসে কুলিয়ে ওঠেনি। ফর্মে সই করতে বলাটাও দস্তুরমতো কঠিন ছিল। তবে কোন ঘরে কোন অতিথি কোন সময়টা কাটিয়ে গিয়েছেন, তার বিবরণ হোটেলের কম্পিউটারে মজুত রয়েছে।

হোটেল-কর্তৃপক্ষের বয়ান, কর্মীদের সাক্ষ্য আর ওই রেকর্ড এখন তদন্তকারীদের বড় ভরসা।

madan mitra liquor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy