Advertisement
E-Paper

বিস্ফোরণের পরেই গ্রাম ছেড়ে দেয় কওসরের শ্যালক কদর

সুতোটা মিলেছিল বিস্ফোরণের ঠিক পরে পরেই। বীরভূমের কীর্ণাহারের সঙ্গে যোগ রয়েছে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের। সেই সুতোর সন্ধান পেয়ে গিয়েছেন গোয়েন্দারা। সুতোর নাম কওসর! খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত এবং বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিনের নেতা কওসরের শ্বশুরবাড়ির কীর্ণাহারের নিমড়া গ্রামে। বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধৃত রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে জেরা করেই এই তথ্য জানা গিয়েছে বলে দাবি রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ বা সিআইডি-র।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৮
বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত কওসরের শ্যালক কদর শেখের বন্ধ বাড়ি। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত কওসরের শ্যালক কদর শেখের বন্ধ বাড়ি। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

সুতোটা মিলেছিল বিস্ফোরণের ঠিক পরে পরেই। বীরভূমের কীর্ণাহারের সঙ্গে যোগ রয়েছে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের।

সেই সুতোর সন্ধান পেয়ে গিয়েছেন গোয়েন্দারা। সুতোর নাম কওসর! খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত এবং বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিনের নেতা কওসরের শ্বশুরবাড়ির কীর্ণাহারের নিমড়া গ্রামে। বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধৃত রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে জেরা করেই এই তথ্য জানা গিয়েছে বলে দাবি রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ বা সিআইডি-র। স্ত্রী জিন্নাতুর ওরফে লক্ষ্মীকে নিয়ে কওসরের নিয়মিত যাতায়াতও ছিল নিমড়ার শ্বশুরবাড়িতে। বিস্ফোরণের পরে পরেই কওসরের শ্যালক কাদের ওরফে কদর কাজী সপরিবার উধাও হয়ে যায় বাড়ি থেকে।

ঘটনাচক্রে নানুর থানার অন্তর্গত এই কীর্ণাহার অঞ্চলের মিরিটি গ্রামেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি। বৃহস্পতিবার মিরিটি থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরের নিমড়া গ্রামে প্লাস্টারহীন কদর কাজীর এক তলা পাকা বাড়িটা এ দিন দিনভর ছিল যাবতীয় কৌতূহলের কেন্দ্রে। নিঝুম দুপুরে গাছগাছালি ঘেরা বাড়িটার সামনে গিয়ে চোখে পড়ল, দরজায় তালা। প্রতিটি জানলায় পর্দা ফেলা। উনুনে রয়ে গিয়েছে আধপোড়া কাঠ ও কালি। উঠোনে টাঙানো দড়িতে তখনও ঝুলছে কাপড়-চোপড়। চরে বেড়াচ্ছে মুরগির বাচ্চা। আগন্তুক দেখে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসা গ্রামেরই কৌতূহলী কিছু মুখ জানাল, কিছুদিন ধরে কদর ও তাঁর স্ত্রী-মেয়ের দেখা মেলেনি। কদরের মা অর্থাৎ, কওসরের শাশুড়ি শরিফা বিবি ছিলেন বাড়িতে। দিন দুয়েক আগে থেকে তিনিও বেপাত্তা! হঠাৎ কেন গোটা পরিবার বাড়ি খালি করে চলে গেল, প্রতিবেশীদের মনে সে প্রশ্ন জাগলেও বিশেষ কোনও সন্দেহ হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, কদরের আদি বাড়ি ছিল নিমড়ারই মাঠ পাড়ায়। বছর দশেক আগে তাঁর বাবা, পেশায় দিনমজুর রহমত কাজী মারা যান। তাঁর ছয় মেয়ে আর একমাত্র ছেলে কদর। জীবিত অবস্থায় তিনি গ্রামেই তিন মেয়ের বিয়ে দেন। বাকি তিন মেয়ের ভরণপোষণের জন্য রহমত কাজী তাদের বর্ধমানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় পাঠান। মাদ্রাসায় থাকার সময় মৌলবীদের সঙ্গেই দুই মেয়ের বিয়ে হয়। নিমড়া গ্রামেরই মাঠপাড়ায় শ্বশুরবাড়ি কদরের বড় দিদি আদরী বিবির। তিনি জানালেন, ওই মাদ্রাসায় পড়াকালীন দু’বছর আগে কওসরের সঙ্গে লক্ষ্মী ওরফে জিন্নাতুরের আলাপ হয়। তার পরেই বিয়ে।

কওসর যে লক্ষ্মীকে নিয়ে নিয়মিত শ্বশুরবাড়িতে আসত, সে কথাও শোনা গেল পড়শিদের মুখে। কদরের সঙ্গে কওসরের ঘনিষ্ঠতাও ছিল। গ্রামের লোক জানালেন, পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়া এগোয়নি তার। রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে হিসেবে কাজ করা শুরু করে পরে নিজেই রাজমিস্ত্রি হয়। চেন্নাই-মুম্বই ঘুরেও এসেছে সে। গ্রামবাসী ফিরোজ শেখের দাবি, “আমি ছোট থেকে কদরের সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করছি। কোনও খারাপ কাজ করতেই পারে না। ওই ছেলে খুব ধর্মভীরু।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ছোট থেকেই ধর্মপ্রাণ কদরের বর্ধমানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় যাতায়াত ছিল। সেই সুবাদে কোনও এক সময়ে কওসরের সঙ্গে কদরের আলাপ। গ্রামবাসীদের একাংশ জানিয়েছেন, জামাত নেতা কওসরের সঙ্গে লক্ষ্মীর বিয়ের পরে কদরের ভোল বদলাতে শুরু করে। তার হাতে কাঁচা টাকা আসতে শুরু করে কোনও মাধ্যম থেকে। গ্রামের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য করাও শুরু করে কদর। ইদানীং তাকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেও আর দেখেননি পড়শিরা।

কিন্তু, পড়শিদেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে, কদর হঠাৎ সপরিবার কেন গা ঢাকা দিলেন? আদরী বিবির দাবি, “কদর কোনও খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে শুনছি, কওসরের সঙ্গে কদরের যোগাযোগের কথা। আত্মীয়তা থাকলে যোগাযোগ থাকতেই পারে। তার মানে এই নয়, কেউ খারাপ কাজে যুক্ত থাকলে, অন্য জনও যুক্ত থাকবে।” তা হলে তাঁর ভাই ও মা পালালেন কেন? “কওসরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য পুলিশ ধরে নিতে পারে, হয়তো সেই ভয়েই ভাই পালিয়েছে”দাবি আদরী বিবির। একই কথা কিছু গ্রামবাসীরও।

এ দিনই বিকেলে নানুর থানার পুলিশের একটি দল কীর্ণাহারেরই কাজী মার্কেটে হানা দিয়ে এক ব্যক্তিকে আটক করে। ওই ব্যক্তির মুদিখানা সংলগ্ন বাড়িতে তল্লাশিও চালায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, নিমড়া সংলগ্ন কাফেরপুর গ্রামের ওই বাসিন্দা বছর দশেক ধরে কাজী মার্কেটে দোকান ও বাড়ি করেছেন। পুলিশ তাঁকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় ওই ব্যক্তি বলেন, “আমার এক ছেলে কলকাতায় চাকরি করে। ছেলের শ্বশুরবাড়ির সন্ধান দেওয়ার কথা বলে পুলিশ আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।” এর বেশি তাঁকে আর কিছু বলার সুযোগ দেননি পুলিশকর্মীরা। বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। এ দিনই বোলপুরে নাগরিকত্বের নথি না থাকার কারণে এক বাংলাদেশি-সহ তিন জনকে পুলিশ আটক করে।

khagragarh blast case arghya ghosh kirnahar bardwan NIA CID
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy