Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভোট শেষে অপসারিতদের পদ ফেরত, আগাম নির্দেশ

বদলি হতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে। তবে সেটা যে শুধু ভোট পর্বের সময়টুকুর জন্যই এবং তার পরে তাঁদের ফের পুরনো পদে ফেরানো হবে, ভোটের মধ্যেই তার লিখিত সরকারি প্রতিশ্রুতি পেয়ে গেলেন ওই আইএএস এবং আইপিএস-রা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারেই দুর্গাপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছিলেন, কমিশন যে-সব অফিসারকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে, ভোট প্রক্রিয়ার শেষে তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে আগের পদেই ফিরিয়ে নেবেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৪
Share: Save:

বদলি হতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে। তবে সেটা যে শুধু ভোট পর্বের সময়টুকুর জন্যই এবং তার পরে তাঁদের ফের পুরনো পদে ফেরানো হবে, ভোটের মধ্যেই তার লিখিত সরকারি প্রতিশ্রুতি পেয়ে গেলেন ওই আইএএস এবং আইপিএস-রা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারেই দুর্গাপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছিলেন, কমিশন যে-সব অফিসারকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে, ভোট প্রক্রিয়ার শেষে তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে আগের পদেই ফিরিয়ে নেবেন তিনি। সেই ঘোষণা যে নিছক কথার কথা ছিল না, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা স্পষ্ট করে দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। বুধবার বেশি রাতে ওই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মুখ্যসচিব জানান, বদলি হওয়া অফিসারেরা ভোট পর্ব মিটলেই তাঁদের পুরনো পদে ফিরে যাবেন। তার জন্য আর কোনও নতুন নির্দেশ লাগবে না।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্যসচিবের এই নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসনের একটি বড় অংশ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কারও মতে, কমিশনের বদলির আদেশ গোড়ায় পছন্দ হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। প্রকাশ্যে সে-কথা জানিয়েও পরে তিনি তা মেনে নেন ঠিকই। কিন্তু বদলি হওয়া অফিসারদের পুরনো পদে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে সে-দিনই কমিশনের বিরুদ্ধে তিনি যে-চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন, নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাতেই সিলমোহর দিল সরকার। অন্য অংশের মতে, এটি আসলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। তিনি যে অফিসারদের পাশেই আছেন, সেই বার্তাও দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অফিসারদের প্রতি তাঁর ‘দায়বদ্ধতা’র বার্তা পৌঁছে দিতেই বদলির নির্দেশের পরিমার্জিত সংস্করণ জারি করেছে নবান্ন।

কিন্তু নির্বাচন পর্ব শেষ হতে এখনও তো প্রায় দেড় মাস বাকি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি এমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের মধ্যেই।

সরকারের এই নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে অবশ্য কোনও আগ্রহ দেখায়নি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতর। তাদের কথায়, পক্ষপাতের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু অফিসারকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ ঠিকমতো রূপায়ণ করল কি না, একমাত্র সেটাই দেখার দায়িত্ব কমিশনের। ভোট প্রক্রিয়া সাঙ্গ হওয়ার পরে ওই অফিসারদের কোথায় দেওয়া হবে, তা নিয়ে কমিশনের কোনও মাথাব্যথা নেই। তাই এটা নির্বাচনী বিধির আওতায় পড়ে না।

নবান্নের খবর, কমিশনের নির্দেশে পাঁচ জেলার পুলিশ সুপার, এক জন জেলাশাসক এবং দু’জন অতিরিক্ত জেলাশাসককে যে বদলি করা হচ্ছে, বুধবার বেলা ১১টার মধ্যেই ফ্যাক্সবার্তা মারফত তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল দিল্লিতে। কিন্তু বদলির নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরেই বেঁকে বসেন ওই অফিসারদের একাংশ। নবান্নের এক কর্তা বলেন, “তাঁরা প্রশাসনের শীর্ষ মহলকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, বদলি নিয়ে মুখ্যসচিবের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কোনও প্রতিফলন নেই। অর্থাৎ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে ওই অফিসারদের আগের পদে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে মমতা যে-অঙ্গীকার করেছেন, তার কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত নেই বদলির নির্দেশে।”

প্রশাসনের এক কর্তা জানান, তার কয়েক ঘণ্টা পরে, রাতেই নতুন নির্দেশ জারি করেন মুখ্যসচিব। তাতে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়, আগের বদলি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শুধু নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত। তার পরেই ওই আট অফিসার আগের পদে ফিরে যাবেন। আগের পদে ফিরতে বা দায়িত্ব বুঝে নিতে যে আর কোনও নির্দেশ লাগবে না, এই বিজ্ঞপ্তিই যথেষ্ট, তা-ও জানান মুখ্যসচিব।

তবে নতুন নির্দেশ জারির ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত প্রশ্নও উঠেছে। নবান্নের এক কর্তা বলেন, “পুলিশকর্মী ও অফিসার বদলির সুপারিশের জন্য ডিজি-কে মাথায় রেখে একটি পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট বোর্ড (পিইবি) আছে। ওই বোর্ডের সদস্যেরা আলোচনা করে বদলির একটি তালিকা স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে পাঠাবেন, এটাই নিয়ম। সেই সুপারিশ সরকার মানতে পারে, না-ও মানতে পারে।” কিন্তু মুখ্যসচিবের এই নতুন নির্দেশ জারির পরে পিইবি-র আদৌ কোনও যৌক্তিকতা থাকল কি না, প্রশ্ন তুলছেন প্রশাসনের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

transfer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE