Advertisement
E-Paper

ভাড়াটেদের তথ্য রাখছে সীমান্তের পঞ্চায়েত

ছ’বছর আগে উদ্যোগটা শুরু হয়েছিল। কিছু দিন চলার পরে তা বন্ধও হয়ে যায়। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে সেই উদ্যোগ আবার চালু করেছে নদিয়ার সীমান্তবর্তী করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। ছ’বছর পরে আরও একবার ভাড়াটেদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ফর্ম ছাপিয়ে সমীক্ষার কাজও শুরু করেছে।

গৌরব বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৪
ভাড়াটেদের তথ্য রাখার ফর্ম।—নিজস্ব চিত্র।

ভাড়াটেদের তথ্য রাখার ফর্ম।—নিজস্ব চিত্র।

ছ’বছর আগে উদ্যোগটা শুরু হয়েছিল। কিছু দিন চলার পরে তা বন্ধও হয়ে যায়।

খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে সেই উদ্যোগ আবার চালু করেছে নদিয়ার সীমান্তবর্তী করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। ছ’বছর পরে আরও একবার ভাড়াটেদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ফর্ম ছাপিয়ে সমীক্ষার কাজও শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সীমান্তের এই এলাকায় কর্মসূত্রে বহু মানুষ বাইরে থেকে এসে বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। এত দিন শুধুমাত্র মুখের কথাতেই কিংবা স্থানীয় কারও সুপারিশে ঘর ভাড়া দেওয়া হত। কিন্তু, খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে নড়েচড়ে বসেছে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, কংগ্রেসের তারক সরখেল জানান, খাগড়াগড়ের ঘটনার পরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে-সব তথ্য উঠে এসেছে, তার পরে আর ঝুঁকি নেওয়ার মানে নেই। ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে করিমরপুর থানার বারবাকপুর গ্রামের নামও। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েতের সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে, অঘটন হওয়ার পরে হাত কামড়াতে না হয়। ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে যে-সব তথ্য মিলবে, তা আমরা পঞ্চায়েতের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও দিয়ে দেব।”

করিমপুর ১ পঞ্চায়েত ২০০৮ সালেও এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, সে বছর অক্টোবরে কলকাতার পাম অ্যাভিনিউ ও মেফেয়ার রোডের সংযোগস্থলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ির কাছে ধরা পড়ে কুখ্যাত বাংলাদেশি দুষ্কৃতী সুব্রত বাইন। সুব্রত ২০০৫ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর করিমপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিল। করিমপুর বাজারে একটা দোকান ঘরও ভাড়া নিয়ে সে রেডিমেড পোশাকের দোকান চালাত। ‘মামা’ বলেই বেশি পরিচিত ছিল সীমান্তের ওই এলাকায়। সিআইডি-র এক কর্তা, যিনি সে সময়ে নদিয়া জেলা পুলিশে ছিলেন, তিনি জানান, সুব্রত ধরা পড়ার পরে উঠে আসে কওসরের নামও। তবে, এ খাগড়াগড়-কাণ্ডে অভিযুক্ত কওসর নয়, বৃহস্পতিবার ডোমকল থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়া কওসর শেখ। এই কওসর শেখই এ-পারে চলে আসা সুব্রতকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সুব্রত ধরা পড়ার পরে কওসরের খোঁজেও পুলিশ করিমপুরে এসেছিল। কওসরও সেই সময় করিমপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত।

পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তারকবাবু বলেন, “ওই ঘটনার পরেই ভাড়াটেদের নথি সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল। তার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, এ বার এই কাজটা শেষ করাই চ্যালেঞ্জ।” জেলা গোয়েন্দা সূত্রের খবর, করিমপুর ও তার লাগোয়া এমন কিছু এলাকা রয়েছে, যেখানে আত্মগোপন করে থাকা সহজ। সেই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে কিংবা কাউকে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে কোনও দুষ্কৃতী থাকলে গ্রামের মানুষের পক্ষে বুঝতে পারা অসম্ভব। আর এই সুযোগটাকেই বারবার কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। সে জন্যই নতুন করে ভাড়াটে সম্পর্কে তথ্য জোগাড় শুরু করেছে করিমপুর ১ পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছেন ছাপানো ফর্ম। বাড়ির মালিককেই ভাড়াটেদের নথিপত্র-সহ সেই ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হচ্ছে পঞ্চায়েত অফিসে।

সরকারি নির্দেশ ছাড়াই ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের দেখানো পথে হাঁটতে চাইছেন অনেকে। সীমান্তের তেহট্ট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সঞ্জয় দত্ত বলছেন, “ঘর ভাড়া নিয়ে যা কাণ্ডকারখানা হচ্ছে, তা উদ্বেগের। আগামী সোমবার সব গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ে বৈঠকে বসছি। সেখানেই তাদের বলে দেওয়া হবে, এলাকার ভাড়াটেদের বিষয়ে নথিপত্র সংগ্রহ করতে।” নদিয়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, “সীমান্ত এলাকায় কোথাও নাম ভাঁড়িয়ে, কোথাও বিয়ে করে অবৈধ ভাবে এ পারে এসে বাস করছে, এমন বাংলাদেশির সংখ্যা খুব কম নয়। জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতের তরফে এমন পদক্ষেপ করলে লাভ হবে সকলেরই। তখন কে শাকিল, কে রাজিয়া খুঁজতে কালঘাম ছুটবে না।”

করিমপুরের বাসিন্দারাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তেমনই এক প্রবীণের কথায়, “আমার বাড়িতেই বেশ কয়েক ঘর ভাড়াটে থাকেন। স্থানীয়দের সুপারিশে ঘর ভাড়া দিয়েছিলাম। ভাড়াটেদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতাম না। পঞ্চায়েতের ফর্ম হাতে পাওয়ার পরে তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে পঞ্চায়েতের দেওয়া ফর্ম পূরণ করেছি।”

অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মহাদেব বিশ্বাস বলেন, “খাগড়াগড়ে যা হল, তার পরে ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে গাফিলতি করা উচিত নয়। করিমপুরের মতো সীমান্তের অন্য পঞ্চায়েতগুলোরও উচিত ভাড়াটেদের নথিপত্র সংগ্রহ করা এবং তা পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো।” তাঁর সংযোজন, “এতে ভাড়াটেদের কিছু মনে করার কারণ নেই। নিরাপত্তার প্রশ্নে সকলেরই সহযোগিতা করা উচিত।”

Khagragarh blast karimpur tenant gaurab biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy