Advertisement
E-Paper

বয়কট, ডিগ্রি-বিতর্কের মধ্যে পুলিশের ছায়া সমাবর্তনে

যাদবপুরে যত গোল পুলিশের জন্যই। ঘেরাও তুলতে উপাচার্যের ডাকা পুলিশের তাণ্ডবের জেরেই সমাবর্তন বয়কটে নেমেছেন ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের একটি বড় অংশ। আর সেই সমাবর্তন সফল করতে ফের পুলিশেরই দ্বারস্থ হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ! বয়কট, নতুন ডিগ্রি-বিতর্ক এবং পুলিশ তলবের মধ্যেই আজ, বুধবার সেখানে সমাবর্তন হতে চলেছে। অশান্তির আশঙ্কা থেকেই এ বার প্রথা ভেঙে ক্যাম্পাসের বদলে বাইরে প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া নিয়ে সমাবর্তন করতে চেয়েছিলেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২

যাদবপুরে যত গোল পুলিশের জন্যই। ঘেরাও তুলতে উপাচার্যের ডাকা পুলিশের তাণ্ডবের জেরেই সমাবর্তন বয়কটে নেমেছেন ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের একটি বড় অংশ। আর সেই সমাবর্তন সফল করতে ফের পুলিশেরই দ্বারস্থ হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ! বয়কট, নতুন ডিগ্রি-বিতর্ক এবং পুলিশ তলবের মধ্যেই আজ, বুধবার সেখানে সমাবর্তন হতে চলেছে।

অশান্তির আশঙ্কা থেকেই এ বার প্রথা ভেঙে ক্যাম্পাসের বদলে বাইরে প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া নিয়ে সমাবর্তন করতে চেয়েছিলেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। কিন্তু আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী জানিয়ে দেন, বিশ্ববিদ্যালয়েই সমাবর্তন হবে। এই অবস্থায় ওই অনুষ্ঠানে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না-ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে মঙ্গলবার একটি চিঠি দেওয়া হয় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশি ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয়েছে। এলাহি ব্যবস্থা করছে লালবাজারও। তাদের আশ্বাস, এক জন ডেপুটি কমিশনার, তিন জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার-সহ ৭০ জন পুলিশকর্মী হাজির থাকবেন।

সমাবর্তনের মতো বিধিবদ্ধ অনুষ্ঠানকে ঘিরে এত জটিলতা, এমন নজরদারি কার্যত নজিরবিহীন বলেই জানাচ্ছেন প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

সমাবর্তনে পুলিশের ছায়ার মধ্যেই শেষ বেলায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে সাম্মানিক ডিলিট এবং ডিএসসি প্রাপকদের নামের তালিকা নিয়ে। এবং সেই বিতর্কের মূলে আছে যাদবপুরের বৃহত্তম শিক্ষক সংগঠন জুটা-র নতুন একটি অভিযোগ। রীতিমতো হুমকি দিয়েই জুটা-কে সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেও যে-সব ছাত্রছাত্রী ওই অনুষ্ঠান বয়কট করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। জুটা এবং আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা এ দিন জানিয়ে দেন, উপাচার্যের হুমকি উপেক্ষা করেই নিজেদের কর্মসূচিতে অটল থাকবেন তাঁরা। এখানেই শেষ নয়। সমাবর্তনের ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে জুটা এমন একটি অভিযোগ এনেছে, যেটিকে ঘিরে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বর সরগরম।

জুটা-র নতুন অভিযোগটি কী?

সাংবাদিক বৈঠক করে জুটা এ দিন অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে ডিলিট ও ডিএসসি প্রাপকদের নাম বাছাই করা হয়নি। ওই আইন অনুযায়ী সাম্মানিক ডিলিট ও ডিএসসি প্রাপকদের নাম বেছে নেবেন উপাচার্য এবং বিভিন্ন শাখার ডিনদের নিয়ে গড়া একটি কমিটি। সেই কমিটির সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হবে এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি-র বৈঠকে। ইসি-তে পাশ হলে তবেই সেই সব নাম যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা কোর্টে। কোর্ট-সদস্যদের তিন-চতুর্থাংশের সম্মতি পেলে তবেই নামগুলি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে আচার্যের কাছে।

জুটা-র অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ বার কোর্টে আলোচনা না-করেই সাম্মানিক ডিলিট ও ডিএসসি প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। জুটা-র এক সদস্যের কথায়, “কোর্টে আলোচনাটা যে কতখানি জরুরি, তার প্রমাণ মিলেছিল ১৯৯৮ সালে। কোর্টে তিন-চতুর্থাংশের সম্মতি না-মেলায় সে-বার ইসি-তে প্রস্তাব পাশ হওয়া সত্ত্বেও এক নামজাদা রাজনীতিককে শেষ পর্যন্ত ডিলিট দেওয়া যায়নি।”

উপাচার্য এ দিন এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, “যা বলার বুধবার বলব।” রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “কোর্টের বৈঠক হয়েছে কি না, মনে পড়ছে না। নথি ঘেঁটে দেখতে হবে।” কটাক্ষ করতে ছাড়েনি জুটা। ওই সংগঠনের কেউ কেউ বলছেন, “কোর্টের বৈঠক অত্যন্ত জরুরি বিষয়। অথচ রেজিস্ট্রার সেটা বেমালুম ভুলে গেলেন!” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এ বার সমাবর্তনের আগে কোর্টের কোনও বৈঠকই হয়নি। তাই কোর্টের অনুমোদন ছাড়াই ডিলিট ও ডিএসসি প্রাপকদের নাম কী ভাবে ঠিক হল, সেই প্রশ্ন রয়েই গেল।

যাদবপুর বা বিশ্বভারতীতে যে-ধরনের ছাত্র-আন্দোলন চলছে, তা শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন আচার্য। নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষার্থে বয়কট তুলে সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার জন্য যাদবপুরের পড়ুয়াদের কাছে এ দিন আহ্বান জানান তিনি। পরপর দু’দিন ছাত্রছাত্রীদের একই অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু উপাচার্য আন্দোলনকারীদের হুমকি দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিলতর হয়েছে।

১৬ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের জেরে যাদবপুরের সমাবর্তন নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। সাম্মানিক ডিলিট কাদের দেওয়া হবে, দীক্ষান্ত ভাষণ কে দেবেন ইত্যাদি ঠিক করতেই চলে গিয়েছে দীর্ঘ সময়। প্রথমে অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সাম্মানিক ডিলিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের কারও সম্মতি পাওয়া যায়নি। তখন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়ার নাম চূড়ান্ত করা হয়। ডিএসসি দেওয়া হচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা অবিনাশ চন্দ্রকে। কিন্তু নাম বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হরেক প্রশ্ন আর বিতর্কের মধ্যেই উপাচার্যের প্রচ্ছন্ন হুমকিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থানে বসেছেন জুটা-র বহু সদস্য। সংখ্যাটা প্রায় ২০০ বলে জুটা-র দাবি। সদস্যদের ২০ জন অনশনও শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সমাবর্তনে যোগ দেওয়া এক দল শিক্ষক-শিক্ষিকা বয়কট প্রত্যাহার করার জন্য জুটা-কে আবেদন জানান। কিন্তু লাভ হয়নি। তবে বয়কটের সিদ্ধান্ত কারও উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে না বলে এ দিন প্রচারপত্রে জানিয়ে দিয়েছে জুটা। সেই সঙ্গেই তাদের অভিযোগ, শিবপুরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (পুরনো বেসু)-র শিক্ষক থাকাকালীন ২০০২ সালে অভিজিৎবাবু নিজেই সমাবর্তন বয়কট করেছিলেন। যদিও এই বিষয়ে অভিজিৎবাবুর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

সমাবর্তন বয়কটের ডাক দিয়ে এ দিন অনেক ছাত্রছাত্রীও ক্যাম্পাসে অবস্থান শুরু করেছেন। সুরে সুর মিলিয়ে স্লোগান দেন তাঁরা। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করেন। ছাত্রছাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার তাঁরা ‘হোক কলরব’ লেখা শংসাপত্র বিলি করে নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানাবেন।

বিশৃঙ্খলা দেখছেন আচার্য

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা রাত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখার ঘটনা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সমাবর্তন বয়কট আন্দোলন যে কার্যত শৃঙ্খলাভঙ্গই, তা জানিয়ে দিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। পদাধিকারবলে রাজ্যপাল বিশ্বভারতীর রেক্টর এবং যাদবপুরের আচার্য। এই ধরনের ছাত্র আন্দোলনকে তিনি যে ভাল চোখে দেখছেন না, মঙ্গলবার সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন ত্রিপাঠী। রাজ্যপাল বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না, কেন পড়ুয়ারা ক্রমেই এত বিশৃঙ্খল হয়ে উঠছে। শিক্ষকদের সম্মান দেখাতে তাদের অনীহা কেন, বুঝতে পারছি না তা-ও।” এই ধরনের আন্দোলনে তিনি যে বিরক্ত, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর মন্তব্য, “কেন যে পড়ুয়ারা এই ভাবে নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসম্মান করছে, তা-ও বুঝতে পারছি না। আমি এ-সব পছন্দ করি না।”

partha chattopapadhyay keshari nath tripathi convocation jadavpur university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy