Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বৃষ্টি হয়নি, সঙ্কটে আমন ধানের চাষ

প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় রাজ্যে খরিফ ধানের চাষে সমস্যা দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গে অতি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি হওয়ায় বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি না হওয়ায় কম জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। খরিফ মরসুমে কম করে তিন লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। এর আগে বোরো ধানের মরসুমে প্রায় দু’লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ কম হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় রাজ্যে খরিফ ধানের চাষে সমস্যা দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গে অতি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি হওয়ায় বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি না হওয়ায় কম জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। খরিফ মরসুমে কম করে তিন লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। এর আগে বোরো ধানের মরসুমে প্রায় দু’লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ কম হয়েছিল।

রাজ্য কৃষি দফতরের অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “উত্তরবঙ্গে অতিবৃষ্টিতে ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির অভাবে অনেক জায়গায় খরিফ চাষে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সময়মতো প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।” কৃষি অধিকর্তা জানিয়েছেন, ভাল বৃষ্টি না হলে ধানের গুণমানের উপরে তার প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া বিকল্প চাষে জোর দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। কম জলে শ্রী (সিস্টেম অফ রাইস ইন্টেসিফিকেশন) পদ্ধতির চাষেও জোর দেওয়া হচ্ছে।

গত খরিফ মরসুমে রাজ্যে ৪১ লক্ষ হেক্টর জমিতে আউশ ও আমন চাষ হয়েছিল। চলতি বছরে ৪২.৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে আউশ ও আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। সাধারণত রাজ্যে ৪৩ হেক্টর জমিতে আউশ ও আমন চাষ হয়। খরিফ মরসুমে রাজ্যে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। গত বছর এই সময়ে গোটা জমিতেই জমিতে চাষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৪০ লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা উদ্বিগ্ন কৃষি দফতরের কর্তারা। কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে তা নিয়ে দফতরে আলোচনা চলেছে। দফতরের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।

ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে এলাকার চাষিদের দাবি। মাটির নীচে জলস্তর নেমে যাওয়ায় সেখানে পাম্পসেটে জল তোলা যাবে না বলে জানিয়েছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। আমন চাষে সেচের বিষয়টি নিয়ে কৃষি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে সেচ দফতরের কর্তাদের কয়েক বার বৈঠক হয়েছে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই দফতরের কর্তাদের বৃষ্টির উপরেই ভরসা করতে হচ্ছে।

কৃষি দফতরের কর্তারা আশঙ্কা করছেন বৃষ্টি-পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে প্রায় পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষ হবে না। তবে বেসরকারি হিসেবে জমির পরিমাণ অনেকটা বাড়তে পারে বলেই খবর। এর ফলে নিশ্চিত ভাবে ধান উৎপাদন কমবে। তার জেরে খাদ্যশষ্যের দামে প্রভাব পড়বে। খরিফ মরসুমে চাষ কম হলে সমস্যায় পড়বেন কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ীরাও। সার, বীজ, কীটনাশকের বিক্রি কমে যাওয়ায় গ্রামের ছোট ব্যবসায়ীদের সমস্যা হবে। গত মরসুমে অনেকেই জল ও শ্রমিকের অভাবে বোরো ধান চাষ করতে পারেননি। তাঁদের অনেকেই বিকল্প চাষে মন দিয়েছিলেন। সেই চাষিরা ভেবেছিলেন খরিফ মরসুমে বৃষ্টি হলে ধান চাষ করবেন। কিন্তু প্রকৃতি সহায় না হওয়ায় তাঁরাও চিন্তায় রয়েছেন। কৃষি দফতরের হিসেবে এ বারে রাজ্যে প্রায় ১২ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। আমন চাষে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বীরভূম জেলায়। পুরুলিয়া জেলার এক কৃষি আধিকারিক বলেন, “আমরা সকলেই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভাল বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। কেননা, বীজতলা তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেক জমিতে বৃষ্টির অভাবে রোয়ার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।” একই ভাবে বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলায় বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে কিছুটা হলেও বর্ধমান ও হুগলি জেলায় বৃষ্টি ভালই হয়েছে। সেখানে চাষের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। পূর্ব মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় অতিবৃষ্টির জেরে বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ধান রোয়ার পরেও তা নষ্ট হয়েছে। কৃষি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, ওই দুই জেলার নীচু এলাকায় জল জমলেও উঁচু জমিতে চাষ ভাল হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rain aman paddy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE