Advertisement
০৭ মে ২০২৪

মুকুল-চালে মমতাকে মাত করতে চায় বিজেপি

মুকুল রায়ের বিষয়ে বিজেপির অবস্থান বদলানোর ইঙ্গিত মিলছে। একটা সময়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ঘোষণা করেছিলেন— সারদা কাণ্ডে সিবিআই জেরার মুখে পড়া মুকুলের সঙ্গে তাঁরা কোনও বোঝাপড়া করবেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

মুকুল রায়ের বিষয়ে বিজেপির অবস্থান বদলানোর ইঙ্গিত মিলছে। একটা সময়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ঘোষণা করেছিলেন— সারদা কাণ্ডে সিবিআই জেরার মুখে পড়া মুকুলের সঙ্গে তাঁরা কোনও বোঝাপড়া করবেন না। কিন্তু বিধাননগর পুরনির্বাচনে তৃণমূলের মরিয়া সন্ত্রাসে নতুন করে আশার আলো দেখছে বিজেপি। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে আরও কোণঠাসা করতে এ বার প্রয়োজনে মুকুলের সম্ভাব্য দলের সঙ্গে হাত মেলানোর কথাও ভাবছে বিজেপি।

প্রথমে মুকুল প্রশ্নে বিজেপির একাংশের কড়া আপত্তি থাকলেও, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বাংলার দায়িত্বে আসার পর থেকে সেই অবস্থানে বদল দেখা যাচ্ছে। দলীয় সূত্রের খবর, এর ফলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে আঞ্চলিক দল হিসাবে মুকুলের দলের গাঁটছড়া বাঁধার সম্ভাবনা অনেকাংশেই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই দু’দফায় কৈলাশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে মুকুলের। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকতে নিয়মিত দিল্লি আসেন মুকুল। সেই সুযোগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে আসছেন মুকুলবাবু। সেই সূত্রে

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও তিনি একাধিক বৈঠক করেছেন। এ নিয়ে বিজেপি সূত্রের যুক্তি— মুকুল রায় এখনও তৃণমূলের সাংসদ। তা ছাড়া প্রাক্তন মন্ত্রীও।

এক জন সাংসদ হিসাবে তিনি শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেই পারেন। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘মুকুল রায়কে সারদা কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও এখনও তাঁর নাম চার্জশিটেও দেয়নি সিবিআই বা ইডি। সুতরাং তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে অসুবিধা কী!’’

অস্তিত্ব বজায় রাখতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ বার তেড়েফুঁড়ে নামতে চলেছেন মুকুল রায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠরাও। এমনকী প্রয়োজনে বাম ও কংগ্রেসকে নিয়ে রাজ্যে তৃণমূল-বিরোধী একটি মহাজোট গড়ার পরিকল্পনাও করছেন তাঁরা, যার সলতে পাকানোর কাজ শুরু হচ্ছে আগামী মহালয়ার দিনে। ওই দিন কলকাতার কলামন্দিরে একটি পাক্ষিক পত্রিকার প্রকাশে উপস্থিত থাকবেন মুকুল রায়-সহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট জনেরা। ব্যক্তিগত ভাবে ওই অনুষ্ঠানে মুকুল এক জন অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকলেও, আতিথ্যের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরাই। মুকুল শিবিরের বক্তব্য, বৃহত্তর রাজনীতির বার্তা দিতেই মহালয়ার দিনটি এবং ওই অরাজনৈতিক মঞ্চটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

মুখে নিজেকে তৃণমূলের সদস্য বলে দাবি করে গেলেও গত কয়েক মাস ধরেই আলাদা ঘর গুছনোর কাজ চালিয়ে এসেছেন মুকুল। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে দল গঠনের জন্য আবেদন করেছেন তাঁর অনুগামীরা। সেই আবেদন পত্রে মুকুলের নাম না-থাকলেও, দাবি করা হয়েছে, নতুন দল আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সব ক’টি আসনে লড়তে চায়। মুকুল শিবিরের লক্ষ্য— কমিশনের কাছ থেকে আঞ্চলিক দলের স্বীকৃতি আদায় করা। মুকুল রায়ের অনুগামী কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) দীপ্তাংশু চৌধুরীর কথায়, ‘‘জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক দলের নামে স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছে কমিশনের কাছে। আশা করছি মাস খানেকের মধ্যেই দলটি আত্মপ্রকাশ করবে।’’

যদিও মুকুল শিবিরের একাংশের মতে, প্রথমে দল গড়ার কথা ভাবেননি তাঁদের নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত কী করেন, তা দেখতে নিজের দরজা খুলে রেখেছিলেন তিনি। এ যাবৎ দলবিরোধী কোনও পদক্ষেপও করেননি তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে উভয় পক্ষের দূরত্ব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দলে তাঁর স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন কার্যত অসম্ভব হয়ে গিয়েছে। মুকুল এটা বিলক্ষণ বুঝেছেন। এক তৃণমূল নেতার বিশ্লেষণ, ‘‘প্রকৃতির মতো রাজনীতিতেও শূন্যস্থান থাকে না। মুকুলের জায়গা ভরে ফেলেছেন মমতার ভাইপো অভিষেক।’’

গত কয়েক মাস গোপনে তৎপরতা চালিয়ে গিয়েছেন মুকুল রায়। কলকাতায় যেমন নিয়মিত ভাবে মুসলিম সংগঠন, বিশিষ্ট জনেদের পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, তেমনই দিল্লিতে এসে সম্পর্ক তাজা রেখে গিয়েছেন অন্য দলগুলির সঙ্গেও। বিজেপি নেতাদের পাশাপাশি তিনি রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও ছিলেন। সম্পর্ক রেখে চলেছেন সিপিএমের সর্বোচ্চ নেতা সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও। মুকুল শিবিরের দাবি— ইয়েচুরি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন যে মুকুল তৃণমূল থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়লে, সেই দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাওয়ার কথা ভাববে সিপিএম। কারণ উভয়েরই লক্ষ্য হল তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

তবে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি জোট গড়লে সিপিএমের পক্ষে প্রকাশ্যে তাঁর হাত ধরা যে কঠিন, তা বিলক্ষণ জানেন মুকুল। আবার বিজেপি পাশে থাকলে নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের সাহায্য যে তিনি পাবেন, তা জানেন মুকুল। ফলে বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোন স্তরে পৌঁছতে চলেছে, সেটা এখন এখন বাজিয়ে নিতে চাইছেন তিনি। বিজেপির একটি অংশ মুকুলের দলের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়তে চাইছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের সমর্থন আদায়ে সমস্যা হবে মুকুলের। উল্টে ফায়দা পেয়ে যাবেন মমতা।

সেই কারণে মুকুলের সঙ্গে সরাসরি জোট না করে আসন সমঝোতার পথে হাঁটার কথা ভাবছে বিজেপি। অন্য দিকে বিজেপি এক বার প্রকাশ্যে মুকুলের পাশে দাঁড়ালে সিপিএম ও কংগ্রেসের পক্ষে তাঁর পাশে দাঁড়ানো কঠিন। এই পরিস্থিতিতে মুকুল শিবিরের বিকল্প পরিকল্পনা হল— সরাসরি বিজেপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় না গিয়ে বরং সব ক’টি দল নিয়ে একটি বৃহত্তর জোট গঠন করা। অনেকটা শিলিগুড়ি মডেলের ধাঁচে। এই জোট তৃণমূলের বিরোধিতা করে নির্বাচনে লড়বে।

ইতিমধ্যেই এই বৃহত্তর জোট গঠনের ভিত নির্মাণে সক্রিয় হয়েছেন মুকুলবাবু। বিরোধীরাও মনে করেন, রাজ্যস্তরে তৃণমূলের শক্তি আর দুর্বলতা ঠিক কোথায়— তা মুকুলের নখদর্পণে। আর সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সব ক’টি আসনের একটি মূল্যায়ন করে ফেলেছেন মুকুল। কোথায় কার জেতার সম্ভাবনা, কোথায় মহাজোট হলে শাসক শিবির বেকায়দায় পড়বে, সে বিষয়ে একটি সবিস্তার রিপোর্ট বানিয়েছেন তিনি। তৃণমূল যে সব জায়গায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল, সেই সব আসনে প্রয়োজনে একটি মাত্র বিরোধী প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মুকুল শিবিরের। এই প্রস্তাবে আপত্তি নেই বিজেপি শিবিরের। তাদের বক্তব্য, প্রয়োজনে এক জোট হয়ে বিরোধীদের লড়াই করতে হবে। কারণ আমাদের সকলেরই লক্ষ্য মমতাকে ক্ষমতা থেকে হটানো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abpnewsletters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE