Advertisement
১১ মে ২০২৪

মুখ খুলবেন কি, মান বাঁচাতে ব্যস্ত উপাচার্যেরা

সপ্তাহ দুয়েক আগে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে উপাচার্যদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই তাঁদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন উপাচার্যদের। সেই উপাচার্যদেরই এক জন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। কিন্তু শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্যও মুখ খুলতে রাজি নন উপাচার্যেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েক আগে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে উপাচার্যদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই তাঁদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন উপাচার্যদের। সেই উপাচার্যদেরই এক জন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)।

কিন্তু শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্যও মুখ খুলতে রাজি নন উপাচার্যেরা। না একক ভাবে, না সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে। বরং নাম উল্লেখ না-করার শর্তে তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, যা সব হচ্ছে, তার পরে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারও মতে, কোনও ক্রমে উপাচার্যের মেয়াদটা উতরে গেলে বাঁচা যায়!

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে মঙ্গলবার অভিযোগ জানিয়েছে টিএমসিপি। তার পরে উপাচার্যদের অনেকে মনে করছেন, এমন একটি পদের সম্মান রক্ষা করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

হঠাৎ উপাচার্যদের এই ‘চাচা আপন মান বাঁচা’র পথ ধরার মরিয়া প্রয়াস চালাতে হচ্ছে কেন?

উপাচার্যকে নিয়োগ করেন আচার্য-রাজ্যপাল। উপাচার্যেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। ২০১১ সালে সরকার গড়ার পরে তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছিল, শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতির অনুপ্রবেশের কোনও জায়গা নেই। শিক্ষা চলবে শিক্ষাবিদদের দ্বারা। সেখানে দলীয় রং দেখা হবে না। কিন্তু এই ঘোষণা যে নেহাতই কথার কথা, বিভিন্ন সময়ে শাসক দল নিজেরাই তার প্রমাণ দিয়েছে। মন্ত্রী তো তাঁদের মুখে লাগাম তুলে দিয়েছেনই। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনও সরাসরি চক্রান্ত করার অভিযোগ তুলছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। তটস্থ উপাচার্যকুল এই অবস্থায় নিজেদের পদের সম্মান রক্ষা করতেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

২০১১-য় জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানকে ‘সিপিএমের দালাল’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গড়া হয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৎকালীন উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে। তবে তদন্তে কিছুই প্রমাণিত হয়নি। ২০১২-র জুনে, কার্যকাল শেষ হওয়ার সময় সব্যসাচীবাবু আচার্য-রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের তৎকালীন এক মন্ত্রীর সুপারিশ মেনে ছাত্র ভর্তি করা হয়নি বলেই সরকারের রোষে পড়তে হয়েছে তাঁকে।

হাংলু এই তালিকায় নবতম সংযোজন। এ বিষয়ে কী বলবেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সমতুল পদাধিকারীরা?

তাঁরা কিছুই বলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিদ্যাসাগর, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমার বিরুদ্ধে তো এমন অভিযোগ ওঠেনি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।” কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি বিএড কলেজে টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তির যে-অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্তের দায়িত্ব বর্তেছে অভিজিৎবাবুর উপরেই। তবে নাম উল্লেখ না-করার শর্তে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েক জন উপাচার্য।

তৃণমূল আমলেই সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চার বছরের জন্য নিযুক্ত এক উপাচার্য বলেন, “পরিস্থিতি যে-দিকে গড়াচ্ছে, তাতে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় দেখছি না। সম্মান নিয়ে কাজ করাই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।” আবার দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অন্য এক উপাচার্যের বক্তব্যে মান নিয়ে মানে মানে মেয়াদ শেষ করে চলে যাওয়ার মরিয়া ভাব প্রকট। তাঁর কথায়, “কোনও ভাবে উপাচার্যের কার্যকালটা শেষ হলে বাঁচি!”

এরই মধ্যে কিছুটা মুখ খুলেছেন, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এর আগে আমার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করে মেডিক্যালের আসন কমানোর অভিযোগ জানানো হয়েছিল। আসলে যাঁকে আক্রমণ করা হবে, বুঝতে হবে, তিনি ভাল কাজ করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE