দু’মাসের মধ্যেই পাড়ুইয়ের বধূকে নির্যাতনের ঘটনায় চার্জশিট জমা দিল সিআইডি। সোমবার বিকেলে সিউড়ি কোর্ট অফিসে ওই চার্জশিট জমা পড়েছে। মঙ্গলবার সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের হাতে তা পৌঁছেছে।
বুধবার মামলার সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একটি মুখবন্ধ খামে সিজেএমের কাছে ওই চার্জশিট জমা পড়েছে বলে জানি। এর বেশি কিছু এ ব্যাপারে বলতে পারব না।” এ দিনই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করার কথা থাকলেও সিজেএম আদালতে না আসায়, তা হয়নি বলে কুন্তলবাবু জানিয়েছেন। সিআইডি সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরে চার সদস্যের একটি দল নির্যাতিতার বাড়ি গিয়েছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক মহিলা অফিসার সোমা দাস, স্বপ্না ঘোষ ছাড়াও ছিলেন ঘটনার তদন্তকারী অফিসার প্রশান্ত নন্দী এবং বিশ্বজিত্ চট্টোপাধ্যায়। কোর্ট অফিসে প্রশান্তবাবুই চার্জশিট জমা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের পুলিশ আজও গ্রেফতার করতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি অন্য এক অভিযুক্তের খোঁজে এসে পাড়ুইয়ের সাত্তোর গ্রামের বিজেপি সমর্থক পরিবারের এক বধূর (সম্পর্কে অভিযুক্তের কাকিমা) বাপেরবাড়ি (বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা) গিয়ে তাঁর উপর পুলিশ ও শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। পরিবারের দাবি, পুলিশ ওই মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে রাতভোর অকথ্য অত্যাচার চালায়। নির্যাতিতার অভিযোগ, তাঁকে গাছে বেঁধে লাঠি দিয়ে মারধর করার পাশাপাশি ব্লেড দিয়ে হাতের তালু চিড়ে দেয় পুলিশ। এমনকী শরীরে বিছুটি পাতাও ঘষে দেওয়া হয়। কিছু পুলিশকর্মী তাঁর শ্লীলতাহানি করেন বলেও তাঁর দাবি। পরে পুলিশ তাঁকে বেহুঁশ অবস্থায় ইলামবাজার থানায় রেখে যায়। সকালে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পুলিশ তাঁকে বাড়িতে ফেরায়।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের ওসি কার্তিকমোহন ঘোষের সঙ্গে ছ’জনের একটি দল ওই অভিযান চালিয়েছিল। নির্যাতিতা বধূ ও পরিবারের আরও অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গেই সাত্তোর এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মীও তাঁর উপর অত্যাচার চালিয়েছিল সে দিন। এফআইআর-এ যদিও তাঁরা কোনও পুলিশকর্মীর নাম দেননি। ঘটনার কথা প্রকাশ্য আসতেই ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ে বীরভূম পুলিশ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মহিলা সংগঠন, সাধারণ মানুষ তো বটেই ঘটনার নিন্দায় সামিল হন পুলিশ কর্মীদের একাংশও। স্বয়ং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী রাজ্য পুলিশের ডিজিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করে হাইকোর্ট।
শেষমেশ তত্কালীন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়কে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করান। তার পরে সাসপেন্ড করা হয়েছিল অভিযানে সামিল এসওজি-র ওসি কার্তিকমোহন ঘোষকে। তিনি এবং আরও দুই কনস্টেবল-সহ মোট তিন জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছিল। এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ-সহ বাকি ৯ পুলিশকর্মীকে শো-কজ করা হয়েছিল। তার পরেই ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি। নির্যাতিতা বধূ এবং আত্মীয়দের সিউড়ি আদালতে গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়।
সিআইডি তদন্তে অবশ্য প্রথম থেকেই আপত্তি তুলেছে নির্যাতিতার পরিবার। এ দিন ওই বধূ বলেন, “প্রথম থেকে আমি এবং আমার পরিবার বলে আসছি, পুলিশ এবং সিআইডি পক্ষপাতদুষ্ট। তারা শাসক দল তৃণমূলের নির্দেশ মেনে কাজ করছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও পুলিশদের ধরপাকড় তো দূর জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি।” তাঁর সংযোজন, “আমরা সিবিআই তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে যোগাযোগও করেছি। আদালতের উপর ভরসা আছে। ন্যায্য বিচার পাব। সকল দোষীরা ধরা পড়বে।”
এ দিন চার্জশিট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলার নতুন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “বিষয়টি সিআইডি দেখছে। চার্জশিট প্রসঙ্গে তারাই বলতে পারবেন।” সিআইডি-র কেউ-ই অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy