Advertisement
১১ মে ২০২৪

বন্ধ চা বাগানে অপুষ্টিতে মৃত ৬, অভিযোগ

চার দিনের ব্যবধানে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ির বন্ধ রায়পুর চা বাগানে। বাগান সূত্রের খবর, সম্প্রতি দু’টি সদ্যোজাত শিশু, দু’জন মহিলা ও দু’জন পুরুষ মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জিতবাহান মুণ্ডা (৫০) নামে এক শ্রমিক। শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত জিতবাহান। পরপর মৃত্যুর খবর চাউর হতে এদিন সকালে বাগানে যান মহকুমাশাসক।

ছবিটি তোলা হয়েছিল দুপুর ১২টা নাগাদ। ঘণ্টাপাঁচেক পরে মৃত্যু হয় বন্ধ রায়পুর চা বাগানের শ্রমিক জিতবাহান মুন্ডার। ছবি:  সন্দীপ পাল।

ছবিটি তোলা হয়েছিল দুপুর ১২টা নাগাদ। ঘণ্টাপাঁচেক পরে মৃত্যু হয় বন্ধ রায়পুর চা বাগানের শ্রমিক জিতবাহান মুন্ডার। ছবি: সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

চার দিনের ব্যবধানে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ির বন্ধ রায়পুর চা বাগানে। বাগান সূত্রের খবর, সম্প্রতি দু’টি সদ্যোজাত শিশু, দু’জন মহিলা ও দু’জন পুরুষ মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জিতবাহান মুণ্ডা (৫০) নামে এক শ্রমিক। শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত জিতবাহান। পরপর মৃত্যুর খবর চাউর হতে এদিন সকালে বাগানে যান মহকুমাশাসক। মেডিক্যাল টিম নিয়ে এলাকা ঘুরে দেখেন জলপাইগুড়ি সদর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। যদিও শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পরে অপুষ্টিতে শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ জুন থেকে ২৬ জুনের মধ্যে যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিন জন শ্রমিকের নাম সেলিনা তিরকি (৬০), তেতরি বড়াইক (৩৫) এবং বাসু ওঁরাও (৫২)। সেলিনা ও তেতরি মারা যান ২২ জুন। বাসুর মৃত্যু হয় ২৩ জুন। ওই দিন ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মারা যায় লীলাবতি মুণ্ডার সদ্যোজাত সন্তান। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রিয়া রজক নামে আরও এক প্রসূতির সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু হয়।

মহকুমাশাসক সীমা হালদার জানান, অনাহার অথবা অপুষ্টিতে মৃত্যুর অভিযোগ ঠিক নয়। তিনি জানিয়েছেন, বাগানে ঘুরে শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জেনেছেন, তিন জন শ্রমিক ‘সেরিব্রাল অ্যাটাক-এ’ মারা গিয়েছেন। এ ছাড়া দুই সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে শরীরের মধ্যে রক্তক্ষরণের কারণে। তবে তিনি জানান, বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে বিশেষ ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজ চলছে। আইসিডিএস চালু আছে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, এই চা বাগানের কিছু পরিবারের রোগীদের মধ্যে রক্তাল্পতার সমস্যা রয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন বাগানে মেডিক্যাল ক্যাম্প করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, “বাগান শ্রমিকদের একাংশ নিয়মিত ওষুধ খান না।” রোগাক্রান্তদের অনেকে নানা ধরনের নেশা করেন বলেও তাঁর সন্দেহ।

কিন্তু প্রশাসনের কর্তাদের দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি চা শ্রমিক সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে-র। তিনি জানান, ২০০৩ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম বাগান বন্ধ হয়। এর পরে ২০০৯ সালের ৩ অগস্ট খুললেও ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর ফের বন্ধ হয়। এরপর থেকে ৫৮৫ জন শ্রমিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ঠিক মতো খাবার না পেয়ে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছেন অনেকেই। তিনি বলেন, “প্রশাসনের কর্তারা সমস্যা আড়াল করার চেষ্টা করছেন। বাগান খোলার ব্যবস্থা না হলে বিপদ বাড়বে।” চিত্তবাবুর সঙ্গে একমত বাগানের মোহন বড়াইক, জয়দীপ বড়াইক, শুকরা মুণ্ডার মতো শ্রমিকরা। তাঁদের অভিযোগ, আইসিডিএস সেন্টার থাকলেও খাবারের অভাবে দু’দিন চলার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। রেশনে জিআর হিসেবে যে আতপ চাল দেওয়া হচ্ছে সেটা পচা, পোকা ধরা তাই কেউ খেতে পারে না।

বাগানের গুদাম লাইনে আইসিডিএস সেন্টারের কর্মী রেখা রজকও জানান, ৩৬ জন শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও তা সেটা সম্ভব নয়, কারণ খাবারের সরবরাহ ঠিক নেই। তাই দু’তিন দিন খোলার পরে বন্ধ রাখতে হয়।

তবে খাদ্য সরবরাহ দফতরের জলপাইগুড়ি মহকুমা আধিকারিক দাওয়া অয়াংদি লামার দাবি, ওই চাল মোটেই পোকা নয়। আইসিডিএস সেন্টারেও খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

এ দিকে, বাগান এলাকায় একশো দিনের কাজ হলেও কাজ শেষ করার পরেই মজুরি না মেলায় হেঁসেলে উনুন জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে খোদ তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান হেমব্রম অভিযোগ তুলেছেন। তিনিও মনে করেন বাগান না খুললে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কিন্তু কবে বাগানের দরজা খুলবে সেটা কেউ জানেন না। জলপাইগুড়ির সহকারী শ্রম আধিকারিক আর্থার হোর বলেন, “রায়পুর বাগান খোলার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। মালিক পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। সমস্ত রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে পাঠানো আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tea garden malnutrition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE