Advertisement
০১ মে ২০২৪
সারদায় দায়ের এফআইআর

বড় ষড়যন্ত্রের খোঁজে শুরু সিবিআই তদন্ত

সারদা মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে গিয়ে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার কলকাতায় তিনটি এফআইআর দায়ের করে তারই খোঁজে নামল সিবিআই। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন এবং তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ-সহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে রাজ্যে সারদা কেলেঙ্কারিতে তিনটি মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। এর মধ্যে দু’টি এফআইআর প্রতারণা, টাকা তছরুপ ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের। তৃতীয়টি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের রহস্য উদঘাটনের জন্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

সারদা মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে গিয়ে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার কলকাতায় তিনটি এফআইআর দায়ের করে তারই খোঁজে নামল সিবিআই।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন এবং তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ-সহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে রাজ্যে সারদা কেলেঙ্কারিতে তিনটি মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। এর মধ্যে দু’টি এফআইআর প্রতারণা, টাকা তছরুপ ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের। তৃতীয়টি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের রহস্য উদঘাটনের জন্য।

সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী, নেতা এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট তার রায়েও এ কথা উল্লেখ করেছে। ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-ও তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ বার সিবিআই তদন্তেও কি তাঁদের নাম উঠে আসতে পারে? সিবিআইয়ের অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হা বলেন, “প্রভাবশালী কেউ জড়িত কি না, তা বলার সময় আসেনি। তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গেই তা জানা যাবে।”

গত ৯ মে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। ১২ মে তদন্তকারী দল গঠন করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, তার পর থেকে প্রায় ২৫ দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে সারদা সংক্রান্ত নথি জোগাড় করে তারা। এর পর এ দিন সল্টলেকে কেন্দ্রীয় সরকারি ভবন (সিজিও কমপ্লেক্স)-এর দোতলায় সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলের দফতরে (সিবিআইয়ের ওই দফতর থানার সমতুল) তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ওড়িশায় সিবিআইয়ের রাজ্য দফতরে ৪৩টি মামলা করেছে।

সিবিআই সূত্রের খবর, ওড়িশার বিভিন্ন থানায় সারদা-সহ মোট ৪৩টি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেগুলির বিরুদ্ধে এত দিন ওড়িশা পুলিশই তদন্ত করছিল। সেই তদন্তগুলি এ বার সিবিআই করবে। তাই প্রতিটি সংস্থার জন্য পৃথক এফআইআর করা হয়েছে।

এ রাজ্যে সারদা গোষ্ঠীর চারটি সংস্থা সারদা রিয়েলটি, সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস, সারদা হাউসিং এবং সারদা রিসর্ট অ্যান্ড হোটেলস-এর বিরুদ্ধে প্রায় ৯০০ মামলা রয়েছে। তা হলে সিবিআই এখানে তিনটি এফআইআর দায়ের করল কেন?

সিবিআই কর্তাদের ব্যাখ্যা, এ রাজ্যে সারদা ছাড়া অন্য কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়নি। সারদার বিরুদ্ধে যে সব মামলা রয়েছে, সেগুলি সবই মোটামুটি ভাবে প্রতারণার। তাঁরা বলছেন, বেশ কিছু অভিযোগকে জড়ো করে দু’টো এফআইআর করা হয়েছে। তা ধরেই তদন্ত এগোবে।

এই কেলেঙ্কারির তদন্তে নিয়ামক সংস্থাগুলির ভূমিকা ও টাকা পাচারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বলেছিল, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে সিবিআই জানিয়েছে।

গত বছর এপ্রিলে সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। তার পরবর্তী কালে রাজ্যে আরও নানা অর্থলগ্নি সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হওয়ার পর রাজ্য সরকার ডিজি-র নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে। কিন্তু সিটের তদন্ত নিয়ে বারবারই প্রশ্নের মুখে পড়েছে সরকার।

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরাতেও সারদা ব্যবসা ছড়িয়েছিল। এর মধ্যে অসম ও ত্রিপুরা আগেই সারদা তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল। এ রাজ্য ও ওড়িশাতেও সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। মামলার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে এ ব্যাপারে ৯ মে রায় ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত।

তার পরেই তড়িঘড়ি তিন দিনের মধ্যে তদন্তকারী দল গড়ে নথি জোগাড় করতে নামে সিবিআই। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ১৩ মে থেকেই মামলার কাগজপত্র জোগাড় করতে শুরু করেছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। নথি জোগাড়ে ২০ মে সিবিআইয়ের দল রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজি-র সঙ্গে দেখা করে। রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) অন্যতম প্রধান এডিজি (সিআইডি)-র সঙ্গেও দেখা করেছিলেন সিবিআই অফিসাররা।

সিবিআই সূত্রের খবর, সিটের হাত থেকে সারদা মামলার কাগজ ও নথিপত্র নিতে চেয়েই প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এ রাজ্যে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো রাজ্য সরকারকেই দিতে হবে। পরিকাঠামো চেয়ে ইতিমধ্যেই দিল্লির সিবিআই সদর দফতর থেকে রাজ্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সারদা মামলার কাগজ জোগাড় করার সময় বিধাননগর কমিশনারেটে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলেছেন সিবিআই অফিসাররা। পুলিশ সূত্রের খবর, মামলার কিছু কাগজপত্র নিতে বিধাননগর কমিশনারেটে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। সেই সময় রাজ্যের তদন্তকারীদের মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করেন তাঁরা। কোন পথে এত দিন তদন্ত চলেছে, তা-ও সিবিআই অফিসারেরা জানার চেষ্টা করেছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha case cbi investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE