বাসের ভাড়া বৃদ্ধি আটকে আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান না বলেই। আদৌ ভাড়া বাড়ানো হবে কি না, সেটাও জানেন শুধু তিনি। তবে মমতার সরকারেরই মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে গড়া কমিটি বাসভাড়া বাড়ানোর বাস্তবতা মেনে নিয়েছে।
শুক্রবার বিধানসভা ভবনে ওই কমিটি বৈঠকে বসেছিল। সেখানেই ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দেন কমিটির সদস্যেরা। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কমিটির মতামত মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন পার্থবাবু। একমাত্র মমতা সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে সরকার, জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের এক কর্তা।
বেশ কয়েক দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রায় দু’বছর ধরে ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন বাস-মালিকেরা। কিন্তু সরকার যে ভাড়া বাড়াবে না, মুখ্যমন্ত্রী থেকে পরিবহণমন্ত্রী তা বারবার জানিয়ে দেন। নবান্নের এই কঠোর অবস্থানের প্রতিবাদে একাধিক বার বাস ধর্মঘট করেছে মালিক সংগঠনগুলি। ক্রমাগত লোকসানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে অর্ধেক বাস উঠেই গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনা করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে সরকার। পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত সেই কমিটিতে ছিলেন পরিবহণ শিল্পের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা সব দিক খতিয়ে দেখে ২৫ থেকে ৩৫% পর্যন্ত বাসভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেন। কমিটি তাদের রিপোর্ট তুলে দেয় মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে গড়া কমিটির কাছে। এ দিন সেই কমিটিই বৈঠকে বসে ভাড়া বাড়ানোর বাস্তবতা মেনে নেয়।
যদিও এই নিয়ে কমিটির প্রায় কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি। কমিটির প্রধান পার্থবাবু বলেন, “আমরা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। যা হওয়ার, আগামী সপ্তাহেই হবে।” কমিটির অন্যতম সদস্য এবং এসইউসি-র বিধায়ক তরুণ নস্কর বলেন, “আমি ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছি। বদলে গণপরিবহণের ক্ষেত্রে জ্বালানির উপর থেকে কর তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। কমিটি আমার বিকল্প প্রস্তাবটিও মুখ্যমন্ত্রীর সামনে পেশ করতে সম্মত হয়েছে।”
মন্ত্রী-বিধায়কদের কমিটি তাঁদের দাবি সঙ্গত মনে করায় বাস-মালিকেরা খুশি। বাস-মালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই সরকার ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।” তবে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী কী সিদ্ধান্ত নেন, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ভাড়া বাড়ানো যায়নি মূলত মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতেই। এ বার দু’-দু’টি কমিটির মতামতও তিনি উপেক্ষা করেন কি না, তা দেখার। তিনি না-চাইলে ভাড়া বাড়বে না।
২০১২-র নভেম্বরে রাজ্য শেষ বার ভাড়া বাড়িয়েছিল। তার পর থেকে জ্বালানির দাম বেড়েছে ২৫%। তাল মিলিয়ে বেড়েছে যন্ত্রাংশের দাম এবং আনুষঙ্গিক খরচও। এই সব কারণেই বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছিল, জ্বালানির দাম এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম যে-হারে বেড়েছে, তাতে বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি যুক্তিসঙ্গত। এখন মন্ত্রী-বিধায়কদের কমিটিও তা-ই মনে করে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই বাস্তবতা মানবেন কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy