Advertisement
E-Paper

বাস-ভাড়া বৃদ্ধি চেয়ে বিধায়কও সরব, অনড় মন্ত্রী

বাস-মালিক তো বটেই। ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে সরব বিভিন্ন মহল। এ বার পরোক্ষে বাস-ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করলেন শাসক দলের বিধায়ক এবং এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষও। ওই তৃণমূল বিধায়কের মতে, ঠিকঠাক পরিষেবা ও স্বাচ্ছন্দ্য পেলে মানুষের বেশি পয়সা দিতে আপত্তি নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০৩:১৯

বাস-মালিক তো বটেই। ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে সরব বিভিন্ন মহল। এ বার পরোক্ষে বাস-ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করলেন শাসক দলের বিধায়ক এবং এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষও।

ওই তৃণমূল বিধায়কের মতে, ঠিকঠাক পরিষেবা ও স্বাচ্ছন্দ্য পেলে মানুষের বেশি পয়সা দিতে আপত্তি নেই। বাসের ভাড়া না-বাড়ালে যে পরিবহণ শিল্পে সঙ্কট তীব্র হবে, তা-ও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ধর্মতলায় এক অনুষ্ঠানে তিনি যে মঞ্চ থেকে এ-সব কথা বলেন, সেখানে তার পাশেই ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি অবশ্য ওই মঞ্চেই পাল্টা জানিয়ে দেন, এখনই বাস-ভাড়া বাড়াবে না সরকার।

২০১২ সালের অক্টোবরে শেষ বার বাসের ভাড়া বাড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। তার পর থেকে ডিজেলের দাম ২০ শতাংশেরও বেশি বাড়লেও তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসের ভাড়া বাড়েনি। আয় না-বাড়ায় বেসরকারি পরিবহণের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলিও বেহাল হয়ে পড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, বাস কমে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। সেই জন্য তিনি পরিবহণ দফতরকে বাস বাড়াতে বলেছেন। অথচ অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম অগ্রাহ্য করে বাস-ভাড়া বাড়ানোর বিপক্ষেই রায় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পরিবহণ দফতরের অনেক কর্তাই অবশ্য তমোনাশবাবুর শুক্রবারের বক্তব্যই সমর্থন করছেন। তাঁদের মতে, রাজ্যে পরিবহণের যা হাল, তাতে অবিলম্বে ভাড়া না-বাড়ালে পুরো ব্যবস্থাটাই পঙ্গু হয়ে পড়বে। ভাড়া সামান্য বাড়লে যাত্রীদের যে-অসুবিধা হবে, তার চেয়ে ঢের বেশি ভোগান্তি হচ্ছে প্রতিদিন রাস্তায় বেরিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়েও বাসের দেখা মেলে না। একাধিক বাস বা অটোরিকশার সওয়ার হয়ে একই দূরত্ব যেতে বরং অনেক বেশি খরচ করতে হয় সাধারণ মানুষকে।

এই অবস্থায় তমোনাশবাবুর এ দিনের বক্তব্যে বাস্তবতারই প্রতিফলন দেখছেন পরিবহণকর্তা থেকে বাস-মালিক সকলেই। এ দিন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা বা এসবিএসটিসি-র ‘বায়ো টয়লেট’ যুক্ত বাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, কেন্দ্র একতরফা ভাবে ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় মাসে এসবিএসটিসি-র খরচ বেড়েছে প্রায় এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। কিন্তু বাসের ভাড়া বাড়ছে না। পরিবহণে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। “বেশি পয়সা দিতে মানুষের আপত্তি নেই। তাঁরা একটু স্বাচ্ছন্দ্য চান,” বলেছেন শাসক দলের বিধায়ক।

বিধায়ক যা-ই বলুন, সরকার যে যাত্রীদের হয়রানি কমানোর চেয়েও সুলভ জনপ্রিয়তার নীতিকেই এখনও প্রাধান্য দেবে, এ দিনই পরিবহণমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তমোনাশবাবুর ওই মন্তব্যের একটু পরে একই মঞ্চে পরিবহণমন্ত্রী জানিয়ে দেন, বাসের ভাড়া এখনই বাড়ানো হচ্ছে না। মদনবাবু বলেন, “এসবিএসটিসি-র মাসিক খরচ বেড়েছে এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। সরকারের তো সব মিলিয়ে বেড়েছে আট কোটি। আমরা কী করব!”

অথচ অর্থনীতির সরল নিয়মটাই হল, জ্বালানির খরচ বাড়লে ভাড়া বাড়বে। কিন্তু সরকারে সেটা মানার গরজ দেখাচ্ছে না। উল্টে ডিজেলের দাম বাড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে মদনবাবুর দাবি, “যদি কেন্দ্র একতরফা ভাবে ডিজেলের দাম বাড়ায়, আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে।” মন্ত্রীর মতে, ‘নতুন চিন্তা’ মানে ভাড়া বাড়ানো নয়। অন্য উপায়ে নিগমগুলির আয় বাড়ানো।

কিন্তু এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভাড়া না-বাড়িয়ে অন্য উপায়ে পরিবহণ নিগমগুলির আয় বাড়ানোর কথা বললেও এখনও পর্যন্ত সেই বিষয়ে কোনও যথাযথ দিশাই দেখাতে পারেনি সরকার।

এর মধ্যেই আসছে পরিকাঠামো বাড়ানোর প্রশ্নটি। সেই কাজ কতটা হচ্ছে, তার জবাব মিলছে না। আপাতত রাজ্যে প্রথম সরকারি ‘বায়ো টয়লেট’ যুক্ত বাসের উদ্বোধন করে মন্ত্রী মদনবাবু জানান, ১৫০ কিলোমিটারের বেশি চলে, এমন সরকারি বাসে ‘বায়ো টয়লেট’ থাকবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানের কাছে নতুন বাস টার্মিনাস গড়তে এসবিএসটিসি-কে জমি দেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

bus fare
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy